পুণ্যতিথিতে স্নান করতে সাধু-সন্ন্যাসিনীদের ভিড় জমেছে মহাকুম্ভ মেলায়। ‘অ্যাম্বাসাডর বাবা’, ‘চাওয়ালা বাবা’ থেকে শুরু করে ‘পরিবেশ বাবা’— অনেক অদ্ভুতনামী সাধু জড়ো হয়েছেন মহাকুম্ভের ত্রিবেণী সঙ্গমস্থলে। এঁদের মধ্যে অনেকেই নজর কেড়েছেন বিবিধ কারণে।
তালিকার প্রথমেই রয়েছেন ‘অ্যাম্বাসাডর বাবা’। আসল নাম রাজ গিরি। ৫০ বছরের বেশি বয়সের ওই সাধু মধ্যপ্রদেশের ইনদওরের বাসিন্দা।
১২ জানুয়ারি মহাকুম্ভে পৌঁছেছেন তিনি। ‘অ্যাম্বাসাডর বাবা’ এখনও পর্যন্ত চারটি কুম্ভমেলায় যোগ দিয়েছেন। কিন্তু কেন ও রকম নাম তাঁর?
১৯৭২ সালের একটি অ্যাম্বাসাডর গাড়ি রয়েছে ‘অ্যাম্বাসাডর বাবা’র কাছে। গেরুয়া রঙের লজ্ঝড়ে অ্যাম্বাসাডরটি এখনও সচল। যেখানে যান, ওই গাড়ি চালিয়েই যান তিনি।
‘ভিনটেজ’ সেই গাড়ি গত ৩৫ বছর ধরে তাঁর সঙ্গী। গাড়িটিকে তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং আধ্যাত্মিক যাত্রার প্রতিফলন হিসাবেও দেখেন ‘অ্যাম্বাসাডর বাবা’।
উল্লেখ্য, ‘অ্যাম্বাসাডর বাবা’ এখনও নিজেই ওই গাড়িটি চালান। গাড়িটি তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
গাড়িটি নিছকই গাড়ি নয়। ‘অ্যাম্বাসাডর বাবা’র ঘরও বটে। তাঁর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, কাপড়, পুঁথি সব গাড়ির মধ্যেই রাখেন তিনি।
গাড়িটির ছাদে একটি নিষ্কাশন ফ্যান বসিয়েছেন ‘অ্যাম্বাসাডর বাবা’। বরফের চাঁই এবং ব্যাটারির সাহায্যে একটি অস্থায়ী শীতাতপ যন্ত্রও রয়েছে। গরমকালে সেটি ব্যবহার করেন বাবা।
গাড়ি নিয়ে গর্বের অন্ত নেই ‘অ্যাম্বাসাডর বাবা’র। তিনি জানিয়েছেন, গাড়িটি চালিয়ে যেমন আরাম, তেমনই সেটি তাঁর সুখ-দুঃখের সঙ্গী। তিনি বলেছেন, ‘‘গাড়ি খারাপ হয়ে গেলে আমি নিজেই মেরামত করি।’’
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজ গিরি ওরফে ‘অ্যাম্বাসাডর বাবা’র আধ্যাত্মিক যাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র সাত বছর বয়সে। গুরুর নির্দেশ মেনে ১৫ বছর বয়সে নিজেকে ধ্যান এবং তপস্যায় নিবেদিত করেন তিনি।
অনুরাগীদের দাবি, পার্থিব বন্ধন ত্যাগ করে আত্মশাসনের পথ অবলম্বন করেছেন ‘অ্যাম্বাসাডর বাবা’। তীব্র গরম হোক বা কনকনে ঠান্ডা— সারা বছর নাকি বিনা পোশাকেই ধ্যান করেন অ্যাম্বাসাডর বাবা।
মহাকুম্ভে ইতিমধ্যেই শাহিস্নান সেরেছেন ‘অ্যাম্বাসাডর বাবা’। সঙ্গমে অমৃতস্নান করার সুযোগের জন্য ভগবানের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, কুম্ভ থেকে ফিরে আবার ধ্যানে বসার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর।
পাশাপাশি ‘অ্যাম্বাসাডর বাবা’ এ-ও জানিয়েছেন, যদি কেউ তাঁকে তাঁর তপস্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তা হলে তিনি খুশি হয়ে তা ব্যাখ্যা করবেন। কিন্তু কেউ যদি তাঁকে অর্থহীন প্রশ্ন করেন, তা হলে তিনি খুব বিরক্ত হন।
মহাকুম্ভের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন ‘অ্যাম্বাসাডর বাবা’ এবং তাঁর গেরুয়ারঙা অ্যাম্বাসাডর গাড়িটি। অনন্য সাধুকে এক ঝলক দেখার জন্য তাঁর তাঁবুর সামনে ভিড় করছেন অনেকে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি থেকে মহাকুম্ভ মেলা শুরু হয়েছে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে। মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রয়াগরাজ আগে পরিচিত ছিল ‘ইলাহাবাদ’ নামে। তবে বর্তমানে শহরের নামটি বদলে গিয়েছে।
মহাকুম্ভ উপলক্ষে নতুন করে সাজানো হয়েছে উত্তরপ্রদেশের সেই শহরকে। এ বছরের মহাকুম্ভে সব মিলিয়ে ৪৫ কোটিরও বেশি ভক্তের সমাগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ৬ বছর অন্তর প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলা হয়। একটি অর্ধকুম্ভ মেলার ৬ বছর পর একটি পূর্ণকুম্ভ মেলা। প্রয়াগরাজে শেষ পূর্ণকুম্ভ হয়েছিল ২০১৩-তে। তার পর ২০১৯-এ বসেছিল অর্ধকুম্ভ মেলা।
গঙ্গা, যমুনা এবং অন্তঃসলিলা সরস্বতী নদীর পবিত্র সঙ্গমস্থলে ভক্তেরা জড়ো হয়েছেন শাহিস্নান করতে। পুণ্যস্নানের জন্য ইতিমধ্যেই প্রয়াগরাজে জড়ো হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ।
ছবি: পিটিআই এবং রয়টার্স।