Tomader Rani

মেগার চাহিদা কমেনি, রেটিং চার্টে নম্বর কমাচ্ছে পাইরেসি; দাবি ‘তোমাদের রানি’র অর্কপ্রভর

স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘তোমাদের রানি’তে নতুন টুইস্ট। রানির জীবনে ফিরছে দুর্জয়? ধারাবাহিকের সেট ভিজিটে আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৪ ২১:০৪
Image Of Mega Tomader Rani

ধারাবাহিক ‘তোমাদের রানি’র সেট থেকে। নিজস্ব চিত্র।

মাথার উপর তখন গনগনে সূর্য। বেলা গড়িয়ে যদিও বিকেল বিকেল। টলিগঞ্জের ১৩ নম্বর স্টুডিয়োর ‘গাছের পাতায় রোদের ঝিকিমিকি’। তার এলোমেলো আলপনা ‘রানি’ ওরফে অভিকা মালাকারের চোখেমুখে। ‘তোমাদের রানি’ ধারাবাহিকের শুটিং চলছে জোরকদমে। ধারাবাহিক মানেই প্রতি সপ্তাহে, প্রতি পর্বে চমক। নায়িকার জীবনে অনেক দিন ধরে অনুপস্থিত নায়ক ডা. দুর্জয় সেনগুপ্ত ওরফে অর্কপ্রভ রায়। তাই নিয়ে অনুরাগীদের গোঁসা। দুর্জয়-রানি আর কত দিন আলাদা থাকবে? সামাজমাধ্যমে অনুযোগ তাঁদের। তার পরেই খবর, সমীকরণ নাকি বদলাচ্ছে। ফের এক হচ্ছেন নায়ক-নায়িকা? জানতে স্টুডিয়োয় হাজির আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

“রানি, এক বার মুখ তুলে তাকা...”

সামনে আলো কাটার জন্য সাদা বড় থার্মোকল। চারপাশে বড় বড় ক্যামেরা। রোদ-ছায়া গায়ে মেখে অভিকা দাঁড়িয়ে। চোখ তুলে একটু দূরে বাড়ির দিকে তাকাতে হবে। কিন্তু চোখেমুখে রোদ লাগতেই বেচারি চোখ কুঁচকে ফেলছেন! তখনই চিত্রগ্রাহকের আন্তরিক অনুরোধ, ‘‘রানি, এক বার মুখ তুলে তাকা...”। শট শেষ হতেই অভিকা আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি। পর্দার মেয়ে বড় হয়ে গিয়েছে। অভিনয় করতে করতে অভিকাও কি বাস্তবে বড় হয়ে গেলেন? এক বছরের যাত্রাপথ তো কম নয়! ছোট পর্দার ‘রানি’ ঠিক বড়দের মতো মুখ করে বললেন, ‘‘হ্যাঁ, বড় তো হয়েইছি। মেয়ে থেকে স্ত্রী হয়ে এখন মা। একটা ধারাবাহিকের এতগুলো স্তর আমায় এক মেয়ের জীবন দেখিয়ে দিল। ছোট বাচ্চা কোলে নেওয়া শিখে গিয়েছি। এখন তো মেয়ে বড় হয়ে গিয়েছে।”

পর্দায় রানির জীবন থেকে বিদায় নিয়েছে দুর্জয়। বাস্তবেও কি ধারাবাহিকের কারণে দেখাসাক্ষাৎ কম হচ্ছে? ‘‘আগের মতো প্রতি মুহূর্তে দেখাসাক্ষাৎ সত্যিই কমেছে। তা বলে মুখ দেখাদেখি বন্ধ, সেটা নয় কিন্তু। মেকআপ রুমে দেখা তো হয়ই।” বলতে বলতে ফের শটের ডাক। রানি চঞ্চল। পর্দায় দুর্জয় দারুণ দুষ্টু। প্রেম করে বিয়ে করে বৌকে ডিভোর্স দিয়ে ফের নতুন সম্পর্কে। বাস্তবে এমন হলে কী করতেন অভিকা? একটু চুপ। তার পর জানালেন, তিনি ভালবাসায় বিশ্বাসী। তাই কাউকে মন থেকে ভালবাসলে হাত ছেড়ে দেবেন না। কোথাও চলেও যাবেন না। চুপচাপ অপেক্ষা করবেন। তাঁর বিশ্বাস, সঙ্গী নিজের ভুল বুঝে ঠিক ফিরবেন।

Image Of Tomader Rani Set Visit.

