আম খাওয়ার সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলী। ছবি: সংগৃহীত।
সকালে অফিসে আসার আগে চিড়ে, আম। দুপুরে টিফিনের পর এক টুকরো আম। সন্ধ্যায় অফিস থেকে বেরিয়ে গরমে গলা ভেজাতে আম লস্যি কিংবা আম পান্না। রাতে আবার খাওায়াদাওয়ার পর আম খেয়ে তার পর ঘুমোতে যাওয়া। গরম পড়তেই আমের সঙ্গে এমনই সুদৃঢ় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে অনেকের। হিমসাগর, ফজলি, আম্রপালি, ল্যাংড়া আম খেয়েই গ্রীষ্মকাল উদ্যাপন করছে বাঙালি। আম খেতে তো ভালই, সঙ্গে এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই, কে-এর মতো উপাদান। ফাইবার, কার্বোহাইড্রেটে সমৃদ্ধ আম যে শরীরের খেয়াল রাখে না, এমন নয়। কিন্তু স্বাস্থ্যকর হলেও খাওয়ার পরিমাণে একটা সমতা বজায় রাখা জরুরি। অত্যধিক আম খাওয়ার কিছু অস্বাস্থ্যকর দিক রয়েছে। যেগুলি মাথায় না রাখলে মুশকিলে পড়তে হতে পারে।
আমে শর্করার পরিমাণ অন্যান্য ফলের চাইতে বেশি। শর্করা শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা আলাদা করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আম খেলে কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু বেশি পরিমাণে খেলে কী ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে, সে বিষয়েও ধারণা থাকা জরুরি। অত্যধিক আম খেলে কী প্রভাব পড়তে পারে শরীরের উপরে? কেন সতর্ক থাকা প্রয়োজন? চিকিৎসক সুর্বণ গোস্বামী আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমে প্রচুর চিনি থাকে। ফলে বেশি আম খাওয়ার নিঃসন্দেহে কিছু অস্বাস্থ্যকর দিক রয়েছে। ডায়াবিটিস যাঁদের নেই, তাঁরা চাইলে দিনে ৩-৪টি আম খেতেই পারেন। কিন্তু ডায়াবেটিকদের ক্ষেত্রে একটা পুরো আম খেয়ে নেওয়াও বিপজ্জনক। সে ক্ষেত্রে দিনে ১-২ টুকরো আম যথেষ্ট।’’
আম খেতে ভালবাসেন, কিন্তু গ্যাস-অম্বলের ভয়ে এই ফলের থেকে দূরে থাকেন, এমন উদাহরণও কম নয়। আম পেটের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাতে পারে। বিশেষ করে সারা বছরই গ্যাস-অম্বল, বুকজ্বালা, পেটফাঁপার সমস্যা নিয়ে ভোগেন। এই মরসুমে বুকে পাথর চেপে হলেও আম থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু কেন? চিকিৎসকের কথায়, ‘‘ডায়াবেটিক ছাড়াও গ্যাস-অম্বলের রোগীদের জন্য আম খাওয়া ঠিক নয়। কারণ আমে থাকা ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ অনেকেরই সহ্য হয় না। কারও ‘ফ্রুক্টোজ ইনটলারেন্স’ থাকতে পারে। তাঁরা যদি দিনে ৩-৪টি আম খেয়ে নেন, তা হলে পেটের সমস্যা হতে পারে। তাই আমের মরসুম বলেই প্রচুর আম খেয়ে নিতে হবে, এমন ভাবনা ঠিক নয়। শরীরের খেয়াল রেখেই আমের স্বাদ নেওয়া ভাল।’’
শরীরের খেয়াল রেখেও আম খাওয়ার কি কোনও নিয়ম রয়েছে? চিকিৎসকের মতে, ‘‘খালি পেটে আম না খাওয়াই ভাল। সব সময়ে ভরা পেটে আম খেতে হবে। আম খাওয়ার অন্তত কয়েক ঘণ্টা আগে আম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। আম সব সময়ে ঠান্ডা করে খাওয়াই ভাল। অনেকেই দুধ কিংবা দইয়ের সঙ্গে আম খান। সব আম সমান মিষ্টি নয়। কিছু আমে অ্যাসিডের পরিমাণও বেশি। তাই দুগ্ধজাত খাবারের সঙ্গে আম না খাওয়াই ভাল।’’