কোন কোন প্রসাধনী অন্যের সঙ্গে ভাগ করবেন না, জেনে রাখুন। ছবি: ফ্রিপিক।
বন্ধুরা সকলে মিলে একই মেকআপ কিট ব্যবহার করেন? হস্টেলে যে মেয়েরা থাকেন, তাঁদের মধ্যে এই প্রবণতা থাকেই। আবার আত্মীয়-পরিজনদের মধ্যেও এমন দেখা যায়। হয়তো দুই বোন, একই মেকআপ কিট ব্যবহার করছেন। সাজার সময়ে কাজল, লিপস্টিক বা মাস্কারা ভাগ করে নিচ্ছেন। একই লিপস্টিক বা লিপবাম দু’জন অথবা তিন জন ঠোঁটে ঘষছেন। মেকআপ ব্রাশও একাধিক জন ব্যবহার করছেন, এমনও দেখা গিয়েছে। হয়তো আপনার মনে হতে পারে, আপনজনদের সঙ্গে মেকআপ ভাগ করে নিলে কী আর এমন হবে! কিন্তু ত্বক চিকিৎসকেরা বলছেন, এই অভ্যাস একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়। বরং মেকআপ অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিলে দুরারোগ্য রোগ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।
এই বিষয়ে ত্বক চিকিৎসক ডিএম মহাজনের মত, ঘনিষ্ঠ বন্ধুই হোক বা বোন, কখনওই নিজের মেকআপ অন্যের সঙ্গে ভাগ করবেন না। এতে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়বে। একই লিপস্টিক বা আইলাইনার অথবা মাস্কারা যদি একাধিক জন ব্যবহার করতে থাকেন, তা হলে বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া এক জনের থেকে অন্য জনের মধ্যে ছড়াতে শুরু করবে। অজান্তেই হানা দেবে জটিল রোগ।
কোন প্রসাধনী ভাগ করলে কী রোগ ছড়াতে পারে?
মেকআপ ব্রাশ
চিকিৎসক মহাজন জানাচ্ছেন, মেয়েরা মেকআপ করার সময়ে কিছু ভুল এমনিতেও করেন। যেমন, মেকআপ ব্রাশগুলিও সাফসুতরো রাখেন না অনেকেই। এগুলিতে আগের দিনের ব্লাশ, গ্লিটার বা পাউডার লেগে থাকে। পরের দিন আবার সেগুলিই ব্যবহার করেন। ফলে ব্রাশে লেগে থাকা ত্বকের মৃতকোষ বা জীবাণু, যিনি ব্যবহার করছেন তাঁর শরীরে ঢুকে যায়। এর থেকে ত্বকে র্যাশ, চুলকানি, প্রদাহ হতে পারে। আবার যদি কারও একজ়িমা বা সোরিয়াসিস থাকে আর তাঁর ব্যবহার করা ব্রাশ বা বিউটি ব্লেন্ডার আপনি ভাগ করে নেন, তা হলে ত্বকের জটিল রোগ হতে বাধ্য।
চোখের মেকআপ
আইলাইনার, কাজল বা মাস্কারা কখনওই অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া ঠিক নয়। এর থেকে কনজাংটিভাইটিস ছড়াতে পারে। একই কাজল বা আইলাইনার যদি একাধিক জন ব্যবহার করেন, তা হলে চোখে সংক্রমণ হতে পারে। চোখ ফুলে ওঠা, অনবরত জল পড়া, চোখের মণির চারপাশে লাল দাগ দেখা যেতে পারে।
লিপস্টিক
ঠোঁটের ত্বক খুবই সংবেদনশীল। মনে রাখবেন, লিপস্টিক বা লিপবাম কিন্তু আমাদের লালাতেও মিশে যায়। তাই একই লিপস্টিক বা লিপবাম যদি একাধিক জন ব্যবহার করতে থাকেন, তা হলে ত্বকের সংক্রমণ কেবল নয়, অন্যের শরীরে থাকা রোগজীবাণু আপনার শরীরেও বাসা বাঁধতে পারে। আর থুতু বা লালার মাধ্যমেই কিন্তু সংক্রামক ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে মুখ, গলা ও শ্বাসযন্ত্রের রোগ হওয়াও অস্বাভাবিক নয়।
মেকআপে যদি রাসায়নিক রঞ্জক বেশি মাত্রায় থাকে, তবে তাতে জীবাণু মিশতে পারে। এই ধরনের মেকআপ ত্বকে বেশিক্ষণ থাকলে র্যাশ, ব্রণ বার হয়। ত্বক তার স্থিতিস্থাপকতা হারায়, বলিরেখা পড়ে যায়। সবচেয়ে আগে ভাঁজ পড়ে চোখের চারপাশে। যে মেকআপ বোতলে বা কাচের জারে রয়েছে, তা-ও অন্যের সঙ্গে ভাগ করা ঠিক নয়। কারণ সে ক্ষেত্রেও জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে। তা ছাড়া আপনার ত্বকের ধরনে কোন কোন প্রসাধনী উপযুক্ত, সে বিষয়ে ধারণা থাকাও দরকার। তৈলাক্ত, শুষ্ক ও মিশ্র ত্বকের প্রসাধন সামগ্রী এক হবে না। অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলেও সংবেদনশীল ত্বকের উপযুক্ত সামগ্রী কিনতে হবে। তাই অন্যের মেকআপ ব্যবহার করলে তা আপনার ত্বকের ক্ষতিই ডেকে আনবে তাতে কোনও সন্দেহই নেই। তাই সাবধান থাকা দরকার।