Rahul Gandhi

জেলের সাজা স্থগিত হল, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর এ বার কি সাংসদ পদ ফেরত পাবেন রাহুল?

জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৩) ধারা অনুযায়ী সাজার মেয়াদ দু’বছরের চেয়ে এক দিন কম হলেও দোষী জনপ্রতিনিধির পদ খারিজ হবে না। বলবৎ হবে না ছ’বছর পর্যন্ত ভোটে লড়ার উপরে নিষেধাজ্ঞাও।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৩ ১৫:৫৯
As per order of Supreme Court Rahul Gandhi eligible to return to Parliament

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। — ফাইল চিত্র।

শুধু সাজার উপর স্থগিতাদেশ নয়। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট মোদী পদবি অবমাননা মামলায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করে দু’বছরের জেলের মেয়াদ নিয়ে সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায় সম্পর্কেই প্রশ্ন তুলেছে। বিচারপতি আরএস গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের এই নির্দেশের ফলে কেরলের ওয়েনাড়ের বরখাস্ত সাংসদের পদ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হয়েছে বলে আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ সুরাত আদালতের রায়ের সমালোচনা করে বলেছে, ‘‘কেন রাহুল গান্ধীকে অপরাধমূলক মানহানির মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি, দু’বছরের জেলের সাজা দেওয়া হল, তার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দেখাতে পারেনি।’’ ওই মেয়াদের সাজা দেওয়ার ফলে শুধু সাংসদ পদ হারানো নয়, ছ’বছরের জন্য তাঁর ভোটে লড়াও নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। সুরাত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সেই রায় বহাল রেখেছিল সুরাত দায়রা আদালত এবং গুজরাত হাই কোর্টও। কিন্তু শুক্রবারের সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের ফলে ২০২৪ সালে রাহুলের ভোটে লড়ার পথেও বাধা দূর হল।

আইনজীবীদের একাংশ বলছেন, অপরাধমূলক মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা নয়, রাহুলের ক্ষেত্রে শীর্ষ আদালতের মূল প্রশ্ন সাজার মেয়াদ নিয়ে। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৩) ধারা অনুযায়ী সাজার মেয়াদ দু’বছরের চেয়ে এক দিন কম হলেও দোষী জনপ্রতিনিধির পদ খারিজ হবে না। বলবৎ হবে না, ছ’বছর পর্যন্ত ভোটে লড়ার উপরে নিষেধাজ্ঞাও। ফলে রাহুলের উপর ‘সংসদীয় নিষেধাজ্ঞা’ প্রত্যাহারের সম্ভাবনা প্রবল বলেই মনে করছেন তাঁরা।

শুক্রবারের সুপ্রিম স্থগিতাদেশের পরে কংগ্রেসের তরফে রাহুলের সাংসদ পদ ফেরানোর দাবি তোলা হয়েছে স্পিকারের কাছে। কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল বলেন, ‘‘আমরা আশা করব স্পিকার যেমন দ্রুততার সঙ্গে রাহুলজির পদ খারিজ করেছিলেন, তেমনই সক্রিয়তা দেখা যাবে সাংসদ পদ ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও।” লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘রাহুলজিকে সাংসদ পদ ফিরিয়ে দিতেই হবে।’’

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কর্নাটকে প্রচারে গিয়ে মোদী পদবি নিয়ে মন্তব্যের জন্য গত ২৩ মার্চ রাহুলকে দু’বছরের করাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছিল সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। তারই ভিত্তিতে ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-এর ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৪ মার্চ রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(১) ধারা অনুযায়ী, কোনও অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাংসদ-বিধায়কের দু’বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হলে তৎক্ষণাৎ সাংসদ বা বিধায়ক পদ চলে যায়। আইন বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সেই হিসেবে রাহুলের সাংসদ পদ অবিলম্বে খারিজ হওয়ার ছিল।

জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে আগে বলা ছিল, সাংসদ-বিধায়ক দোষী সাব্যস্ত হলে তাতে স্থগিতাদেশ পাওয়ার জন্য তিন মাস সময় পাবেন। ২০১৩-য় সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার বনাম লিলি টমাস মামলায় আইনের সেই ধারাটি নাকচ করে রায় দিয়েছিল, দু’বছরের কারাদণ্ডের সাজার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেই সাংসদ পদ চলে যাবে। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত লালু প্রসাদের সাংসদ পদ বাঁচাতে মনমোহন সিংহের সরকার অধ্যাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্টের রায় উল্টে দিয়ে পুরনো ব্যবস্থা বহাল রাখার চেষ্টা করেছিল।

কিন্তু রাহুল সেই অধ্যাদেশ ছিঁড়ে বাতিল কাগজের ঝুলিতে ফেলে দেওয়ার কথা বলার পর পিছু হটেছিল তৎকালীন ইউপিএ সরকার। এ বার সুপ্রিম কোর্টের ২০১৩ সালের সেই নির্দেশের ভিত্তিতেই সাংসদ পদ খারিজ হয়েছিল ওয়েনাড়ের কংগ্রেস সাংসদের। এ বার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশই তাঁর সাংসদ পদ ফেরানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছে। প্রসঙ্গত, গত মার্চ মাসে লক্ষদ্বীপের এনসিপি সাংসদ মহম্মদ ফয়জল আদালতের নির্দেশে সাংসদ পদ ফিরে পেয়েছিলেন। তাঁর ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতের সাজার রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল কেরল হাই কোর্ট। সেই রায়ের বেশ কয়েক দিন পরে ফয়জলের সাংসদ পদ ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশিকা জারি করেছিল লোকসভা সচিবালয়। রাহুলের ক্ষেত্রেও কি তেমন হবে?

আরও পড়ুন
Advertisement