একটি অনুষ্ঠানে (বাঁ দিকে) সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে উমা দাশগুপ্ত। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।
সকালেই খবরটা পেয়েছি। দিদি আর নেই। জানতাম, দিদি দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ রয়েছেন। কিন্তু, তার পর এ রকম একটা খবর! মনটা খারাপ হয়ে রয়েছে।
আজকে বেশি করে ‘পথের পাঁচালী’র শুটিংয়ের দিনগুলো মনে পড়ছে। আমার তখন মাত্র ৯ বছর বয়স। আর উমাদির ১৪ বছর। আমি তো শুটিংয়ের কিছুই বুঝতাম না। একসঙ্গে দু’জনে শুটিং করছি। গড়িয়ার বোড়ালে শুটিং। ট্রেন দেখতে যাওয়ার দৃশ্যের শুটিং হয়েছিল শক্তিগড়ের কাছে পালসিটে। আমাকে শুরু থেকে আগলে রাখতেন দিদি। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, খুনসুটি করতাম। আনন্দ করতাম। একেবারেই যেন ভাই-বোন। ছবির মতোই শুটিং ফ্লোরেও তিনি যেন আক্ষরিক অর্থেই আমার দিদির মতো হয়ে উঠেছিলেন।
তার পর আমাদেরও বয়স বেড়েছে। বিভিন্ন সময়ে একাধিক অনুষ্ঠানে একসঙ্গে গিয়েছি। মানুষ যে আমাদের এখনও মনে রেখেছেন, সেটা খুব ভাল লাগে। দিদির সঙ্গে শেষের দিকে আমার খুব বেশি দেখা হয়নি। সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে ‘পথের পাঁচালী’র সঙ্গে যুক্ত সকলকে নন্দনে সংবর্ধনা দেওয়া হল। ভেবেছিলাম, দিদির সঙ্গে দেখা হবে। কিন্তু দেখলাম, তিনি আসতে পারলেন না। জানতে পারলাম, শরীর খুবই খারাপ। আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। তার পর আর সেই ভাবে দেখা হয়নি।
স্মৃতি অনেক সময়েই দুঃখের এবং বেদনার হতে পারে। এ বারে সেটাই হল। একে একে ‘পথের পাঁচালী’র সকলেই চলে যাচ্ছেন। একদিন আমিও চলে যাব। দিদির প্রতি আমার শ্রদ্ধা। আরও কিছু দিন তিনি থাকলে ভাল হত। হয়তো আরও এক বার আমাদের দেখা হত। সেই সুযোগটা আর পেলাম না।
(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত।)