Celebrity Interview

প্রযুক্তির মাধ্যমে ভুল ঢাকা হয় রিয়্যালিটি শো-এ, স্বচ্ছতা নেই! শুধু জাঁকজমক: অন্বেষা

বার বার এসেছে অভিনয়ের প্রস্তাব। সেই প্রস্তাবে অবশেষে সাড়া দিলেন অন্বেষা দত্তগুপ্ত।

Advertisement
স্বরলিপি দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:৪১
An exclusive interview with singer Anwesha Dutta Gupta as she has embarked on a new journey of acting

গান ও অভিনয় নিয়ে অকপট অন্বেষা। ছবি: সংগৃহীত।

রিয়্যালিটি শো থেকে সফর শুরু হয়েছিল তাঁর। একাধিক ভাষায় গান গাওয়ার পরে সঙ্গীত পরিচালক হিসাবেও নিজের পরিচিতি তৈরি করেছেন। এর মধ্যেই বার বার এসেছে অভিনয়ের প্রস্তাব। অবশেষে সাড়া দিলেন অন্বেষা দত্তগুপ্ত। সৌম্যজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের হিন্দি ছবি ‘হামসাজ় দ্য মিউজ়িক’-এ অভিনয়ের সফর শুরু করলেন গায়িকা। তার মাঝেই কথা বললেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।

Advertisement

প্রশ্ন: প্রস্তাব তো বহু দিন আগে থেকেই ছিল। অবশেষে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললেন?

অন্বেষা: এই ছবিটা সম্পর্কে শুনেই মনে হয়েছিল, সম্পূর্ণ অন্য রকম। অভিনয় সম্পূর্ণ নতুন বিষয়। তবে এই ছবির সঙ্গে গানের বিশেষ যোগ রয়েছে। গানের জন্যই মানুষ আমাকে চেনেন এবং ভালবাসেন। সেই জন্যই এই ছবির প্রস্তাব আমার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। তবে, শুধু অভিনয় নয়। এই প্রথম কোনও হিন্দি ছবিতে আমি আবহ সঙ্গীত নির্মাণ এবং সঙ্গীত পরিচালনাও করেছি। ‘হামসাজ়’ আমার কাছে বিশেষ।

প্রশ্ন: শুধু সঙ্গীতকেন্দ্রিক ছবি বলেই সিদ্ধান্ত নিলেন? না কি অভিনয়ে আসার ইচ্ছে ছিলই?

অন্বেষা: দুটোই সত্যি। সঙ্গীতকেন্দ্রিক ছবি বলে তো বটেই। তার বাইরে রূপকথা আমার ভাল লাগে। বিদেশে এমন বহু ছবি হয়ে থাকে। ‘লা লা ল্যান্ড’-এর মতো ছবি তো আমরা দেখেছি। বিদেশে সঙ্গীতশিল্পীরা দারুণ অভিনয়ও করেন। তবে এ দেশে এমন ছবি নতুন ঘরানার। তাই এই ছবি ‘ট্রেন্ডসেটার’ হতে পারে। তবে ভবিষ্যতে কেমন ছবিতে কাজ করব, সেটা এখনও জানি না। অনেকটাই নির্ভর করছে, এই ছবি মানুষ কী ভাবে গ্রহণ করছে তার উপর।

প্রশ্ন: কণ্ঠশিল্পী হিসাবে সফর শুরু। তার পরে নিজের গান তৈরি, আর এখন অভিনয়— একসঙ্গে সব ক’টি কাজ নিয়ে এগোতে চান?

অন্বেষা: গান দিয়েই আমার যাত্রা শুরু। তার পর হঠাৎই গান লেখা ও সুর করার কাজ করি। কোনও পরিকল্পনা ছিল না। আমার তৈরি সুর শুনে বাবার পছন্দ হয়েছিল। লেখা নিয়ে তখনও ধন্দে ছিলাম। তার পরে সেটাও শুরু করলাম। ধীরে ধীরে নিজের ইউটিউব চ্যানেল করলাম। অন্য সুরকারের গান তো গাই-ই। নিজে গান তৈরি করে গাইতে ভালই লাগে। এক সময় ছবির জন্য সঙ্গীত পরিচালনার ডাক আসে। এ বার অভিনয়। ভাবিনি একসঙ্গে সবটা করতে পারব। সৃজনশীল জগতে কারও যদি ইচ্ছে থাকে, তিনি বিভিন্ন দিক কাটাছেঁড়া করে দেখতে চান, তা হলে তার নিজেকে বেঁধে রাখা উচিত নয়।

প্রশ্ন: এখন শুধু ভাল গাইলেই হয় না, মঞ্চে ‘পারফর্মার’ হতে হয়। শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখার ক্ষমতা দরকার। আপনার মতো শান্ত, মিতভাষী গায়িকার ‘পারফর্মার’ হয়ে উঠতে অসুবিধা হয়নি?

অন্বেষা: প্রায় ১৭ বছর ধরে গান গাওয়া আমার পেশা। মঞ্চে গান গাওয়ার বিষয়ে নিজেকে অনেক বদলাতে হয়েছে। ছোটবেলায় আমি খুবই লাজুক ছিলাম, এখনও। কিন্তু পেশার কারণেই সেই মোড়ক ভেঙে বেরোতে হয়েছে। মানুষের সঙ্গে তো কথা বলেই আমাকে পৌঁছতে হবে। নিজের স্বভাবের বিরুদ্ধে গিয়ে এ বিষয়টি আয়ত্ত করতে অনেক ঘষামাজা করতে হয়েছে। এখন আর মঞ্চে তেমন ভয় লাগে না। তবে, আজও পেটের ভিতর গুড়গুড় করে যত ক্ষণ না কোনও অনুষ্ঠান সফল ভাবে শেষ হচ্ছে।

প্রশ্ন: এই ভয় কি একজন গায়িকার জন্য আদৌ ভাল?

