প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহিত
পলিসিস্টিক ওয়াভিয়ান সিন্ড্রোম বা ডিজিস যাকে আমারা পিসিওডি বা পিসিওএস’এর নামে চিনি, তা মূলত মেয়েদের হরমোনের অসুখ। ভারতে এবং বিশ্বজুড়ে এই রোগ এখন ছেয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও এই নিয়ে রয়েছে নানা রকম বিভ্রান্তি। তাই ‘আনন্দবাজার অনলাইন’ আপনাদের কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইল স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে।
প্রশ্ন: পিসিওএস রোগটা আসলে কী?
উত্তর: পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোমে মেয়েদের ডিম্বাশয় বেশি পরিমাণে অ্যান্ড্রোজেন তৈরি করে, যা মূলত ছেলেদের হরমোন। মেয়েদের শরীরে স্বাভাবিক অবস্থায় এই হরমোন খুব কম থাকে। কিন্তু পিসিওএসে’এর ক্ষেত্রে তা পরিমাণে বেশি তৈরি হয়।
ডিম্বাণু তৈরি হওয়ার জন্য যে হরমোনের প্রয়োজন সেটা পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলে, ডিম্বাণু তৈরি করতে পারে না মেয়েদের শরীর। তখনই ডিম্বাসয়ের বাইরে ছোট ছোট অনেকগুলো সিস্ট তৈরি হয়ে একটা স্তর পড়ে যায়। সেই থেকেই এই রোগের নাম।
প্রশ্ন: কেন দেখা যায় এই রোগ?
উত্তর: যদিও সঠিক কারণ অজানা, তা-ও দেখা গিয়েছে এটা মূলত জীবনযাপনের কিছু দোষে হচ্ছে। শরীরে ইনসুলিন ঠিক মতো কাজ না করলে অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায়। তখনই এই রোগ হতে পারে। ওবেসিটি থাকলে শরীরের ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। তার ফলে এই রোগ আরও গুরুতর হয়ে যায়। শেষ কয়েক দশকে এই রোগ খুব বেশি বেড়ে গিয়েছে। মনে করা হয় আগে নানা রকম বাড়ির কাজে মেয়েদের পরিশ্রম বেশি হতো। কিন্তু এখন জীবনযাপন অন্য রকম হয়ে গিয়েছে। শারীরিক পরিশ্রম কম হয়। এক জায়গায় বসে থাকার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। সেই থেকেই এই ধরনের হরমোনের গোলমাল দেখা যাচ্ছে।
প্রশ্ন: উপসর্গ কী?
উত্তর: শরীরে ইনসুলিন ঠিক করে কাজ করে না, নিয়মিত ঋতুস্রাব হয় না, ওজন বাড়ার প্রবণতা, চুল পড়া, অ্যাকনের মতো ত্বকের সমস্যা, গর্ভধারণে সমস্যা— নানা রকম উপসর্গ হতে পারে। তবে সকলের সব উপসর্গ থাকবে না।
প্রশ্ন: কী ভাবে চিকিৎসা করা হয়?
উত্তর: ডিম্বাণু তৈরির জন্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয় পিসিওএস’এর রোগীদের। সেটা নানা রকম উপসর্গের সঙ্গে লড়তে উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধও দেওয়া হয়। ওষুধের সাহায্যে ঋতুস্রাব নিয়মিত করা সম্ভব। তবে ওষুধ এই রোগের আসল চিকিৎসা নয়। জীবনযাপনে বদল আনতে পারলেই এই রোগ দূর হবে।
প্রত্যেকদিন ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা শরীরচর্চা করা প্রয়োজন। হাঁটা, অন্য কোনও ব্যায়াম বা যোগাসন— যে কোনও ধরনের শারীরিক পরিশ্রম হতে পারে। সঙ্গে খাওয়াদাওয়ায় বিশেষ নজর দিতে হবে। কার্বোহাইড্রেট কম করতে হবে। বেশি করে শাক-সব্জি খেতে হবে। জাঙ্ক ফুড, ভাজাভুজি, বাইরের খাবার যতটা সম্ভব কম করতে হবে। বাজারচলতি ঠান্ডা পানীয়, প্যাকেটের ফলের রস চলবে না। ডায়েটের সাহায্যে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক করতে পারলেই নিয়মিত ঋতুস্রাব হবে। এবং কোনও ওষুধ ছাড়াই এই রোগ সেরে যাবে।