বাঁ দিক থেকে, অধীর, মমতা এবং কেজরীওয়াল। — ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটে বাংলায় তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘একলা চলো’ নীতির জন্য কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীকে দুষল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)। বুধবার দিল্লির মন্ত্রী তথা আপ নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ জানান, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর যে কায়দায় ধারাবাহিক ভাবে তৃণমূলকে নিশানা করে চলেছেন তাতে বাংলায় দু’দলের সমঝোতা হওয়া কঠিন।
সৌরভ বলেন, ‘‘তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গের বড় দল। কংগ্রেস এবং বামেরা ধারাবাহিক ভাবে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। এই পরিস্থিতিতে তাই আসন ভাগাভাগি একটু কঠিন হবেই।’’ এর পরেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে দুষে তাঁর মন্তব্য, ‘‘অধীর চৌধুরী ধারাবাহিক ভাবে মমতা এবং তৃণমূল সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করে চলেছেন। তাঁকে ‘সুযোগসন্ধানী’ বলেছেন। যখনই সমঝোতা ইতিবাচক অবস্থানে পৌঁছয়, তখনই এমন বিতর্কিত মন্তব্য করা হচ্ছে।’’
তবে সেই সঙ্গেই সৌরভের আশা শেষ পর্যন্ত সমস্যাগুলির সমাধান করা হবে। কেজরীর মন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাহুল গান্ধী দু’জনেই লোকসভা ভোটে ‘ইন্ডিয়া’র সাফল্যের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আপ নেতা তথা পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান বুধবারই তাঁর রাজ্যে লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্জাবে আমরা একার শক্তিতেই লড়ার এবং জেতার ক্ষমতা রাখি।’’ আপের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দলের পঞ্জাব নেতৃত্বের তরফে ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়ার বিষয়ে আপত্তির কথা জানানো হয়েছে কেজরীকে। গত সপ্তাহেই চণ্ডীগড়ের মেয়র নির্বাচনে বিজেপিকে হারানোর জন্য জোট বেঁধে লড়ার কথা ঘোষণা করেছিল কংগ্রেস এবং আপ। তার পরে মানের এই বার্তায় বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র অন্দরের ফাটল আরও চওড়া হল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার গুয়াহাটিতে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ‘‘আমাদের (কংগ্রেস-তৃণমূলের) যে আসন বোঝাপড়ার প্রক্রিয়া রয়েছে, তা চলছে। তার ফলাফল আসবে। ওই বিষয়ে আমি এখানে কোনও মন্তব্য করব না।’’ কিন্তু প্রায় একনিশ্বাসে রাহুল বলেছিলেন, ‘‘মমতাজির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত ও দলের সম্পর্ক (রিস্তা) খুবই ভাল। হ্যাঁ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই রকম (বিতর্ক) হয়। আমাদের কেউ কিছু বলে দেন। ওঁদের কেউ কিছু বলেন। এটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সে সব এতে (আসন বোঝাপড়ায়) বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।’’
এর পরেই বুধবার মমতা কার্যত বাংলায় জোটের সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিয়ে বলেন, ‘‘আমার কারও সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। আমার প্রস্তাব প্রথম দিনেই প্রত্যাখ্যান করেছে! আমার সঙ্গে কারও কোনও আলোচনা হয়নি। অ্যাবসোলিউটলি মিথ্যা কথা!’’ এর পরেই ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’য় রাহুলের সঙ্গী কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানান, মমতাকে ছাড়া ‘ইন্ডিয়া’ কল্পনাই করা যায় না। তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের নেত্রী। আর তৃণমূল ‘ইন্ডিয়া’র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।’’
‘ইন্ডিয়া’ অন্য দুই শরিক শিবসেনা(ইউবিটি) এবং এনসিপি অবশ্য বুধবার জানিয়েছে, বাংলায় মমতার একলা লড়ার সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের কন্যা সুপ্রিয়া সুলে বলেন, ‘‘প্রতিটি রাজ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আলাদা। কেরলে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের লড়াই হচ্ছে। অথচ, দু’পক্ষই ‘ইন্ডিয়া’য় রয়েছে। শিবসেনা(ইউবিটি) সভাপতি উদ্ধব ঠাকরের পুত্র আদিত্যের মন্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় সিংহের মতো লড়াই করেছেন। তাঁর রাজ্যের জন্য ওই লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’