তোমাদের রানির সেট ভিজিট। নিজস্ব চিত্র।

রোদ গড়িয়ে স্টুডিয়োর পাকা রাস্তায় লুটোপুটি। সেটে ডাক পড়েনি তখনও। আসল মায়ের কোল ঘেঁষে বসে রয়েছে রানির পর্দার মেয়ে দুনি ওরফে জ়ায়না ধর। পায়ে পায়ে তার কাছে যেতেই দেখা গেল, লক্ষ্মী হয়ে বসে থাকার জন্য প্রযোজনা সংস্থা থেকে একমুঠো মার্বেল গুলি দিয়েছে। তাই নিয়েই একরত্তি মহাখুশি। মুখোমুখি হতে সপাট জবাব, ‘‘আমার দুটো মা। বাড়ির মাম্মা খুব দুষ্টু। শুধু সব কাজে বাধা দেয়। এই মা ভাল। খেললে বকে না!’’ তার পরেই প্রসঙ্গ পাল্টে জানাল, স্কুলের বন্ধুরা নাকি ওকে পর্দায় দেখতে পেলে খুব খুশি। পরের দিন স্কুলে গেলে জানায় ওকে। কথা শেষ হওয়ার আগেই শুটিংয়ের ডাক। লাফাতে লাফাতে পর্দার মায়ের কাছে পৌঁছে গিয়েছে সে। জ়ায়নার বাস্তবের মা উপাসনা সে দিকে দেখতে দেখতে বললেন, ‘‘একা হাতে মেয়েকে মানুষ করছি। সিঙ্গল মাদার আমি। কত জন কত কথা বলেছে। বলেছে, ‘এখন থেকেই অভিনয়ে! মেয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।’ মা-বাবা সমানে পাশে থেকেছেন। এখন আত্মীয়রাও জ়ায়নাকে নিয়ে গর্ব করেন।”

“আমি বাবা বিয়েতেই নেই...”

তত ক্ষণে জ়ায়নাকে বুঝিয়ে, শান্ত করে অভিকা শট দিচ্ছেন। স্টুডিয়োর পিছন দিকে মেকআপ রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে নায়ক অর্কপ্রভ। একটু আগে শট দিয়ে এসেছেন। চোখে কালো চশমা। মাথায় ব্যান্ডেজ। বড় দুর্ঘটনায় সাময়িক দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে তাঁর অভিনীত চরিত্র দুর্জয়। নিজের হাতে চিকিৎসা করছে রানি! মুখোমুখি হতেই হাসিমুখে কুশল বিনিময়। সেই তো আবার রানির কাছে ফিরছে দুর্জয়? জবাবে জবরদস্ত হেঁয়ালি। বললেন, ‘‘ঠিক কী করতে চলেছে দুর্জয়? রানির কাছে ফিরছে? নতুন সম্পর্কে জড়াল? না কি পুরনো প্রেমের কাছে ফিরবে? আপনারাই খুঁজে বার করুন।”

বাস্তবে অর্কপ্রভ কী এতটাই... কথা ফুরনোর আগেই পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘চরিত্রহীন কি না জানতে চাইছেন তো? না না, আমি একে বারেই এ রকম নই। এ সব দেখলে বরং অস্বস্তি হয়। তাই ঠিক করেছি, বিয়েই করব না। প্রয়োজনে একত্রবাস করব। সেটাও প্রায় বিয়ের মতোই। না হলে একা জীবন কাটিয়ে দেব। কোনও ঝামেলায় জড়াব না।” সম্পর্কের সমস্যা থেকে বাঁচতেই এই পদক্ষেপ? না কি, অর্থনৈতিক টানাপড়েনের কারণে? এখন রেটিং চার্টের উপরে ধারাবাহিকের ভাগ্য নির্ভরশীল। ভাল নম্বর না পেলে এক মাসেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমন অনিশ্চয়তা নিয়ে সংসারী হওয়া যায়! সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিলেন অভিনেতা। অর্কপ্রভর সপাট জবাব, ‘‘ধারাবাহিকের জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি। দর্শক এখনও প্রত্যেকটা ধারাবাহিক দেখেন। তবে মাধ্যম বদলে গিয়েছে। ইউটিউব চ্যানেলে, মুঠোফোনে দেখে নেন। পাইরেসিও হচ্ছে দেদার। ফলে, রেটিং চার্টে নম্বর কমছে। লোকে ভুল ভাবছেন।”

Image Of Tomader Rani

রানি আর দুনি। নিজস্ব চিত্র।

কথা বলতে বলতে পায়ে পায়ে সেটের দিকে অর্কপ্রভ। অভিকার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই পর্দার বাবাকে জড়িয়ে ধরল দুনি। দু’হাত বাড়িয়ে দিতেই অর্কপ্রভ এক নিমেষে স্নেহময় পিতা! মেয়ের সঙ্গে খেলায় মাতলেন। মেয়েও বাবার গলা জড়িয়ে, কাঁধে মুখ গুঁজে আহ্লাদি! দুর্জয়কে দেখে কে বলবে, একটু আগে সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, ‘‘বিয়ে করবই না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement