ঋতুস্রাবের সময়ে মূত্রনালির সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। প্রতীকী ছবি।
মূত্রনালির সংক্রমণে বেশি ভোগেন মহিলারাই। একে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন’। সংক্ষেপে ‘ইউটিআই’। যে কোনও বয়সেই এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। জল কম খাওয়া, অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার ব্যবহার, ঋতুস্রাবের সময় পরিচ্ছন্নতা মেনে না চলা ইত্যাদি নানা কারণ রয়েছে এই রোগের। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, প্রস্রাবের জায়গায় জ্বালা বা ব্যথা হলে মেয়েরা লজ্জার কারণে তা বলতে চান না। চিকিৎসকের কাছেও যান না। ফলে সংক্রমণ ভিতরে ভিতরে থেকেই যায়। ঋতুস্রাবের সময়ে সংক্রমণ আরও বড় হয়ে দেখা দেয়। বেশির ভাগ মহিলাই বলবেন, ঋতুস্রাবের ওই চার থেকে পাঁচ দিন তাঁদের প্রস্রাবের জায়গায় জ্বালা বা যন্ত্রণা হয়। হালকা জ্বরও আসে অনেকের। সেই সঙ্গেই তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা হয়।
ঋতুস্রাবের সময়ে কেন মূত্রনালির সংক্রমণ দেখা দেয়?
এই সময়টাতে মেয়েদের শরীরে হরমোনের তারতম্য ঘটে। প্রস্রাবের জায়গায় পিএইচ মাত্রারও বদল হয়। যদি পরিচ্ছন্নতা না মানা হয়, তা হলে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হয় খুব তাড়াতাড়ি। এখনও প্রত্যন্ত এলাকায় অনেক মহিলাই ঋতুস্রাবের সময়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না। অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করেন। তার থেকে সহজেই ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হয়। মহিলাদের মলদ্বার ও যৌনাঙ্গের মধ্যেও দূরত্ব খুব কম। তাই মলদ্বার থেকে ব্যাক্টেরিয়া খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে যেতে পারে মূত্রনালিতে। যে কারণে ঠিকমতো পরিচ্ছন্নতা মেনে না চললে মূত্রনালিতে ব্যাক্টেরিয়ার বাড়বাড়ন্ত হয়। খুব দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ জন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার মধ্যে এক জন এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তলপেটে ব্যথা, বার বার প্রস্রাব পাওয়া, প্রস্রাব করার সময়ে জ্বালা, সেই সঙ্গে শীত শীত ভাব— মূত্রনালির সংক্রমণের প্রাথমিক উপসর্গ। আর ঋতুস্রাবের সময়ে সংক্রমণ হলে, পেটের যন্ত্রণা আরও বাড়ে। অতিরিক্ত রক্তপাতও হতে পারে।
সুরক্ষিত থাকতে কী কী করবেন?
মূত্রনালিতে সংক্রমণ হলে বেশি করে জল খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এই সময় মহিলাদের ক্র্যানবেরি জুস খাওয়ার পরামর্শ দেন অনেক চিকিৎসকই। তবে বাজারচলতি ক্র্যানবেরি জুসে চিনির মাত্রা বেশি থাকে। তাই বাড়িতেই বানিয়ে নেওয়া ভাল। যদি তাজা ফল না পাওয়া যায়, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ক্র্যানবেরি সমৃদ্ধ সিরাপ বা ট্যাবলেট খেতে পারেন।
এই সময়ে প্রোবায়োটিক জাতীয় খাদ্য বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত। এই ধরনের খাবার ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়। দই প্রোবায়োটিকের ভাল উৎস। দই খেলেও উপকার পেতে পারেন। বাটারমিল্কও খেতে পারেন। এতেও প্রোবায়োটিক থাকে ভাল পরিমাণে। টক দই দিয়ে লস্যি বা ঘোল বানিয়েও খাওয়া যায়। কয়েক ধরনের চিজ়ে প্রোবায়োটিক থাকে। কেনার আগে তার উৎস ভাল করে দেখে নিতে হবে।
ভিটামিন সি আছে, এমন ফল বেশি খেতে হবে। ভিটামিন সি প্রস্রাবের সময় জ্বালা ভাব কমাতে সাহায্য করে। খাদ্যতালিকায় মুসাম্বি, কমলালেবু, কিউয়ি, ব্রকোলি, পেঁপে, স্ট্রবেরি অবশ্যই রাখুন।
জল কম খেলে মূত্রনালিতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তা ছাড়া খুব চাপা অন্তর্বাস বা টাইট জিন্স পরলে, অপরিচ্ছন্ন থাকলে, কৃমির কারণে, দীর্ঘ ক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখলেও মূত্রনালিতে সংক্রমণ হতে পারে। অনেক সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলেও সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই সংক্রমণ হলে ফেলে না রেখে অতি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, মূত্রনালিতে সংক্রমণ বার বার হতে থাকলে তার থেকে কিডনির অসুখও দেখা দিতে পারে। তাই সাবধান থাকতেই হবে।