Mamata Banerjee

বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই! জোট নিয়ে প্রশ্নের জবাবে সাফ জানিয়ে দিলেন মমতা

সোমবার রাহুলের বক্তব্যের পরে বাংলায় জোট নিয়ে খানিকটা ‘ইতিবাচক’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বুধবার মমতার বক্তব্যের পরে স্পষ্ট, পশ্চিমবঙ্গে কোনও জোট বা আসন সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:২৪
রাহুল গান্ধী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

রাহুল গান্ধী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। সরাসরি জানিয়ে দিলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার কথায়, ‘‘আমার কারও সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। আমার প্রস্তাব প্রথম দিনেই প্রত্যাখ্যান করেছে! আমার সঙ্গে কারও কোনও আলোচনা হয়নি। অ্যাবসোলিউটলি মিথ্যা কথা!’’

Advertisement

মমতার ওই মন্তব্য এসেছে কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে। মঙ্গলবার গুয়াহাটিতে রাহুল বলেছিলেন, ‘‘আমাদের (কংগ্রেস-তৃণমূলের) যে আসন বোঝাপড়ার প্রক্রিয়া রয়েছে, তা চলছে। তার ফলাফল আসবে। ওই বিষয়ে আমি এখানে কোনও মন্তব্য করব না।’’ কিন্তু প্রায় একনিশ্বাসে রাহুল বলেছিলেন, ‘‘মমতাজির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত ও দলের সম্পর্ক (রিস্তা) খুবই ভাল। হ্যাঁ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই রকম (বিতর্ক) হয়। আমাদের কেউ কিছু বলে দেন। ওঁদের কেউ কিছু বলেন। এটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সে সব এতে (আসন বোঝাপড়ায়) বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।’’

বুধবার বর্ধমানে প্রশাসনিক বৈঠকে যাওয়ার আগে মমতাকে ওই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ মমতা জানিয়ে দেন, বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। সেখানেই না-থেমে তিনি বলেন, ‘‘এই যে আমাদের রাজ্যে আসছে, আমাকে তো এক বারও বলেনি!’’ মমতা বলতে চেয়েছেন রাহুলের ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র কথা। অসম থেকে রাহুল তাঁর যাত্রা নিয়ে বৃহস্পতিবারেই কোচবিহার দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করবেন। তার এক দিন আগে মমতার কথায় স্পষ্ট যে, ‘ইন্ডিয়া’র শরিক হিসেবে তৃণমূল ওই যাত্রায় অংশ নেবে না। এখন দেখার, এর পরে সিপিএম ওই যাত্রার অংশীদার হয় কি না।

বস্তুত, মমতার বুধবারের মন্তব্যে এ-ও স্পষ্ট যে, তিনি ‘ইন্ডিয়া’র অন্দরে কংগ্রেসকে এক দিকে এবং অন্য আঞ্চলিক দলগুলিকে এক দিকে রাখছেন। মমতার কথায়, ‘‘আমরা আঞ্চলিক দলগুলো ভোটের পরে কী সিদ্ধান্ত নেব, তা ভোটের পরেই ঠিক করব। আমি তো ওদের (কংগ্রেসকে) বলেছিলাম ৩০০ আসনে লড়তে। বাকিটা আমরা সকলে মিলে লড়তাম।”

বুধবার বর্ধমানে প্রশাসনিক বৈঠকে যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বুধবার বর্ধমানে প্রশাসনিক বৈঠকে যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

সোমবার রাহুলের বক্তব্যের পরে বাংলায় কংগ্রেস-তৃণমূল জোট নিয়ে খানিকটা ‘ইতিবাচক’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেছিলেন। কিন্তু বুধবার মমতার বক্তব্যের পরে স্পষ্ট যে, পশ্চিমবঙ্গে কোনও জোট বা আসন সমঝোতা হচ্ছে না। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনেই প্রার্থী দিতে চলেছে তৃণমূল।

সোমবার পার্ক সার্কাসের মঞ্চ থেকে মমতা ‘ইন্ডিয়া’র সমালোচনা করেছিলেন। কংগ্রেসের নাম না করেও বলেছিলেন, ‘‘আমি বলেছিলাম, যে রাজ্যে, যে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী, তারা সেই রাজ্যে লড়ুক। আর আপনারা ৩০০ আসনে একা লড়াই করুন। আমরা সাহায্য করব। তারা বলছে, তাদের মর্জিমতো হবে।’’ মমতার ওই বক্তব্য নিয়ে মঙ্গলবার রাহুলকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। জবাবে কংগ্রেসের নেতা বলেন, গত সপ্তাহে মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠক করেছিলেন মমতা। সেই বৈঠকেই মমতা বলে দিয়েছিলেন, ৪২টি আসনে একা লড়াইয়ের প্রস্তুতি রাখতে হবে। এমনকি, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী সম্পর্কে জেলা নেতাদের মমতা বলেছিলেন, উনি কোনও ‘ফ্যাক্টর’ নন। ওঁর কথা মাথাতেই আনতে হবে না। অভ্যন্তরীণ বৈঠকের পাশাপাশি সোমবার প্রকাশ্যেও মমতা কংগ্রেসের সমালোচনা করেন। যদিও তিনি কংগ্রেসের নাম করেননি। তবে কংগ্রেসকে মমতার আক্রমণে সবচেয়ে বেশি ‘সন্তুষ্ট’ হয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। কারণ, তাঁরা মনে করছিলেন এর ফলে তৃণমূলের সঙ্গে জোটে যাওয়ার হাইকমান্ডের ইচ্ছা ধাক্কা খাবে। কিন্তু দেখা গেল স্বয়ং রাহুল জোটপ্রক্রিয়ায় নতুন ‘অক্সিজেন’ দিলেন।

রাহুলের ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’য় সমস্ত রাজ্যেই ‘ইন্ডিয়া’ শরিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে কংগ্রেস। মমতার কথায় স্পষ্ট যে, কংগ্রেস আমন্ত্রণের কথা বললেও তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রীর সঙ্গে বাংলায় ওই যাত্রার বিষয়ে কোনও আলোচনা করা হয়নি। যা জোটের মধ্যে ‘কাঁটা’ হিসেবেই দেখা দিয়েছে। তবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মমতার ‘আগ্রাসী’ মন্তব্য রাজ্য সিপিএমে আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘তৃণমূল ওই কর্মসূচিতে না থাকলে আমাদের দলের প্রতিনিধি থাকবেন।’’

Advertisement
আরও পড়ুন