আবীর চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে বললেন লহমা ভট্টাচার্য, পায়েল সরকার, রাইমা সেন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
উচ্চতা ৬ ফুট ২ ইঞ্চি। মেদহীন, বেতের মতো ছিপছিপে। তীক্ষ্ণ নাক, মেধাবী দৃষ্টি, পাতলা ঠোঁটে চিলতে হাসি। আর গালের কাটা দাগ। অনুরাগীদের কথা অনুযায়ী, ওটাই নাকি তাঁর ‘বিউটি স্পট’! আবীর চট্টোপাধ্যায়। সোমবার ৪৪-এ পা দিলেন। কোনও অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলে তাঁকে ঘিরে মহিলাদের ঢল। পর্দায় তিনি ‘সোনাদা’ হয়েই আসুন বা ‘ব্যোমকেশ’, কিংবা সাম্প্রতিকতম পুলিশ অফিসার ‘সুমন্ত ঘোষাল’। তিনি পর্দায় মানেই প্রযোজক নিশ্চিন্ত, ছবি সফল হবেই। টলিউডের দাবি, তিনিই বাংলা বিনোদন দুনিয়ার ‘ব্লকবাস্টার হিরো’।
যাঁকে ঘিরে দর্শক থেকে বিনোদন মহলের এত অনুভূতি, সেই আবীরকে নিয়ে নায়িকারা কী বলছেন? জন্মদিনের সকালে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল রাইমা সেন, পায়েল সরকার, লহমা ভট্টাচার্যের সঙ্গে।
“যাবতীয় রোম্যান্টিসিজ়ম পর্দাতেই...”
আবীরের সঙ্গে একাধিক ছবি করেছেন রাইমা। তালিকায় ‘হৃদমাঝারে’, ‘মনচোরা’, ‘অ্যাবি সেন’, ‘বাস্তু - শাপ’, ‘২২ শে শ্রাবণ’, ‘দ্বিতীয় পুরুষ’ ইত্যাদি। কোনও ছবিতে তাঁর সঙ্গে নায়িকার রসায়ন। কোনও ছবিতে নিছক সহ-অভিনেত্রী। বাস্তবেও কি আবীর ততটাই রোম্যান্টিক? প্রশ্ন ছিল তাঁর কাছে। রাইমার জবাব, “আবীরকে আমি যে ভাবে চিনি তাতে সে নিপাট ভদ্রলোক। পর্দায় চূড়ান্ত রোম্যান্টিক। কিন্তু যাবতীয় রোম্যান্টিসিজ়ম পর্দাতেই। পর্দার বাইরে এ রকম কিছুই নেই। বলতে পারেন আমরা খুব ভাল বন্ধু।” সেই বন্ধুত্বে আড্ডা আছে, খুনসুটি আছে আর আছে সম্মান। উভয়েই উভয়কে খুব সম্মান করেন। রাইমার দাবি, বন্ধুত্বের কারণেই আবীরের সঙ্গে প্রত্যেকটা দৃশ্য এমনিতেই ভাল হয়ে যায়।
বিবাহিত নায়কের সঙ্গে প্রেমের দৃশ্যে অভিনয় সহজ না কঠিন? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলে বলেছেন, “বিশ্বাস করুন, অভিনয়ের সময় মাথায় থাকে না, নায়ক বিবাহিত না অবিবাহিত! কেবল একটাই লক্ষ্য, যেনতেনপ্রকারেণ ভাল অভিনয় করতে হবে।” রাইমার মতে, ভাল আদানপ্রদান থাকলে সেটা অভিনয়ের সময় কাজে লাগে। দৃশ্যটা ভাল হয়।
“গাড়ি কিনে আবীরকে ট্রিট দিলাম, নিজের বেলায় ভুলেই গেল!”
