obsessive compulsive disorder

শুচিবাই বাতিকের জন্য ব্যঙ্গ করেন লোকজন? কেন হয় এমন সমস্যা? কতটা মারাত্মক মনের এই ব্যাধি?

ঘরে ঘরে এমন বাতিক অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। তবে যখন সেটি কেবল বাতিকেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এর থেকেও চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন মনের সেই অবস্থাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজ়অর্ডার’ বা ওসিডি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:১০
Stressful life events can trigger or worsen OCD symptoms

শুচিবাইয়ের রোগ থেকেই মনের বড় অসুখ হতে পারে, কী ভাবে? ছবি: ফ্রিপিক।

সারা ক্ষণ মন অস্থির। একই কাজ বার বার করে যাওয়া। ছোঁয়াছুঁয়ির বাতিক বা শুচিবাইয়ে অস্থির। কেউ পরিচ্ছন্ন জায়গাও বার বার পরিষ্কার করতে থাকেন। কেউ এক ঘণ্টা ধরে কেবল হাতই ধুতে থাকেন। আবার কেউ গোছানো ঘরও বার বার গোছাতে থাকেন। ঘরে ঘরে এমন বাতিক অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। তবে যখন সেটি কেবল বাতিকেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এর থেকেও চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন মনের সেই অবস্থাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজ়অর্ডার’ বা ওসিডি।

Advertisement

বহু মানুষের শুচিবাই এমন স্তরে পৌঁছে যায়, যেখান থেকে তাঁরা প্রবল উদ্বেগ ও অবসাদেও ভুগতে শুরু করেন। মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিলা সরকার বলছেন, “ওসিডি খুবই পরিচিত সমস্যা। মহিলাদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। ওসিডি-আক্রান্তের অস্থিরতা নানা রকমের হতে পারে। কখনও তাঁর মনে হয়, হাতটা ভাল করে ধোওয়া হল না। কেউ মনে করেন, ঘরটা ঠিকমতো পরিষ্কার হয়নি। কেউ বার বার ঠাকুর প্রণাম করতেই থাকেন। দুশ্চিন্তা বা মনে নেতিবাচক ভাবনা এলেও বার বার ঠাকুরের কাছে ক্ষমা চাইতে থাকেন। এমন সমস্যা নিয়ে অনেক রোগীই আসেন।” ওসিডি-র বেশির ভাগ রোগীই বলেন, তাঁরা একটা ঘোরের মধ্যে থাকেন। মনে কিছু নির্দিষ্ট ভাবনা গেঁথে থাকে। তা-ই নিয়েই চিন্তাভাবনা জট পাকাতে থাকে। চাইলেও এর বাইরে বেরোতে পারেন না।

শর্মিলার কথায়, ওসিডি-র রোগীদের বাতিক যদি সাধারণ কিছু বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকে, তা হলে তা ওষুধ ও কাউন্সেলিং করে সারানো যায়। কিন্তু অনেক সময়েই ওসিডি মারাত্মক মনের ব্যাধিতে পরিণত হয়। উদাহরণ দিয়ে চিকিৎসক বলছেন, “একজন ওসিডি আক্রান্ত মহিলা বার বার বলতেন, তাঁর মনে এমন ছবি ভেসে ওঠে যে তিনি দেখেন, নিজের ছেলেকেই হত্যা করছেন। এই ভাবনা থেকে তিনি বেরোতে পারতেন না। অথচ তিনি জানতেন, এমন কাজ তিনি কখনওই করবেন না। তা-ও এই চিন্তা তাঁর মনে বদ্ধমূল হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত নিজের দু’টি হাত বেঁধে রাখতে শুরু করেন। ছেলেকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন। ওসিডি মানুষকে এতটাই যন্ত্রণা দেয় যে, তার ফলে মানুষের মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতারও জন্ম হয়।”

ওসিডি-র আরেকটি লক্ষণ হল, দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে সন্দেহ দানা বাঁধা, এক কাজ বার বার করা বা তা যথাযথ হয়েছে কি না, তা ক্রমাগত পরীক্ষা করা। ওসিডি-তে আক্রান্ত রোগীর ৯০ শতাংশই বুঝতে পারেন না, তিনি ঠিক কী কাজ করছেন। তবুও করেই যান।

কেন হয়? চিকিৎসা কী?

ওসিডি জিনগত কারণে হতে পারে। শর্মিলার কথায়, পরিবারে কারও থাকলে, তা থেকে আসতে পারে। আবার পরিবেশগত কারণও রয়েছে। ছোটবেলায় যৌন নির্যাতন বা পরিবারের মধ্যেই মানসিক ও শারীরিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন এমন মানুষজন পরবর্তী সময়ে ‘অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজ়অর্ডার’-এর শিকার হতে পারেন। আবার প্রচণ্ড মানসিক চাপ ও অবসাদে ভুগতে ভুগতেও এমন মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।

‘এক্সপোজ়ার অ্যান্ড রেসপন্স প্রিভেনশন থেরাপি’ সে ক্ষেত্রে ভাল কাজ করে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ওষুধ তো দিতেই হয়, পাশাপাশি এই থেরাপিও চলে রোগীর। আবার কিছু ক্ষেত্রে ‘কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি’ ভাল কাজ করে। ওসিডি যদি চরম আকার নেয় যার থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা, অন্যের ক্ষতি করার ইচ্ছা জন্মায়, তখন তা ‘নিউরোলজিকাল ডিজ়অর্ডার’-এর পর্যায়ে চলে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে নিউরোমডিউলেশন থেরাপি বা ব্রেন সার্জারিও করা হয়ে থাকে। বাড়ির কারও ওসিডি-র সমস্যা হচ্ছে বুঝতে পারলে দেরি না করেই চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ নেওয়া ভাল। গোড়াতেই থেরাপি শুরু হলে পরবর্তী কালে তা বড় আকার নেবে না।

Advertisement
আরও পড়ুন