বিক্ষোভে আপের মহিলা সমর্থকেরা। মঙ্গলবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে গ্রেফতারির প্রতিবাদে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবন ঘেরাও করার কর্মসূচি নিয়েছে আম আদমি পার্টি (আপ)। সকাল ১০টার সময় দলের সমর্থকদের প্যাটেল চক এলাকায় জড়ো হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার পর মিছিল করে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে এগোনোর পরিকল্পনা রয়েছে আপের। তবে অশান্তির আশঙ্কায় সতর্ক রয়েছে দিল্লি পুলিশও।
মঙ্গলবার সকালেই দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার দেবেশ কুমার মাহলা জানান যে, আপকে (প্রতিবাদ কর্মসূচির) কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি। অশান্তি এবং কোনও ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোকাবিলায় দিল্লি পুলিশ কী পদক্ষেপ করছে, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে এবং প্যাটেল চকের সামনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক বাহিনী রাখছি। কোনও অবস্থান বিক্ষোভ বা মিছিলের অনুমতি দেওয়া হবে না।”
দিল্লির ৭, লোককল্যাণ মার্গেই রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন। মঙ্গলবার সকাল থেকেই লোককল্যাণ মার্গ মেট্রো স্টেশনের সামনে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্যাটেল চক এবং সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট মেট্রো স্টেশনে ঢোকা-বেরোনোর কিছু গেট ‘নিরাপত্তার কারণে’ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে স্বাভাবিক রয়েছে মেট্রো পরিষেবা। দিল্লি পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, রাজধানী এলাকায় টহল দিচ্ছে তাদের ৫০টি টহলদার গাড়ি।
দিল্লি ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মঙ্গলবার ব্যস্ত সময়ে দিল্লির সফদরজং রোড, আকবর রোড এবং তিন মূর্তি মার্গ এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি যাঁরা বিমানবন্দর, রেলস্টেশনে যাবেন, তাঁদের হাতে ‘যথেষ্ট সময়’ নিয়ে বেরোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আপের কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বিজেপিও। তারা মঙ্গলবার ফিরোজ় শাহ কোটলা স্টেডিয়াম থেকে দিল্লি সেক্রেটারিয়েট পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছে। এই মিছিলের নেতৃত্বে থাকবেন দিল্লির বিজেপি সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেব।
দিল্লিতে এই রাজনৈতিক উত্তেজনার আবহেই ইডি হেফাজত থেকে প্রশাসনিক নির্দেশ দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীওয়াল। একটি সূত্রের খবর, দিল্লির স্বাস্থ্য দফতরকে ওই নির্দেশ দিয়েছেন কেজরী। এর আগে গত রবিবার তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য অতিশী মারলেনাকে ‘আদেশ’ পাঠিয়েছিলেন তিনি। দিল্লির জল দফতরের দায়িত্বে আছেন অতিশী। রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় জল সরবরাহ নিয়ে একটি সমস্যা ছিল বেশ কয়েক দিন ধরেই। সেই সমস্যা মেটাতেই উদ্যোগী হওয়ার জন্য অতিশীকে নির্দেশ দিয়েছেন কেজরী। সেই সঙ্গে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি। অতিশী বলেন, ‘‘অরবিন্দ কেজরীওয়াল আমাকে একটি চিঠি এবং নির্দেশনামা পাঠিয়েছেন। সেই চিঠি পড়ে আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমি ভাবছি, এক জন ব্যক্তি, যিনি কারাগারে আছেন, তবু দিল্লির বাসিন্দাদের জল এবং পয়ঃনিষ্কাশন নিয়ে তাঁর চিন্তা রয়েছে। শুধুমাত্র কেজরীওয়ালই এটা করতে পারেন। কারণ, তিনি দিল্লির দু’কোটি মানুষের পরিবারের সদস্য হিসাবে নিজেকে মনে করেন।’’
গত বৃহস্পতিবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হানা দেয় ইডি। দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় টানা দু’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ এবং তল্লাশি অভিযানের পর রাতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। আবগারি মামলায় কেজরীওয়ালের গ্রেফতারিকে ‘বেআইনি’ বলে দাবি করে আপ। ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরেও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেননি আপ প্রধান। বরং তাঁর দলের তরফে জানানো হয়, কেজরীই মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। দেশের ইতিহাসে কেজরীওয়ালই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি পদে থাকাকালীন দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন।