(বাঁ দিকে) অনুরা দিশানায়েক। মাহিন্দা রাজাপক্ষে (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
দু’মাস আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চমকপ্রদ জয় পেয়েছিলেন তিনি। এ বার শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট নির্বাচনেও জয়ের পথে প্রেসিডেন্ট অনুরা দিশানায়েকের দল ‘জনতা বিমুক্তি পেরুমুনা’ (জেভিপি)-র নেতৃত্বাধীন বামপন্থী জোট ‘ন্যাশনাল পিপল্স পাওয়ার’ (এনপিপি)।
ভোটগণনার প্রবণতা বলছে, ২০২০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে মাত্র তিনটি আসনে জেতা এনপিপি এ বার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে চলেছে। অন্য দিকে, উত্তরের জাফনা থেকে পূর্বের বাত্তিকালোয়া পর্যন্ত উপকূলবর্তী এলাকায় ভাল ফল করতে চলেছে তামিল জনগোষ্ঠীর দলগুলি। বৃহস্পতিবার ভোটের পর থেকেই শুরু হয় গণনা। শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যেই সম্পূর্ণ ফলাফল জানা যেতে পারে।
শ্রীলঙ্কা পার্লামেন্টের আসনসংখ্যা ২২৫। এর মধ্যে ১৯৬ আসনে সরাসরি ভোট হয়। বাকি ২৯টি আসন যুযুধান রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতের ভিত্তিতে বণ্টন করা হয়। অর্থাৎ, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১১৩টি আসন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৪২.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন অনুরা। ৩২.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন ‘সমাগি জন বলবেগয়া’ (এসজেবি)-র নেতা সাজিথ প্রেমদাসা। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট তথা ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি)-র প্রধান রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে ১৭.২ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন।
এ বারের পার্লামেন্ট ভোটে রনিলের ইউএনপি কয়েকটি ছোট দলের সঙ্গে নিউ ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) গড়ে লড়তে নেমেছিল। পাশাপাশি দুই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট— গোতাবায়া রাজাপক্ষে এবং তাঁর দাদা মাহিন্দার নেতৃত্বাধীন ‘শ্রীলঙ্কা পড়ুজানা পেরুমুনা’ (এসএলপিপি) ভোটে অংশ নিয়েছিল। ফল বলছে, অনুরার এনপিপি ৬২ শতাংশের বেশি শ্রীলঙ্কাবাসীর সমর্থন নিয়ে পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠ হতে চলেছে। সাজিথের এসজেবি ১৮ শতাংশ এবং রনিলের এনডিএফ যথাক্রমে ১৮ এবং ৫ শতাংশ ভোট নিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ভোটপ্রাপ্তির হিসাবে রাজাপক্ষে পরিবারের দল এসএলপিপি চতুর্থ। শ্রীলঙ্কায় এ বারের ভোটে ৮৮৮০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ভোটারের সংখ্যা পৌনে দু’কোটির বেশি। বৃহস্পতিবার প্রায় ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের জুলাই মাসে অর্থনৈতিক সঙ্কটের আবহে প্রবল জনবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়েন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা এবং তাঁর ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটাভুটিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছিলেন রনিল। কিন্তু যে অর্থনৈতিক সঙ্কট রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভকে উস্কে দিয়েছিল, তা খুব বেশি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি রনিল। তাই রনিলের নেতৃত্বে অনাস্থা জ্ঞাপন করে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ৫৬ বছরের অনুরাকে লঙ্কাবাসী প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট হয়েই পার্লামেন্ট ভেঙে নতুন করে নির্বাচনে সক্রিয় হন অনুরা। ফল বলছে সেখানেও সাফল্য মিলল তাঁর।