সইফ আলি খান। —ফাইল চিত্র।
এলোপাথাড়ি ছুরির আঘাতে মারাত্মক জখম হয়েছিলেন সইফ আলি খান। পাঁচ দিন হাসপাতালে কাটিয়ে সদ্য বাড়ি ফিরেছেন তিনি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন আপাতত স্থিতিশীল তাঁর অবস্থা। এরই মধ্যে ধরা পড়েছেন গভীর রাতে সইফ ও করিনার বান্দ্রা এলাকার অভিজাত আবাসনে ঢুকে পড়া ব্যক্তি। মুম্বই পুলিশের অপরাধ দমন শাখা দাবি করেছে, ধৃত ঐ ব্যক্তি শরিফুল ইসলাম শেহজ়াদ আদতে বাংলাদেশের নাগরিক। মেঘালয়ের কাছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ডাউকি নদী পেরিয়ে এ দেশে ঢোকেন প্রায় সাত মাস আগে। তার পর পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে দালালের মাধ্যমে একটি মোবাইল সিম কিনে ফেলেন। কাজের সন্ধানে চলে যান মুম্বই।
ঘটনা হল, গত বেশ কয়েক বছর ধরেই অবৈধ ভাবে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে চলে আসা মানুষজনকে নিয়ে আলোচনা বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে জঙ্গিযোগ থাকার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু এ বার, সইফ আলি খানের উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া ব্যক্তিকে তেমন কোনও অভিযোগে বিদ্ধ করছে না মুম্বই পুলিশ। বরং তারা জানিয়েছে, দারিদ্র আর অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার সুরাহা করতেই এ দেশে এসে কাজের সন্ধান করছিলেন তিনি। বিফল হয়ে বিত্তবানের ঘরে ঢুকে মহামূল্য কোনও সামগ্রী হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
মুম্বই পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “ঠাণে এলাকার একটি হোটেলে কাজ করতেন শরিফুল। ১৫ ডিসেম্বর সেই কাজটি হারান। তার পর থেকেই মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন অর্থ রোজগারের জন্য।” পুলিশ দাবি করেছে, চুরির উদ্দেশ্যেই গত ৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারি বান্দ্রা ও খারের অভিজাত এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখেন। ওরলি এবং ঠাণে এলাকার বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ বা পাবে শরিফুল কাজ করতেন, বেতন পেতেন ১২-১৩ হাজার টাকা। এর সিংহভাগই তাঁকে পাঠিয়ে দিতে হত বাংলাদেশে মায়ের চিকিৎসার জন্য। ফলে এ দেশে শুধু বেতনের উপর ভরসা করতে পারছিলেন না। গত অগস্ট মাসেও ওরলির একটি রেস্তরাঁয় চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যান তিনি, দাবি করেছেন ওই রেস্তোরাঁর ম্যানেজার।
জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, ডাউকি নদী পেরিয়ে মেঘালয় ঢুকেই এক দালালের হাতে পড়েন শরিফুল। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই দালাল তাঁকে আসামে পৌঁছে দেয়। তার পর সেখান থেকে কলকাতার বাসে তুলে দেওয়া হয়।
এ দেশে এসে মোবাইলে অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত নানা অ্যাপ ব্যবহার করছিলেন শরিফুল। সেই সূত্রেই ধরা পড়ে যান গত রবিবার। ১৬ জানুয়ারি সইফের বাড়িতে হামলা চালানোর পর গা-ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি। পুলিশ জানতে পেরেছে ১৮ জানুয়ারি অ্যাপ এর মাধ্যমে ৬০ টাকা দিয়ে ভুরজি পাও খেয়েছিলেন তিনি, খেয়েছিলেন ছ'টাকার চা। মোবাইলের সূত্রেই তাঁর অবস্থান ধরে ফেলে মুম্বই পুলিশ।
অন্য দিকে ছুরিকাহত সইফ যে ভাল আছেন, তা বোঝা গিয়েছে মঙ্গলবার বিকেলেই। পিঠ টান করে বাড়ি ফিরেছেন হাসপাতাল থেকে। এরই মধ্যে শরিফুলের ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যা সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়ে দিয়েছে মুম্বই পুলিশ। ফলে আক্রমণকারীর উপর রাগ ক্রমশ কমছে সইফ-অনুরাগীদের। বরং খানিকটা যেন সহমর্মিতাই জেগে উঠছে।
এ দিকে আগামী মার্চ মাসেই মুক্তি পাওয়ার কথা সইফের আগামী ছবি ‘জুয়েল থিফ: দি রেড সান চ্যাপ্টার’। রবি গ্রেবাল পরিচালিত এবং সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত এ ছবিতে সইফের পাশাপাশি দেখা যাবে নিকিতা আনন্দ এবং জয়দীপ আহলওয়াতকে। ছবির কাহিনি সম্পর্কে খুব বিশেষ কিছু জানা না গেলেও নাম থেকেই বোঝা যায়, এ ছবিতে থাকতে চলেছে কোনও এক চোরের গল্প। তবে সইফ সেখানে ‘জুয়েল থিফ’ না কি চোরের বিরুদ্ধে লড়াই করা পুলিশ, তা জানতে গেলে অপেক্ষা করতেই হবে।