কেন ঘুম আসতেই চায় না, আপনার কিছু অভ্যাস দায়ী নয় তো! ছবি: ফ্রিপিক।
রাতে একদৃষ্টে ঘুরন্ত পাখার দিকে তাকিয়ে যতই ঘুম আনার চেষ্টা করুন না কেন, ঘুম ঠিক নাকের ডগা দিয়ে পিছলে পগার পার। অগত্যা রাত বাড়লেই হাতে ধরা মোবাইলের নীল আলো চোখ ভেদ করে একেবারে মাথায় গিয়ে সেঁধোয়। ঘুমের বারোটা আরও বেজে যায়।
এখন অনেককেই বলতে শুনবেন, বিছানায় শুয়েও ঘুম আসতে চায় না, শরীর বেজায় ক্লান্ত, কিন্তু তাতেও ঘুম আসে না। মাথায় গুচ্ছের চিন্তা গিজগিজ করে। চিন্তামুক্ত হয়ে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোনো মানুষের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে।
এই যে ঘুম আসছি আসছি করেও আসে না, তার অনেক কারণ। চিকিৎসকেরা বলেন, শরীরেরও একটা ঘড়ি আছে। সে’ও কাঁটায় কাঁটায় চলতে চায়। খিদে পাওয়ার যেমন সময় আছে, ঘুমেরও তেমন সময় আছে। আর সেই সময়ে যদি ঘুম না আসে, তা হলে সেটিও কিন্তু একটি রোগ। এই রোগের নাম অনিদ্রা। কেন হয় তা, জেনে নেওয়াই ভাল। কারণ আমাদের জীবনযাপন পদ্ধতির মধ্যে এমন অনেক ত্রুটি আছে, যা এই অনিদ্রার কারণ হতে পারে।
১. নাইট শিফটে যাঁরা চাকরি করেন, তাঁদের ঘুমোনোর সমস্যা বেশি হয়। রাতভর কাজ করে সকালে বাড়ি ফিরে গিয়ে ঘুমোন তাঁরা, কিন্তু এই ব্যক্তিরা কিন্তু ছোট থেকে বড় হয়েছেন রাতে ঘুমিয়েই। এ ক্ষেত্রে শরীর রাতারাতি ঘুমোনোর অভ্যেসটা বদলে ফেলতে পারে না। ফলে অনিদ্রার সমস্যা হয়। এ সব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে লাগে।
২. রাত জেগে অনেকে পড়াশোনা বা কাজ করেন, রাত জেগে থাকার জন্য ঘনঘন সিগারেট বা কফি খান। সিগারেট ও কফি বা ক্যাফিন জাতীয় জিনিস ঘুম না আসার অন্যতম বড় কারণ। সুতরাং ভাল ঘুমের ইচ্ছে থাকলে, আগে এই দুই অভ্যাস ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করুন।
৩. মনই যত নষ্টের গোড়া। ঘুমোতে গেলেই গুচ্ছের দুশ্চিন্তা উঁকিঝুঁকি দিতে থাকে। মগজে এক পাহাড় চিন্তা থাকলে কখনওই ঘুম আসবে না। শরীরের মতো মন ও মস্তিষ্কেরও বিশ্রাম প্রয়োজন। সেটাই যদি না হয়, তা হলে আর ঘুম আসবে কী করে!
৪. অনিদ্রার সমস্যা যে আগে ছিল না, তা নয়। তবে বয়সজনিত কারণেই এমন সমস্যা দেখা যেত। এখন কমবয়সিরাও ভুগছে ঘুমের সমস্যায়। এর একটা কারণই হল বিদ্যুতিন গ্যাজেটের উপর বেশি নির্ভরতা। রাতে শুয়ে মোবাইলের দিকে দীর্ঘ ক্ষণ তাকিয়ে থাকা, কানে হেডফোন গুঁজে উচ্চ স্বরে গান শোনা, রাত জেগে ল্যাপটপ বা টিভিতে সিনেমা, ওয়েব সিরিজ দেখার অভ্যাস ঘুমের দফারফা করছে। তার উপর রাত জাগলে খিদেও পায়। সেই সময় ভুলভাল খাওয়ার অভ্যাস অম্বলের সমস্যা বাড়াচ্ছে। শুলেই তখন গলা বা বুক জ্বালা করছে। ফলে ঘুম আসছে না। ফলে রাতে ঘুমোনোর আগে এই বদভ্যাস ছেড়ে ফেলা জরুরি।
৫. শারীরিক অস্বস্তি, অসুখবিসুখও ঘুম না আসার কারণ হতে পারে। ধরুন, পিঠে বা কোমরে ব্যথা কমছে না, অথবা দিনভর একটানা বসে কাজ করছেন, ফলে মাথায় ও ঘাড়ে ব্যথা হচ্ছে। তখন ব্যথার কারণে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ফিটনেস প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম করতে হবে। ব্যথাও কমবে, ঘুমও স্বাভাবিক নিয়মে আসবে।
৬. মনের অসুখে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদেরও ঘুম কম হয় বা একেবারে হয়ই না। যেমন, অ্যালঝাইমার্স, পার্কিনসন্স রোগ থাকলে অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয়।
৭. ঘুম কেন আসছে না, এই ভাবনা থেকেও ঘুম হয় না অনেকের। চিন্তা থেকে উদ্বেগ বাড়ে, ঘুমের ক্ষতি হয়। হালকা মেডিটেশন বা ধ্যান এ ক্ষেত্রে খুব উপকারী।
প্রতি দিন ঘুমোতে যাওয়ার আগে একটি নির্দিষ্ট অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। বই পড়তে পারেন, লিখতে পারেন রোজনামচা। আপাত ভাবে তুচ্ছ মনে হলেও এই ধরনের অভ্যাস দীর্ঘস্থায়ী ভাবে অনিদ্রা দূর করতেও উপকারী। মানসিক চাপ ও অনিদ্রার সম্পর্ক বেশ নিবিড়। যদি মানসিক চাপের সমস্যা থাকে, তবে অবশ্যই মনোবিদের পরামর্শ নিন। ধ্যান, প্রাণায়াম, যোগাসন ঘুমের সমস্যা দূর করে। প্রতি দিন নিয়ম করে এগুলি অনুশীলন করলে মানসিক চাপ ও অনিদ্রা, দুই সমস্যা থেকেই মুক্তি মিলতে পারে। দীর্ঘ দিন কেউ যদি অনিদ্রার জন্য কষ্ট পান, তা হলে নিজে থেকে ঘুমের ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয় জরুরি।