ঘন ঘন অ্যাসিডিটির প্রবণতা হলে কী করবেন? ছবি: সংগৃহীত।
উৎসব-অনুষ্ঠান উপলক্ষে বেশ ক’টা দিন তেলমশলা দেওয়া খাবার খাওয়া হয়েছে। সময়েরও ঠিক-ঠিকানা ছিল না। তাই পেটটা কিছু দিন ধরেই ভোগাচ্ছে। গ্যাস, অম্বল তো লেগেই থাকে। তবে, এ বার নতুন এক উপদ্রব দেখা দিয়েছে। খাবার খাওয়ার কিছু ক্ষণ পর মনে হচ্ছে পেটের ভিতর থেকে সবটা যেন উপর দিকে উঠে আসতে চাইছে। সব সময় যে বমি হচ্ছে তা-ও নয়। যা-ই খান না কেন, মুখের ভিতরটা তেঁতো হয়ে রয়েছে। কখনও আবার টক টকও লাগছে। পেটে খুব মোচড় দিচ্ছে না। কিন্তু সারা ক্ষণই একটা অস্বস্তি হচ্ছে। প্রথম দিকে এই ধরনের উপসর্গ দেখে অ্যাসিডিটি মনে হয়েছিল। সপ্তাহ দুয়েক হজমের ওষুধ খাওয়ার পরেও সমস্যা নির্মূল হয়নি। চিকিৎসকদের মতে, বুক জ্বালা, মুখে টক ভাব বা চোঁয়া ঢেকুরের কিন্তু ‘গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ়-এর লক্ষণ হতে পারে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, যখন পাকস্থলীর খাদ্যবস্তু মুখগহ্বর এবং পাকস্থলীর সংযোগকারী খাদ্যনালীর মধ্য দিয়ে উল্টো দিকে প্রবাহিত হয়, তখন এই সমস্যা দেখা যায়। এর ফলে জ্বালার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এই অংশের পেশির বলয়কে বিজ্ঞানের ভাষায় ‘লোয়ার ইসোফেজিয়াল স্ফিঙ্কটার’ বা ‘এলইএস’ বলা হয়। এটি সাধারণত বন্ধ থাকে। শুধুমাত্র খাদ্যবস্তু গলাধঃকরণ করার সময়েই এই পেশি শিথিল হয় এবং খুলে যায়। ফলে খাবার প্রবেশ করতে পারে খাদ্যনালীতে। গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স রোগে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে এটি খাবার খাওয়ার সময় ছাড়া অন্যান্য সময়ও খুলে যায়। ফলে পাকস্থলী থেকে খাদ্যবস্তু এবং পাকরসে উপস্থিত বিভিন্ন অ্যাসিড খাদ্যনালীর উপরের দিকে উঠে আসতে চায়। তেলমশলা দেওয়া ভারী খাবার খাওয়ার পর শুয়ে পড়লেও অনেক সময়ে এই সমস্যা দেখা দেয়। তবে অনেক সময়ে হাইটাল হার্নিয়ার কারণেও জিইআরডি হতে পারে।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ‘জিইআরডি’-র লক্ষণগুলো ঠিক কেমন?
১) অম্বল হলে গলা-বুক জ্বালা করে। তবে ‘জিইআরডি’ হলে এই জ্বালা ভাব শুরু হয় পাকস্থলীতে। তা ক্রমশ গলা, বুক পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়।
২) কষা বা তেঁতো স্বাদের কিছু না খেলেও সারা ক্ষণ মুখের ভিতর তিক্ত বা টক হয়ে থাকে।
৩) খাবার খাওয়ার কিছু ক্ষণ পর তা আবার খাদ্যনালী দিয়ে উপরের দিকে উঠে আসতে পারে।
শিশুরা ‘জিইআরডি’তে আক্রান্ত হল কি না বুঝবেন কী করে?
চিকিৎসকেরা বলছেন, খেতে খেতে বমি করা শিশুদের ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। তবে তা যদি নিয়মিত হতে থাকে, সে ক্ষেত্রে তা ‘জিইআরডি’র লক্ষণ বলেই ধরে নিতে হবে। এ ছাড়া খাবার বিষয়ে অনীহা, গিলতে না পারা, বার বার হেঁচকি তোলা, অনিদ্রার মতো সমস্যাও কিন্তু এই রোগের লক্ষণ হতে পারে।