জানেন কি এ শহরে ওজন কমানোর খরচ কেমন? ছবি: সংগৃহীত।
পুজো আসতে আর মাস দুয়েক বাকি। বছরের আর পাঁচটা সময় ফিটনেস নিয়ে কিংবা ওজন ঝরানো নিয়ে খুব বেশি সচেতন না হলেও পুজোর আগে কিন্তু অনেকেই ওজন নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করেন। পুজোর ওই ৫টি দিন ভিড়ের মাঝে নজর কাড়তে চাইলে প্রস্তুতি কিন্তু শুরু করে দিতে হবে এখন থেকেই।
কেউ হালফ্যাশনের পোশাকে ফিট দেখানোর জন্য ওজন ঝরাতে চাইছেন, কেউ আবার বাড়তি ভুঁড়ি ঢাকতে ঠিক পুজোর আগে ব্যায়াম করতে উদ্যোগী হচ্ছেন। তবে ওজন ঝরানোও কিন্তু খরচসাপেক্ষ। চটজলদি মেদ ঝরাতে চাইলে কোন খাতে কেমন খরচ হতে পারে, রইল তার হিসাব।
জিম
চটজলদি ওজন ঝরাতে জিমের জুড়ি নেই। পুজোর আগে জিমগুলিতে লোকজনের ভিড় সেই কারণেই চোখে পড়ে। জিমে ভরতি হলে কেমন খরচ? উত্তর কলকাতার একটি জিমের কর্ণধার রাজা চৌধুরী বলেন, ‘‘কোন জিম কেমন পরিষেবা দিচ্ছে, তার উপরেই কিন্তু খরচটা নির্ভর করে। যে জিম যত আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সুযোগ গ্রাহকদের দিতে পারে, সেই জিমের খরচ ততই বেশি।’’ একটি ভাল মানের জিমে এক মাসের মেম্বারশিপ হয় ১,৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। এর বাইরে প্রতি মাসে ১,৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকা খরচ করলে আপনার চাহিদা বুঝে ট্রেনার ব্যায়ামের তালিকা তৈরি করে দেবেন। তাঁর নজরদারিতে সেই সব শরীরচর্চা করেই ঝরতে পারে ওজন। তবে জিমে ‘পার্সোনাল ট্রেনারের’ সুবিধাও থাকে। সেই ক্ষেত্রে এক জন প্রশিক্ষক সব সময় আপনার সঙ্গে থাকবেন, তাঁর পরামর্শ মতো শরীরচর্চা করতে হবে। তিনি প্রতিনিয়ত আপনার ভুলগুলি ধরিয়ে দেবে এবং কী করলে আরও দ্রুত ওজন ঝরানো সম্ভব সেই পরামর্শও আপনাকে দেবেন। ‘পার্সোনাল ট্রেনারের’ অধীনে শরীরচর্চা করতে হলে মোটামুটি খরচ হতে পারে মাসে ৫,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকা।
ডায়েট
সমাজমাধ্যমের উপর নির্ভর করে কড়া ডায়েট শুরু করে ওজন ঝরিয়ে ফেলেন অনেকেই। তবে এ ক্ষেত্রে শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়, ফলে শরীরের বড় ক্ষতি হয়ে যায়। তাই সঠিক পদ্ধতিতে ওজন ঝরাতে চাইলে পুষ্টিবিদের কাছ থেকে ডায়েট চার্ট বানিয়ে ফেলাই শ্রেয়। এক জন পুষ্টিবিদের কাছে গিয়ে ডায়েট চার্ট বানাতে হলে আপনার খরচ হতে পারে ১,২০০ থেকে ২,০০০ টাকা। তিনি আপনাকে কী ধরনের ডায়েট চার্ট দিচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে বাকি খরচটা। অনেক পুষ্টিবিদ আছেন যাঁরা বিভিন্ন রকম সাপ্লিমেন্ট খেতে বলেন। সেই সব সাপ্লিমেন্ট কিন্তু বেশ দামি হয়। খরচ কমাতে চাইলে পুষ্টিবিদকে সরাসরি জানিয়ে দিন সাপ্লিমেন্ট ছাড়াই ডায়েট চার্ট বানিয়ে দিতে। সাধারণ খাবার ভাত, রুটি, মাছ, মাংস, দুধ খেয়েই কী ভাবে ওজন ঝরতে পারে সেই পরামর্শই নিন পুষ্টিবিদের কাছ থেকে।
জ়ুম্বা
অনেকেই আছেন যাঁরা জিমে গিয়ে ঘাম ঝরাতে ভালবাসেন না। জিমে না গিয়ে রোগা হতে চাইলে জ়ুম্বা ক্লাসে ভর্তি হতে পারেন। শহর জুড়ে একাধিক জায়গায় জ়ুম্বা ক্লাস রয়েছে। নাচ করার শখ থাকলে মেদ ঝরাতে জ়ুম্বার উপরেও ভরসা রাখতে পারেন। দ্রুতলয়ের গানের তালে শরীরের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি সঞ্চালন হয় জ়ুম্বায়, আর তাতেই ঝরে ওজন। হাতে এখনও ৫০ দিন বাকি, পুজোর আগে রোজ নিয়ম করে জ়ুম্বা করলে ওজন কমতে বাধ্য। নিয়ম করে এ ক্ষেত্রে নাচের বাধাধরা কোনও নিয়ম নেই, তাই এই সব ক্লাসে ভর্তি হতে চাইলে নাচে খুব বেশি দক্ষ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। জ়ুম্বা শিখতে হলে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিনের ক্লাসের জন্য মাসে খরচ হবে ১,৫০০ থেকে ২,৫০০ টাকা। তবে ওজন ঝরাতে হলে বাকি দিনগুলিতে বাড়িতেই গান চালিয়ে অভ্যাস করতে হবে।
সাঁতার
ওজন ঝরানোর জন্য সাঁতার কাটাও কিন্তু ভাল বিকল্প হতে পারে। সাঁতার কাটতে জানলে পুজোর আগে দু’মাসের জন্য একটি সুইমিং ক্লাবে মেম্বারশিপ নিয়ে নিতে পারেন। শহরে একাধিক জায়গায় সুইমিং ক্লাব রয়েছে। তবে ক্লাবগুলির মেম্বারশিপ একটু খরচসাপেক্ষ। ভাল মানের সুইমিং ক্লাব হলে সারা বছরের জন্য মেম্বারশিপ পিছু ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা খরচ হতে পারে। আর তা না চাইলে যে কোনও সুইমিং সেন্টারেও ভর্তি হয়েও নিয়ম করে অভ্যাস করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দু’ মাসের জন্য ১,০০০ টাকা মতো খরচ করলেই হবে।
যোগাসন
ওজন ঝরানোর জন্য যোগাসনের উপরেও নির্ভর করা যায়। কেবল অফলাইনেই নয়, ইচ্ছে করলে এখন অনলাইনেও যোগাসন অভ্যাস করতে পারেন। ইচ্ছে করলে কোনও যোগ ইনস্টিটিউটেও ভরতি হতে পারেন। সপ্তাহে পাঁচ দিনের ক্লাসের খরচ পড়ে ১,২০০ থেকে ১,৫০০ টাকা। এ ক্ষেত্রেও আপনি ‘পার্সোনাল ট্রেনিং’ নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ২,৫০০ টাকা থেকে ৩,০০০ টাকা মতো খরচ হতে পারে। ‘পার্সোনাল ট্রেনিং’ করলে কোন কোন যোগাসন করলে আপনার ওজন চটজলদি ঝরতে পারে, সেই পরামর্শ ভাল ভাবে পেতে পারেন আপনি।