ভাত খেলে বাড়ে মেদ? ছবি: সংগৃহীত।
‘মাছে-ভাতে’ বাঙালিকে যদি ভাত খাওয়া ছেড়ে দিতে বলেন, তা হলে চলবে কী করে? পরিমাণে যদি একটু রাশ টানা যায়, তা হলে? শাক, ভাজা, ডাল, চচ্চড়ি, ঝাল-ঝোল, অম্বল— ভাত ছাড়া অচল! কম খেলে কি চলে? তবে ভাত বেশি খেলে যে মেদ বাড়ে, সে কথা হয়তো অনেকেই জানেন। কিন্তু তা আদৌ সত্যি কি না, তা জানেন কি?
প্রথমত, ভাতের সঙ্গে মোটা হওয়ার সরাসরি কোনও যোগ নেই। তবে রক্তে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে ভাতের ভূমিকা রয়েছে। ‘ব্রিটিশ জার্নাল অফ নিউট্রিশন’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বেশি ভাত খেলে ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে। যা পরোক্ষ ভাবে শরীরে ফ্যাট জমার পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে পেট এবং কোমরের অংশে। তবে ব্রাউন রাইস, ঢেঁকি ছাঁটা চাল থেকে তৈরি ভাত খেলে এই ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ, এই ধরনের ভাতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম।
এ বার আসা যাক, ক্যালোরির প্রসঙ্গে। ভাতে ক্যালেরির পরিমাণ এমনিতেই বেশি। তাই অতিরিক্ত ভাত খেলে মোটা হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। ‘অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশন মেটাবলিজ়ম’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ভাত এমনিতেই উচ্চ ক্যালোরি-যুক্ত একটি খাবার। ক্যালোরির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারলে মেদ জমার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।
ভাতে ফাইবার নেই বললেই চলে। পুষ্টিগুণ বিচার করলে তাই ভাতের স্থান বেশ পিছনের দিকে। যে হেতু ভাতে ফাইবার নেই, তাই অল্প খেলে পেট ভর্তি হয় না। সে ক্ষেত্রে ইচ্ছে না থাকলেও বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে ব্রাউন, রেড বা ব্ল্যাক রাইসে যে হেতু ফাইবার থাকে, তাই সাদা ভাতের তুলনায় এই ধরনের চালের পুষ্টিগুণ বেশি।
ভাত খেয়েও বাড়বে না ওজন, কৌশল জানা আছে কি?
পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ‘পোর্শন কন্ট্রোল’ করলে ভাত খেয়েও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সহজ ভাষায় যাকে বলে মেপে খাওয়া। অর্থাৎ, ভাতের পরিমাণ কমিয়ে দিলেই অনেকটা সমস্যা কমে যাবে। অনেকেই সাদা ভাতের বদলে ডায়েট করার সময়ে ব্রাউন রাইস খাওয়া শুরু করেন।
আবার সে সব না করে একটা সহজ হিসেব মেনে চলা যেতে পারে। ধরুন, আপনি রোজ দু’মুঠো ভাত খেতেন। তার বদলে এখন থেকে রোজ এক মুঠো ভাত খান। তার সঙ্গে বাকি ডাল-তরকারির পরিমাণ একটু বাড়িয়ে দিন। তা হলেই অনেক উপকার পাবেন। ভাতের সঙ্গে যদি বেশি পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন, তা হলে ওজন কমাতে আরও সুবিধা হবে। স্যালাডে ভরপুর মাত্রায় ফাইবার থাকে। তাই ভাতের সঙ্গে এক বাটি স্যালাড খেতেই পারেন।
ভাত সেদ্ধ করে ফ্যান ফেলে দেবেন। প্রেশার কুকারে রান্না করা ভাত খেলে তাতে স্টার্চের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। এই ভাত নিয়মিত খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই খোলা পাত্রে ভাত রান্না করাই ভাল। ভাজা ভাত, ক্রিম বা চিজ় দিয়ে রান্না করা ভাত এড়িয়ে চলুন।