এমনই টক-মিষ্টি সম্পর্ক ‘বার্থডে বয়’ আর পায়েল সরকারের। নায়কের প্রশংসায় পঞ্চমুখ অভিনেত্রী। “খুব ভাল ছেলে। ভীষণ ঠান্ডা মাথার মানুষ। সেটে আমি রেগে গিয়েছি কিন্তু আবীরকে কখনও রাগতে দেখিনি। বরং মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে দেয়।” আবীরের সঙ্গে পায়েলেরও ছবির সংখ্যা নেহাত মন্দ নয়। তালিকায় ‘আষাঢ়ে গপ্পো’, ‘আগন্তুকের পরে’, ‘যমের রাজা দিল বর’, ‘ক্রস কানেকশন’, ‘বোঝে না সে বোঝে না’ ইত্যাদি। তিনিও প্রত্যেক ছবিতে নায়কের বিপরীতে এমন নয়। কিন্তু একাধিক কাজের সুবাদে স্বাভাবিক ভাবেই ভাল সম্পর্ক তাঁদের।
রোম্যান্টিসিজ়মের কথা উঠতেই পায়েলের দাবি, “ওর মতো সংসারী দুটো দেখিনি। আমরা কাজের দোহাই দিয়ে অনেক সময় পরিবারকে সময় দিই না। আবীর সেটা নয়। কাজ ফুরোলেই বাড়ির পথে আমাদের নায়ক।” তবে এক বার তাঁর সঙ্গে বেজায় দুষ্টুমি করেছিলেন আবীর। “নতুন গাড়ি কিনেছি। আবীরের আবদার, ‘খাওয়াতেই হবে, খাওয়া’, খাওয়ালাম এক দিন। ও খেতে ভালবাসে। বলুন, আমিও তো সেই ট্রিট ওর থেকে আশা করব?” পায়েলের আক্ষেপ, আবীর গাড়ি কেনার পরে নাকি ‘ট্রিট’ দেওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছেন!
“আবীরদার গালের ওই কাটা দাগ, মা পর্যন্ত মুগ্ধ...”
লহমা ভট্টাচার্য। আবীরের আপাতত একটিই ছবির নায়িকা। ‘বিয়ে বিভ্রাট’ ছবিতে অভিনয়ের আগেই নায়কের সঙ্গে আলাপ তাঁর। আবীরের বিপরীতে অভিনয় করতে হবে, শোনার পরে হাঁটু কেঁপেছিল? প্রশ্ন শুনে স্বীকার করলেন নায়িকা, “হ্যাঁ, একটু তো চাপে পড়েই গিয়েছিলাম। কিন্তু আবীরদা তো অন্য রকম। মুখ দেখেই সেটা টের পেয়ে যেত। তার পর হাসিঠাট্টায় পরিস্থিতি সহজ করে দিত। ফলে, ক্যামেরার সামনে ততটাও ভয় পেতাম না।” ক্যামেরার সামনে নিজেকে কী করে নিখুঁত উপস্থাপিত করতে হয়, লহমা শিখেছেন আবীরের থেকে। “আমি শটের আগে দুশ্চিন্তায় কাঁপছি, আবীরদা নির্বিকার! পরে বলেছে, কাজের ফাঁকে কী ভাবে বিশ্রাম নিতে হবে সেটা না জানলে কিন্তু কোনও দিন সফল নায়িকা হওয়া যাবে না।” নায়কের কথায় মান্যতা দিয়ে লহমা আবীরের মতোই “কুল অ্যান্ড ক্যাজ়ুয়াল” হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
কিন্তু আবীরের সঙ্গে তাঁর বয়সের ফারাক যে বিস্তর! প্রেমের দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে সমস্যা হয়নি?
লহমার গলায় কি এ বার লজ্জার আভাস? তিনি বললেন, “ওই উচ্চতা, ওই গায়ের রং, ও রকম মিষ্টি হাসি আর ‘পাশের বাড়ির ভাল ছেলে’র ইমেজ দেখে তো এমনিতেই প্রেম চলে আসে! আমি আবীরদার অন্ধ ভক্ত। ওকে ঘিরে সব সময়েই একটা ভাল লাগা কাজ করে। অভিনয়ের সময়েও সেই একই অনুভূতি কাজ করেছে। তখন কি আর নায়ক বয়সে বড় না ছোট খেয়াল ছিল?” আর ওই গালের কাটা দাগ? যাকে অনুরাগিণীরা ‘বিউটি স্পট’ বলেন... জোরে হেসে ফেলে লহমার দাবি, “সব মিলিয়ে আবীরদার অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ। আমি কেন, আমার মা পর্যন্ত আবীর চট্টোপাধ্যায়ে মুগ্ধ।”
তার পরেই লহমা জানালেন, যাঁকে নিয়ে এত কথা তাঁকে তখনও জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাননি। এ বার ফোন করবেন তাঁর আবীরদাকে। সঙ্গে কি লাল গোলাপের তোড়া পাঠাচ্ছেন? কোনও জবাব নয়, ফোনের ও পারে কেবলই হাসির শব্দ।