সোহমের আচরণ নিয়ে সরব টলিপাড়া। নিজস্ব চিত্র।
চণ্ডীগড় বিমানবন্দরের পর নিউটাউনের রেস্তরাঁ। আবার চড়। তবে পাত্র-পাত্রী আলাদা। ঘটনাক্রমেও রয়েছে পার্থক্য। গত বৃহস্পতিবার সদ্য নির্বাচিত সাংসদ তথা বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতকে প্রকাশ্যে চড় মেরেছিলেন সিআইএসএফ-এর এক মহিলা জওয়ান। শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতার নিউটাউনে এক রেস্তরাঁয় বিধায়ক, অভিনেতা সোহম চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল রেস্তরাঁ মালিককে মারধর করার।
যদিও তৃণমূল বিধায়ক সোহম দাবি করেছেন, শুটিং করতে গিয়ে রেস্তরাঁর মালিক এবং কর্মচারীর থেকে খারাপ ব্যবহার পেয়েছেন। শাসকদলের অন্যতম প্রধান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামেও নাকি কুৎসা করেন ওই রেস্তরাঁ মালিক। তখনই বচসা, হাতাহাতি হয়, জানিয়েছেন সোহম।
আনন্দবাজার অনলাইন পরপর ঘটে যাওয়া দু’টি ঘটনা পাশাপাশি রেখে প্রশ্ন তুলেছে, এই ধরনের চড় মারার ঘটনা কতটা যুক্তিযুক্ত? বিশেষত, তারকা বা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। সদ্য লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা বা অসহিষ্ণুতাই কি এই ধরনের কাণ্ডের নেপথ্যে? আরও কতটা সংযমের প্রয়োজন? এই প্রশ্নগুলো বাংলা বিনোদন দুনিয়ার মানুষদের কাছে রাখা হয়েছিল। কী বলছেন তাঁরা?
যাঁরা বলেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ‘অভিযাত্রিক’, ‘দেবী চৌধুরানী’র পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র। তাঁর কথায়, ‘‘সবার আগে দেখতে হবে, বিষয়টি উদ্দেশ্যে প্রণোদিত কিনা। অনেকেই উত্যক্ত করার অভিপ্রায় নিয়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। আমরা, মানে বিনোদন দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর, অনুভূতিশীল। অনেক সময় কাজে এতটাই ডুবে থাকি যে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফেলি।’‘ সোহমকে সমর্থন করে তিনি জানিয়েছেন, সে রকম যদি কিছু হয়ে থাকে তা হলে বিধায়ক-অভিনেতা যা করেছেন ঠিক করেছেন। শুভ্রজিৎ ওই জায়গায় থাকলে হয়তো একই কাজ করতেন। তাঁরও কথায়, ‘‘দিনের শেষে আমরাও রক্তমাংসের মানুষ। সব সময় নিজেদের এ ভাবে সামলানো যায় না।’‘
জাতীয় পুরস্কারজয়ী পোশাকশিল্পী সাবর্ণী দাসেরও কি একই মত? তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাফ জানান, ‘‘না কঙ্গনা, না সোহম— কাউকে চড় মারা একে বারেই সমর্থন করি না। তা সে বিশিষ্ট কেউ করুন বা সাধারণ।’‘ তাঁর যুক্তি, কঙ্গনার কথায় হয়তো ওই জওয়ান আহত হয়েছিলেন। এমন ক্ষেত্রে চট করে মাথাগরম হয়ে যায়, সেটাই স্বাভাবিক। তার পরেও মাথায় রাখতে হবে, জনসমক্ষে বা ‘পাবলিক প্লেস’-এ অনেক কিছু করা যায় না। তাই কঙ্গনাকে প্রচণ্ড অপছন্দ করলেও ওঁকে চড় মারার ঘটনা সাবর্ণী সমর্থন করছেন না। একই ভাবে, সোহমের ক্ষেত্রেও তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাগ হলেও তাকে বশে রাখাটাই প্রকৃত মনুষ্যত্ব। এটা প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে। যত বড় ঘটনাই ঘটে যাক। জনসমক্ষে গায়ে হাত তোলা নিন্দনীয়।’'
মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর প্রথম পরিচালিত ছবি ‘অথৈ’। নাট্য নির্দেশক, পরিচালক, অভিনেতা অর্ণ মুখোপাধ্যায় পুরো ঘটনা একটু অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বাইরে থেকে বলতেই পারি, সোহমের এ রকম করা উচিত হয়নি। ওঁর আরও সংযমের প্রয়োজন। এ ভাবে বোধহয় কোনও মতামত দেওয়া যায় না। আগে ওঁর জায়গায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি বুঝতে হবে।’‘ সেই জায়গা থেকে অর্ণর আরও দাবি, সমাজের বিশিষ্ট জনদের কাঁধে কেবল সংযমের দায়িত্ব— সেটা কিন্তু নয়। সংযমের প্রয়োজন উভয় পক্ষের। তা হলেই এই ধরনের অবাঞ্ছিত ঘটনা থেকে দূরে থাকা যায়। তিনি মনে করেন, এই মূহূর্তে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে সংযমের অভাব ঘটেছে। ক্রমশ, অধৈর্য, হিংসা মারাত্মক ভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সেই গল্প তিনি একাধিক বার তাঁর নাটকে তুলে ধরেছেন। এ বার পর্দায় দেখাবেন। শেক্সপিয়রের ‘ওথেলো’ অবলম্বনে তাঁর প্রথম ছবি ‘অথৈ’। আদি যুগ থেকে মানুষের মনে রাগ, দ্বেষ, হিংসার বাস। সেই পরম্পরা একুশ শতকেও অব্যাহত, সেই গল্পই বলবে তাঁর ছবি।
পরিচালক-প্রযোজক, ইমপার সভাপতি পিয়া সেনগুপ্ত। তিনি পুরো ঘটনা জেনেছেন আনন্দবাজার অনলাইনে প্রকাশিত খবর পড়ে। তিনি কি সোহমকেই সমর্থন করছেন? প্রশ্ন রাখতে তিনি জানিয়েছেন, গায়ে হাত তোলা তিনি সমর্থন করেন না। বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তিও দেখিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এমনিই কেউ দুমদাম গায়ে হাত তুলতে পারেন না। আমরা যাঁরা তথাকথিত পরিচিত মুখ তাঁরা তো আরও পারি না। পরিস্থিতি যা-ই হোক, আমাদেরও আরও সংযম প্রয়োজন।’’