Liver Disease

লিভারে জমছে মেদ? ওষুধ নয়, কোন কোন অভ্যাস রপ্ত করলেই সুস্থ থাকবেন?

লিভার বা যকৃতে ফ্যাটের পরিমাণ যখন স্বাভাবিকের থেকে ৫-১০ শতাংশ বেড়ে যায়, তখন সেই অবস্থাকে ফ্যাটি লিভার বলে। শুধু ওষুধ খেলেই রোগ সারবে না। স্বাস্থ্যকর কিছু অভ্যাসও রপ্ত করতে হবে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৪ ১৩:০৮
These daily habits can trigger sadness

লিভার ভাল রাখতে কী কী করবেন আর কী নয়। ছবি: ফ্রিপিক।

ঘরে-বাইরে বাড়তে থাকা কাজের চাপ, উদ্বেগজনিত সমস্যা নতুন নয়। কর্মক্ষেত্র, পড়াশোনা কিংবা সাংসারিক কাজকর্ম, সম্পর্কের টানাপড়েনে মানসিক চাপ দিন দিন বেড়ে চলেছে। তার মধ্যেই রয়েছে ভুলভাল খাওয়ার অভ্যাস। ব্যস্ততা যত বাড়ছে, ততই বাইরের খাবারের প্রতি ঝোঁকও বেড়ে চলেছে। ঘরে বানানো হালকা তেল-মশলা দেওয়া খাবার এখন আর মুখে রোচে না অনেকেরই। এমনকি শিশুরাও ভাজাভুজি, রাস্তা থেকে কেনা খাবার খেতেই বেশি অভ্যস্ত। তাই কম বয়স থেকেই হানা দিচ্ছে স্থূলতা, ডায়াবিটিস, লিভারের রোগ। খাদ্যাভ্যাস তো রয়েছেই, সেই সঙ্গেই আছে নেশার প্রকোপ। অতিরিক্ত মদ্যপানও কিন্তু লিভারের বারোটা বাজাচ্ছে। পরতে পরতে মেদ জমছে লিভারে।

Advertisement

লিভার বা যকৃতে ফ্যাটের পরিমাণ যখন স্বাভাবিকের থেকে ৫-১০ শতাংশ বেড়ে যায়, তখন সেই অবস্থাকে ফ্যাটি লিভার বলে। লিভারের সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। অনেকে এই রোগটিকে তেমন আমল দেন না। শেষমেশ অসুখ বড় আকার নিলে তখন চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হয়। জানেন তো, শুধু ওষুধ খেয়েই কিন্তু এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। জীবনযাপনে এমন কিছু অভ্যাস রপ্ত করতে হবে, যাতে লিভারের রোগই না হয়।

রোজের কী কী অভ্যাস লিভার ভাল রাখবে?

১) শরীরচর্চা করতে হবে রোজ। বাইরে যাওয়ার সুযোগ না থাকলে ঘরেই ব্যায়াম করুন অন্তত আধ ঘণ্টা। স্পট জগিং, যোগব্যায়াম করতে পারেন। হাঁটাহাঁটি করুন নিয়মিত। ঘরের ভিতর, বাড়ির ছাদেও হাঁটতে পারেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, সাইকেল চালানো, সাঁতার, দৌড়নোর মতো ভাল ব্যায়াম নেই। প্রশিক্ষকের থেকে শিখে নিয়ে সহজ কিছু যোগাসনও করতে পারেন। নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস থাকলে, লিভারে মেদ জমতেই পারবে না।

২)মদ্যপান কমাতে হবে। যদি ফ্যাটি লিভার ধরা পড়ে, তা হলে অ্যালকোহল পুরোপুরি এড়িয়ে চলাই ভাল। লিভারের মেদ জমতে জমতে ক্ষত তৈরি হয়, যাকে বলে ‘লিভার সিরোসিস’। এই রোগের অন্তিম পর্যায় হল লিভার ক্যানসার। মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি বহু গুণ বাড়িয়ে তোলে।

৩) বেশি চিনি দেওয়া খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। নরম পানীয়, প্যাকেটজাত পানীয় খেলেই রক্তে শর্করা, কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়বে, যা পরবর্তী সময়ে ফ্যাটি লিভারের কারণ হয়ে উঠবে। রান্নাতেও বেশি চিনি খাওয়া কমাতে হবে। দুধ-চিনি দেওয়া চা, কফি দিনে ঘন ঘন খেলেও কিন্তু লিভারের বারোটা বাজবে।

৪) প্রক্রিয়াজাত মাংস, পিৎজ়া, বার্গার, সসেজ, সালামি খাওয়ার অভ্যাস ছাড়ুন। বদলে খান স্বাস্থ্যকর খাবার। ব্রাউন রাইস, কিনোয়া, ডালিয়া, ওট্‌স, বার্লি খেতে পারেন। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, এমন খাবার রোজ রাখতে হবে পাতে। রেড মিট না খেয়ে, মাছ বেশি করে খান। ভেটকি, বাসা, পমফ্রেট, লটে মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে। ছোট মাছও খেতে পারেন।

৫) ফাইবার আছে এমন শাকসব্জি খেতে হবে। সবুজ শাকসব্জির মধ্যে যে পলিফেনল ও নাইট্রেট পাওয়া যায়, তা লিভারের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। রোজ খেতে হবে একটি করে মরসুমি ফল। ফলের রস খেতে চাইলে কিনে নয়, বাড়িতে বানিয়ে খান। লেবুর শরবত খান। এতে ভিটামিন সি-এর চাহিদা মিটবে। ডাল, ছোলা, মটরশুঁটি ইত্যাদি খাবারে স্টার্চ ও ফাইবার ভরপুর মাত্রায় থাকে। এই সব খাবার খেলেও লিভার ভাল থাকবে।

৬) পর্যাপ্ত জল খেতে হবে। দিনে আড়াই থেকে তিন লিটার জল খাওয়া জরুরি। সেই সঙ্গেই ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার। কম ঘুম বা অনিদ্রার সমস্যা বড় ক্ষতি করে শরীরের। এর প্রভাব পড়ে মানসিক স্বাস্থ্যেও। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, উদ্বেগ, মানসিক চাপ যত বাড়বে ততই তার রেশ পড়বে লিভারেও। তাই উদ্বেগ কমাতে হবে। রোজ নিয়ম করে মেডিটেশন বা ধ্যানের অভ্যাস করাও ভাল।


এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থাকলে কী কী খেতে হবে, কী পরিমাণে খেতে হবে, কোন কোন ব্যায়াম করা ভাল তা অবশ্যই চিকিৎসক ও প্রশিক্ষকের থেকে জেনে নিতে হবে।

আরও পড়ুন
Advertisement