গরমের মধ্যেই ভাইরাস সংক্রমণের ভয়, হবু মায়েরা কী ভাবে সতর্ক থাকবেন। ছবি: সংগৃহীত।
গরম আর ভাইরাস পিছু ছাড়ছে না কিছুতেই। কোভিড নিয়ে আতঙ্কের পালা শেষ হতে না হতেই বার্ড ফ্লু মাথাচাড়া দিয়েছে। পাখিদের শরীর থেকে ভাইরাস অবলীলায় ঢুকে পড়ছে মানুষের শরীরে। কখন যে কী হয়, তা বলতে পারছেন না স্বাস্থ্য আধিকারিকেরাও। তাই সতর্কতা ছাড়া আরও কোনও গতিই নেই। একেই জ্বালাপোড়া গরম, তার উপরে ভাইরাসের ভয়, সব মিলিয়ে একেবারে নাকানিচোবানি দশা। এমন পরিস্থিতিতে তাই অন্তঃসত্ত্বাদের নিয়েই উদ্বেগ বেড়েছে।
অনেক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকেই পেশাগত কারণে রোজ বাইরে বেরোতে হয়। বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়। গণ পরিবহণেও যাতায়াত করতে হয়। তাই এই সময়ে হবু মায়েদের শরীরের বিশেষ যত্ন নিতেই বলছেন চিকিৎসকেরা। গরমে সুস্থ থাকা জরুরি, আবার ভাইরাসঘটিত রোগ থেকেও বাঁচতে হবে। হবু মায়েরা তাই কী কী সতর্কতা নেবেন, তা জেনে রাখাই ভাল।
জলশূন্যতা থেকে বাঁচতে জল খান, তবে কতটা?
গরমে সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ হল শরীরের জলশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন। একেই চড়া রোদ, তার উপরে বেলা বাড়লে লু বইছে। এই গরমে বাইরে বেরোলে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে যাবে। লবণের ঘাটতিও হবে। তাই অন্তঃসত্ত্বাদের বেশি করে জল খাওয়ারই পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে সেই পরিমাণ কতটা হওয়া জরুরি, তা জেনে রাখা উচিত। এ বিষয়ে স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়ের মত, ‘‘গর্ভবতীদের মেপে জল খেতে হবে। গরমে বেশি জল খেতে হবে ভেবে দিনে ৫ থেকে ৬ লিটার জল খেয়ে ফেলা ঠিক নয়। সাধারণত শরীরে কোনও সমস্যা না থাকলে এক জন গর্ভবতী মায়ের দিনে ২ থেকে ২.৫ লিটার জল খাওয়া উচিত। তবে যাঁরা পরিশ্রম বেশি করেন, দিনভর এসিতে থাকেন, তাঁদর জল একটু বেশিই খেতে হবে।’’
লবণের ঘাটতি মেটাতে
ঘাম বেশি হলে জলের সঙ্গে লবণও বেরিয়ে যাবে শরীর থেকে। জল আর লবণের অনুপাত ঠিক রাখতে হলে রোজ লেবু, চিনি দিয়ে জল খাওয়া ভাল। মুসাম্বি, কমলালেবুর রস খেতে পারেন হবু মায়েরা। ফলের রস করার সময় না থাকলে মুসাম্বি বা কমলা চিবিয়েই খান। তাতেও উপকার হবে। সেটাও হাতের কাছে না থাকলে ওআরএস খাওয়া ভাল। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) অনুমোদিত ওআরএসই খেতে হবে।
প্রস্রাবের রং খেয়াল রাখুন
চিকিৎসক মল্লিনাথের পরামর্শ, প্রস্রাবের রং লক্ষ করুন। হলুদ প্রস্রাব হলে বুঝতে হবে, শরীরে জলের অভাব রয়েছে। এ ছাড়াও শরীরে জলের ঘাটতির কারণে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় এবং প্রস্রাব করার সময়ে জ্বালা বোধ হয়। এই সব উপসর্গ দেখলেই সতর্ক হতে হবে।
বার্ড ফ্লু বড় বালাই
এই গরমে গোদের উপর বিষফোড়ার মতো চেপে বসেছে বার্ড ফ্লু। এইচ৯এন২ ভাইরাসের প্রজাতি পশ্চিমবঙ্গেও ঢুকে পড়েছে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই লোকজনের মনে ভয় চেপে বসেছে যে, এই ভাইরাসও করোনার মতো হবে কিনা। চিকিৎসকেরা বলছেন, বার্ড ফ্লু ভাইরাসও ছোঁয়াচে। আসলে বার্ড ফ্লু এক রকম ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। আর ইনফ্লুয়েঞ্জা যেমন ছোঁয়াচে রোগ, তাড়াতাড়ি সুস্থ মানুষকেও অসুস্থ করতে পারে, বার্ড ফ্লু-ও ঠিক তেমন। যদিও বার্ড ফ্লু ভাইরাস খুব বেশি মানুষের শরীরে ছড়িয়েছে বলে শোনা যায়নি, তবুও সতর্ক থাকা জরুরি। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বাদের বাইরে বেরোলে মাস্ক পরা একান্তই দরকার। সিনেমা দেখতে গেলে, রেস্তরাঁয় খেতে গেলে বা কোনও অনুষ্ঠান বাড়িতে বহু মানুষের সমাগমে গেলে মাস্ক পরা খুবই জরুরি। হাসপাতালে গেলে অতি অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। বাইরে থেকে ফিরলে হাত ভাল করে ধুয়ে বা স্যানিটাইজ় করে তবেই খাবার খাবেন।
খাওয়াদাওয়ায় নজর দিন
বার্ড ফ্লু-র কারণে ডিম, মুরগির মাংস একটু কমই খেতে বলছেন চিকিৎসকেরা। গর্ভবতীদের এই সময়টিতে ডিম বা মুরগির মাংস কম খাওয়া বা না খাওয়াই উচিত। এমনিতেও গর্ভাবস্থায় প্রোটিন বেশিই খেতে বলা হয়। তাই যদি ডিম বা মুরগির মাংস না খান, তা হলে তার বদলে খেতে পারেন দুধ, ছানা, পনির, সয়াবিন, ছোলা। এতেও সমান উপকার হবে।
পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি
শরীর ঠিক রাখতে হলে পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। দুপুরে আধ ঘণ্টা বিশ্রাম নিতেই হবে। পরিচ্ছন্ন থাকা খুব জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সকালে ও সন্ধ্যায় হালকা ব্যায়াম করতে পারলে খুবই ভাল। এতে ঘুম ভাল হবে, মনের চাপও কমবে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
গরমে একটু-আধটু জ্বর হয়েই থাকে। কিন্তু যদি দেখেন টানা তিন থেকে চার দিন বা তার বেশি জ্বর-কাশি রয়েছে, তা হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। জ্বর এলে বাড়িতেই খেতে পারেন প্যারাসিটামল। জল খেতে হবে ভাল করে। তার পরেও না কমলে রক্তপরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। বুকের এক্স রে আর রক্তপরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসকেরা দেখে নেন ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে কিনা। শ্বাসের সমস্যা দেখা দিলে আর একটানা শুকনো কাশি হতে থাকলে ভাইরাল প্যানেল টেস্ট করেও দেখা নেওয়া হয়।