কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।
মোদী পদবি অবমাননা মামলায় সুপ্রিম কোর্টে বড় স্বস্তি পেলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। বিচারপতি আরএস গাভাই এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রের বেঞ্চ শুক্রবার রাহুলের দু’বছরের জেলের সাজার উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে। ফলে এ সংক্রান্ত সুরাত আদালতের রায় আপাতত কার্যকর হচ্ছে না। সেই সঙ্গে ওয়েনাড়ের বরখাস্ত সাংসদ রাহুলের পদ ফিরে পাওয়ার সম্ভবনাও তৈরি হল।
দুই বিচারপতির বেঞ্চ সুরাত আদালতের রায়ের সমালোচনা করে বলেছে, ‘‘কেন রাহুল গান্ধীকে অপরাধমূলক মানহানির মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি, দু’বছরের জেলের সাজা দেওয়া হল, তার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দেখাতে পারেনি।’’
‘অপরাধমূলক মানহানি’ মামলায় দোষী সাব্যস্ত রাহুলের দু’বছর জেলের যে সাজা গত ২৩ মার্চ সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দিয়েছিল, তার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে রাহুলের আবেদন গত ৭ জুলাই খারিজ করে দিয়েছিল গুজরাত হাই কোর্টের বিচারপতি হেমন্ত প্রচ্ছকের বেঞ্চ। গুজরাত হাই কোর্টের আগে সুরাতের দায়রা আদালতও সাজার রায় বহাল রেখেছিল। সেই সাজার রায়ের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে ১৭ জুলাই রাহুলের আইনজীবী শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন। রাহুলের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির তরফে আবেদনে বলা হয়, ‘‘যদি গুজরাত হাই কোর্টের ৭ জুলাইয়ের রায় স্থগিত না করা হয়, তবে তা বাক্স্বাধীনতা, মতপ্রকাশ, স্বাধীন চিন্তাভাবনার কণ্ঠরোধের পরিবেশ তৈরি করবে।’’
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারের সময় কর্নাটকের কোলারে ‘মোদী’ পদবি তুলে আপত্তিকর মন্তব্যের দায়ে গত ২৩ মার্চ গুজরাতের সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এইচএইচ বর্মা দু’বছর জেলের সাজা দিয়েছিলেন রাহুলকে। গুজরাতের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিজেপি বিধায়ক পূর্ণেশ মোদীর দায়ের করা ওই ‘অপরাধমূলক মানহানি’ মামলায় দোষী রাহুলের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আবেদনের জন্য তাঁকে ৩০ দিন সময় দিয়েছিলেন বিচারক। সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়ের ভিত্তিতে ২৪ মার্চ লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮(৩) নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করেছিলেন।
এর পর রাহুল তাঁকে দোষী ঘোষণা এবং সাজার রায়ের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে গত ৩ এপ্রিল সুরাতেরই দায়রা আদালতে (সেশনস কোর্ট) আবেদন করেছিলেন। কিন্তু গত ২০ এপ্রিল অতিরিক্ত দায়রা বিচারক আরপি মোগেরা সেই আবেদন খারিজ করে সাজা কার্যকরের রায় বহাল রাখেন। ফলে সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা হাতছাড়া হয় তাঁর। প্রসঙ্গত, বিচারক মোগেরা এক সময় একাধিক ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত বিজেপি নেতা (বর্তমানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) অমিত শাহের আইনজীবী
সাজার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর আবেদনের প্রেক্ষিতে অভিযোগকারী বিজেপি নেতা পূর্ণেশ মোদী এবং গুজরাত সরকারকে গত ২১ জুলাই নোটিস পাঠিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। দু’তরফেই সাজা মকুবের বিরোধিতা করা হয়েছিল। অন্য দিকে, রাহুলের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি শীর্ষ আদালতে অভিযোগ করেছিলেন এই মামলায় বিচার প্রক্রিয়ার অবমাননা হয়েছে।
গত ৭ জুলাই গুজরাত হাই কোর্টের বিচারপতি হেমন্ত প্রচ্ছকের বেঞ্চও সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায় বহাল রাখায় সাজা এড়াতে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন কেরলের ওয়েনাড়ের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ। আইনজীবীদের একাংশ মনে করেছেন, শীর্ষ আদালত সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়ায় সাংসদ পদ ফিরে পেতে পারেন রাহুল। সুরাত দায়রা আদালত এবং গুজরাত হাই কোর্টের মতো রাহুলের আবেদন খারিজ হয়ে গেলে তাঁর জেলে যাওয়ার আশঙ্কা আরও বাড়ত। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ জেলযাত্রা থেকে রেহাইয়ের পাশাপাশি রাহুলের সাংসদ পদ ফেরানোর পথও প্রশস্ত করল বলে মনে করছে আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।