প্লাস্টিকের বোতলে জল খেলে কী কী রোগ হতে পারে। ছবি: ফ্রিপিক।
প্লাস্টিকের বোতলভর্তি জলে গুঁড়ো প্লাস্টিকের কণা মিশে থাকে এমন তথ্য আগেই দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, প্লাস্টিকের বোতল থেকে জল খেলে সেই প্লাস্টিকের কণাগুলি শরীরে ঢুকে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। ক্ষতিকর সেইসব উপাদান মানুষের শরীরের জন্য বিষ। দিনের পর দিন প্লাস্টিকের কণা শরীরে ঢুকে রক্তে মিশতে থাকলে, রক্তচাপের হেরফের হতে বাধ্য। শরীরে টক্সিন বা দূষিত পদার্থের মাত্রাও বহুগুণে বেড়ে যাবে। এর প্রভাব পড়তে পারে হার্টেও।
‘মাইক্রোপ্লাস্টিক’ নামে একটি বিজ্ঞানপত্রিকায় প্লাস্টিকের বোতলের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে। অস্ট্রিয়ার একদল বিজ্ঞানী তাঁদের গবেষণায় জানিয়েছেন, প্লাস্টিকের বোতল থেকে নিয়মিত জল খেলে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম প্লাস্টিকের কণা রক্তে জমতে শুরু করে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা প্রতিদিন প্লাস্টিকের বোতল থেকে জল পান করেন অথবা প্লাস্টিকের কাপে চা, কফি ইত্যাদি খান, তাঁদের রক্তে সপ্তাহে ৫ গ্রামের মতো প্লাস্টিকের কণা জমা হয়। এই কণাগুলি আকারে ৫ মিলিমিটারেরও কম। এদের বলা হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক। গবেষণা বলছে, এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের থেকেও সূক্ষ্ম ন্যানোপ্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে বোতলের জলে। এদের দৈর্ঘ্য ১ থেকে ৫০০০ মাইক্রোমিটারের মতো। মানুষের মাথার চুলের চেয়েও সূক্ষ্ম। প্লাস্টিকের বোতলের জলে এই সূক্ষ্ম প্লাস্টিকের কণাগুলিই মিশে থাকে।
বাজারে যে জলের বোতলে পানীয় জল বিক্রি করা হয়, তার অধিকাংশই এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকে তৈরি। এই ধরনের বোতলে দিনের-পর-দিন জল পান করলে ক্যানসারের আশঙ্কাও বাড়ে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, প্লাস্টিকের বোতল তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ‘বিসফেনল এ’ বা ‘বিপিএ’-সহ একাধিক উপাদান, যা বেশিমাত্রায় শরীরে ঢুকলে রক্তচাপের হেরফের তো হবেই, হরমোনের ভারসাম্যও বিগড়ে যাবে। এমনকি দেখা গিয়েছে, এইসব দূষিত প্লাস্টিকের কণা শরীরে ইনসুলিনের ক্ষরণে প্রভাব ফেলে। যা পরবর্তী সময়ে ডায়াবিটিসের কারণ হয়ে উঠতে পারে। কিডনির দুরারোগ্য রোগও হানা দিতে পারে।
মাইক্রোপ্লাস্টিক মানুষের প্রজনন ক্ষমতার উপরেও প্রভাব ফেলে। অধিক মাত্রায় প্লাস্টিক-কণা রক্তে মিশলে পুরুষদের শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যেতে পারে। মহিলাদেরও ইস্ট্রোজেন হরমোনের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।