(বাঁ দিকে) হিমন্ত বিশ্বশর্মা এবং রাহুল গান্ধী (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার নির্দেশ মেনে রাহুল গান্ধী এবং তাঁর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র সঙ্গী কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করল সে রাজ্যের পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, জনতাকে হিংসায় প্ররোচনা দেওয়া, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করা এবং পুলিশের উপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিজেপি নেতা হিমন্ত জানিয়েছেন, ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ ঘিরে মঙ্গলবার সকালে গুয়াহাটিতে অশান্তির জেরেই এই পদক্ষেপ।
মঙ্গলবার সকালে গুয়াহাটিতে অশান্তির পরে এক্স হ্যান্ডলে হিমন্ত লেখেন, ‘‘এমন ঘটনা অসমিয়া সংস্কৃতির অংশ নয়। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র। এই ধরনের ‘নকশাল কৌশল’ আমাদের সংস্কৃতির পক্ষে সম্পূর্ণ বিজাতীয়। জনতাকে হিংসায় উস্কানি দেওয়ার জন্য আপনাদের নেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে আমি রাজ্য পুলিশের ডিজিকে নির্দেশ দিয়েছি। আপনাদের ব্যবহার করা ভিডিয়ো ফুটেজই আপনাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা হবে।’’ রাহুলের পাশাপাশি অসম পুলিশ এফআইআর করেছে এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপাল, অসম প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভূপেন বরা-সহ দলের বেশ কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে।
হিমন্তের ওই নির্দেশের পরেই রাহুল বলেছিলেন, ‘‘আমাকে মন্দির, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এটি ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’কে ভয় দেখানোর কৌশলের অঙ্গ। কিন্তু আমরা ভয় পাই না।’’ মঙ্গলবার রাজধানী গুয়াহাটিতে সাংবাদিক বৈঠক করার পূর্বঘোষিত কর্মসূচি থাকলেও রাহুলকে অনুমতি দিতে অস্বীকার করে হিমন্তের পুলিশ। পাঁচ হাজার কংগ্রেস কর্মী-সমর্থক রাজধানীতে প্রবেশের চেষ্টা করতেই পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। আর তার পরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাহুলের ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে বলপ্রয়োগ করে পুলিশ। আহত হন কংগ্রেসের বেশ কয়েক জন নেতা-কর্মী।
হিমন্তের প্রশাসনের দাবি, রাজধানীর ভিতরে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে যানজট এড়াতেই রাহুলের যাত্রার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ২৭ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে নমনি অসমের দিকে এই র্যালি নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। রাজ্য প্রশাসনের দাবি, রাজধানীর ভিতরে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে এই র্যালির অনুমতি দেওয়া যাবে না। ২৭ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে নমনি অসমের দিকে ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ, খুব তুচ্ছ ‘অজুহাতে’ রাহুলের যাত্রা গুয়াহাটিতে ঢুকতে বাধা দিয়েছে অসমের বিজেপি সরকার।
প্রসঙ্গত, ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র পঞ্চম দিনে বৃহস্পতিবার রাহুল পৌঁছেছিলেন অসমে। সে রাজ্যে প্রথম সভাতেই বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রীকে চড়া সুরে আক্রমণ করেছিলেন তিনি। সরাসরি হিমন্তকে ‘দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত মুখ্যমন্ত্রী’ বলে তোপ দেগেছিলেন। রাহুলের ওই মন্তব্যের পরেই ধারাবাহিক ভাবে অসমে বিজেপি কর্মীরা ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র উপর হামলা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
রবিবার সকালে শোণিতপুর জেলার জামগুড়িহাতে হামলায় গুরুতর আহত হন অসম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ভূপেন বরা। শোণিতপুর জেলার পুলিশ সুপার হিমন্তের ভাই সুশান্ত বিশ্বশর্মা। রবিবারই সন্ধ্যায় নগাঁও জেলার রূপহীহাটে একটি হোটেলে খেতে ঢোকার সময় রাহুল ও তাঁর যাত্রাসঙ্গীদের ঘেরাও করা হয়। ছোড়া হয় পাথর। হামলাকারীদের মুখে ছিল ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান।
এর পর সোমবার নগাঁওয়ের বটদ্রবায় শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের জন্মস্থানে দিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন রাহুল। অভিযোগ, তাঁকে মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। প্রতিবাদে বেশ কিছু ক্ষণ রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান রাহুল এবং তাঁর যাত্রাসঙ্গীরা। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তকে এ বিষয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘আজ কেন রাবণকে নিয়ে কথা বলছেন? আজ রাম নিয়ে কথা বলুন। মঙ্গলবার গুয়াহাটির পুরসভার এক প্রান্ত ছুঁয়ে রাহুলের যাত্রা নিম্ন অসমের দিকে যাওয়ার কথা থাকলেও বিনা প্ররোচনায় পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ।