তরজা শুরু নুসরত ও নিখিলের গ্রাফিক- সন্দীপন রুইদাস
৬ মাসের ব্যবধান। মুখোমুখি হন না তাঁরা। নুসরত জাহান, নিখিল জৈন। এক সময়ে যাঁদের ইনস্টাগ্রাম ভরে থাকত ‘দাম্পত্য’-এর প্রতি মুহূর্তের ছবিতে। সরাসরি তরজায় নামলেন অভিনেত্রী এবং তাঁর প্রাক্তন ‘সহবাস সঙ্গী’। নিখিল আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানিয়েছিলেন, ‘‘যে দিন জানলাম, নুসরত আমার সঙ্গে থাকতে চায় না, অন্য কারও সঙ্গে থাকতে চায়, সে দিনই দেওয়ানি মামলা দায়ের করেছি আমি। যেহেতু ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন হয়নি তাই অ্যানালমেন্টের মাধ্যমে আলাদা হব।’’ আগামী জুলাই মাসে আদালতে এই মামলার শুনানি বলে জানিয়েছিলেন নিখিল। এই প্রসঙ্গে নুসরত বললেন, ‘আমি আর নিখিল সহবাস করেছি। আইনের চোখে এটা বিয়েই নয়। ফলে বিচ্ছেদের প্রশ্নই ওঠে না’। এর মাধ্যমে অভিনেত্রী ও সাংসদ বুঝিয়ে দিলেন, আদালতে গিয়ে আলাদা করে বৈবাহিক সম্পর্ক ছেদ করার নিয়ম পালনের প্রয়োজন অনুভব করছেন না তিনি।
আনন্দবাজার ডিজিটালকে নিখিল জানিয়েছিলেন, নুসরতের বোন নুজহতের পড়াশোনার খরচ অনেক সময়েই তাঁকে বহন করতে হয়েছে। এমনকি নুসরতের পরিবারকে নিজের পরিবার মনে করে অনেক সাহায্য করেছেন নিখিল। এর পাশাপাশি তিনি বলেছিলেন, ‘‘নুসরত বহু দিন ধরে আমার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছে।’’ নিখিলের এই বক্তব্যকে সরাসরি নস্যাৎ করে দিয়ে নুসরত জানিয়েছেন, ‘আমি বরাবর আমার বোনের পড়াশোনার এবং পরিবারের সমস্ত খরচ একা হাতে বহন করেছি। যে ব্যক্তির সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্কই নেই, কেনই বা তাঁর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে যাব আমি? অভিযোগ তুললে প্রমাণ দিতে হবে’। আর্থিক লেনদেনের প্রসঙ্গে নুসরত আরও জানান, তাঁর সমস্ত পারিবারিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য নিখিলের পরামর্শে তিনি নিখিলের দায়িত্বেই রেখেছিলেন। তাঁর পরিবারের কেউই জানতেন না, নিখিল সেই অ্যাকাউন্টগুলি নিয়ে কী করছেন। ব্যাঙ্ক তাঁদের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে কোনও নির্দেশ দিলে, সে তথ্য তাঁদের কাছে পৌঁছোত না। নুসরত জানান, তাঁর অনুমতি ছাড়াই তাঁর বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে রাখা টাকাপয়সা বেআইনি ভাবে ব্যবহার করতেন নিখিল। এই বিষয়ে ব্যাঙ্কের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে তাঁর টাকা অপব্যবহারের সমস্ত প্রমাণ খুব তাড়াতাড়ি সামনে আনবেন বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী।
নুসরত প্রশ্ন তুলেছেন, নিজেকে ‘ধনী’ বলে জাহির করা ব্যক্তি কেন মধ্য রাতে নুসরতের অ্যাকাউন্ট থেকে বেআইনি ভাবে টাকা তোলে? কারও নাম না করে নুসরত বললেন, ‘যে মানুষ দাবি করছেন ‘ধনী’ বলে আমি তাঁকে ব্যবহার করেছি, আমাদের বিচ্ছেদের পরেও তাঁকে কেন লুকিয়ে আমার টাকা ব্যবহার করতে হয়?’ নুসরত যে এই বিষয়ে সরাসরি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাবেন, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিবৃতিতে।
নুসরতের বিবৃতি থেকে জানা গিয়েছে, অভিনেত্রীর সমস্ত গয়নাগাটি, ব্যক্তিগত সম্পত্তি এখনও ‘তাঁদের’ কাছে আছে। নাম না করেই নিখিল ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন তিনি। নুসরতকে তাঁর বাবা মা, বন্ধুবান্ধব যা যা উপহার দিয়েছিলেন, সেগুলি নিজের কাছে নিয়ে আসতে পারেননি এখনও।
নিখিলের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানিয়েছিলেন, বেশ অনেক দিন আগে নুসরত গোয়ায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। নিখিলই বিমানের টিকিট ও রিসর্ট বুক করে দিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে নুসরত বললেন, ‘আমি কোথাও বেড়াতে বা পেশাগত কারণে গেলে, তার খরচ নিজেই বহন করি। কেউ এক জন দাবি করেছেন, আমার ভ্রমণের খরচ অন্য কেউ দেয়, সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যে’।
‘ধনী’ বলেই এক জন একা মহিলাকে যেমন খুশি বলা যায়, তাঁকে ছোট করা যায়, এ রকম অধিকার কেউ দেয়নি কাউকে। নুসরত জানিয়েছেন, তিনি যথেষ্ট পরিশ্রম করে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন। নুসরতের কথায়, ‘এই সাফল্য সম্পূর্ণ আমার নিজের। এই সাফল্যের আলোয় আমি কাউকে আলোকিত হতে দেব না’।
অভিনেত্রীর দাবি, এর আগে তিনি কোনও দিন নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে সামনে আনেননি। এমন কোনও ব্যক্তিকে নিয়ে তিনি কথাও বলতে চান না, যে তাঁর জীবনের অংশই নয়। তাঁর বিশ্বাস, যাঁরা ‘সাধারণ মানুষ’, তাঁরা এমন কোনও বিষয় নিয়ে চর্চা করেন না, যেখানে তাঁরা জড়িত নন।
কোনও কিছুই নজর এড়িয়ে যায়নি নুসরতের। নিখিল আনন্দবাজার ডিজিটালকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়ে নিজেকে ‘সাধারণ মানুষ’ বলে দাবি করেছিলেন। সেই সূত্র টেনে এনে নুসরত বললেন, তাঁকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপমান করে যে ‘সাধারণ মানুষ’ নিজে ‘নায়ক’ হয়ে উঠতে চাইছে, তাঁকে যেন সংবাদমাধ্যম আর গুরুত্ব না দেয়।
নুসরতের এই বিবৃতি প্রসঙ্গে আনন্দবাজার ডিজিটাল নিখিলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। নিখিল বললেন, ‘‘আমি যা বলার আদালতে গিয়ে বলব। নুসরতের এই বিবৃতি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আর একটা কথাও বলব না।’’