অন্বেষা: আমার মনে হয়, সামান্য ভয় থাকা ভালই। তাতে সতর্ক থাকা যায়। মাত্রাতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস সব সময় ভাল নয়। তবে মঞ্চে অনুষ্ঠান করার ক্ষেত্রে আড়ষ্টতা কাটানো উচিত। আগে গানের পাশাপশি মঞ্চ মাতাতে দেখতাম বিদেশি শিল্পীদের। এখন আমাদের দেশেও ‘স্টেজ পারফরম্যান্স’ অনেক উন্নত হয়ে গিয়েছে।

প্রশ্ন: ভারতের মঞ্চ উপস্থাপনা নিয়ে আপনার কী মনে হয়?

অন্বেষা: সুনিধি চৌহান, শালমলী খোলগড়ে, অরিজিৎ সিংহের মতো শিল্পীরা কোন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে মঞ্চের অনুষ্ঠানকে। আমিও মঞ্চের অনুষ্ঠানের জন্য নিজের গানের সঙ্গীতায়োজন নতুন ভাবে করার চেষ্টা করি। রেকর্ডিং গানের থেকে কিছু আলাদা উপস্থাপন রাখতে চাই মঞ্চে। সব সময় সেরাটা যাতে দেওয়া যায়, সে দিকে নজর রাখি। অন্যদের গানও গাই।

প্রশ্ন: প্রতিভা কম, অথচ নেটদুনিয়ায় জনপ্রিয়, এমন গায়ক-গায়িকার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। কী মনে হয়?

অন্বেষা: আমি যখন শুরু করেছিলাম, এ সব ছিল না। এটা ঠিক যে এখন সমাজমাধ্যমে এমন অনেকেই জনপ্রিয়, যাঁরা মোটেও অসাধারণ নন। আসলে এই ভাবে সমাজমাধ্যমে জনপ্রিয়তা ধরে রাখা বেশ সময়সাপেক্ষ। নিয়মিত ভিডিয়ো, রিল বা লাইভ করতে হয়। আমি এ ভাবে করতে পারি না। যাঁরা করছেন, তাঁদের কুর্নিশ। কিন্তু আমার মনে হয়, এই নিয়মিত রিল বানানোর পাশাপাশি নিজেদের রেওয়াজেও মন দেওয়া দরকার। আবার অনেকেই ভাল গান করেন। যেমন ‘নন্দী সিস্টার্স’-এর কাজ ভাল লাগে। ওঁদের কিন্তু গানের শিক্ষাটা রয়েছে। এ রকম অনেক মানুষ রয়েছেন সমাজমাধ্যমে। কিন্তু বহু মধ্যমেধার মানুষও আজকাল সমাজমাধ্যমে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

প্রশ্ন: এখন তো গান অটোটিউন করা হয়। কার প্রতিভা আছে, কার নেই— সাধারণ মানুষের পক্ষে তো বোঝাই মুশকিল...

অন্বেষা: হ্যাঁ, ভাল ও খারাপের মধ্যে যে পার্থক্য থাকে সেটা ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। এখন ভালটা খুঁজে বার করাও শ্রোতার বিশেষ দায়িত্ব। আমি একজন শ্রোতা হিসাবেই বলছি। প্রচারের দাপটে হয়তো একটা ভাল গান চাপা পড়ে গেল। শুনতে পেলে ভালই লাগত। কিন্তু প্রচার নেই বলে শুনতে পেলাম না।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন

প্রশ্ন: তা হলে কি আর গানের সুদিন ফিরে পাওয়া যাবে না?

অন্বেষা: আমার মনে হয়, ভালটা খুঁজে বার করতে গেলে শ্রোতাকেও ধৈর্য রাখতে হবে। আমরা এমন বহু জিনিস সমাজমাধ্যমে দেখতে পাই যেগুলি না দেখলেও চলে। অথচ, আমরা দেখে ফেলি। স্রোতে গা ভাসাই। তাই সেটা শ্রোতাকে বুঝতে হবে। আগে তো মানুষ সময় এবং অর্থ খরচ করে গান শুনতেন। কাউকে অশ্রদ্ধা না-করেই বলছি, এখন যে সমাজমাধ্যমে কারও বাড়ি ঝাড় দেওয়ার ভিডিয়ো দেখতে পাচ্ছেন, সেখানেই জ়াকির হুসেনের অনুষ্ঠানও দেখতে পাচ্ছেন। একেবারে বিনামূল্যে, নিজের অবসর তো। তা হলে ভাল জিনিসটির মূল্য তো ব্যবহারকারীকেই দিতে হবে।

প্রশ্ন: শ্রেয়া ঘোষালের কণ্ঠ ও গায়কির সঙ্গে বরাবর তুলনা হয়েছে। নিজস্বতা তৈরির পথে কি এটা বাধা নয়?

অন্বেষা: শ্রেয়া ঘোষাল বর্তমানে সেরা শিল্পীদের মধ্যেও প্রথম। এই তুলনাকে তাই আমি ইতিবাচক ভাবেই দেখেছি। অনেকেই বলেছেন, আমার সঙ্গে শ্রেয়াদির কণ্ঠের মিল রয়েছে। এমনকি শ্রেয়াদি নিজেও আমাকে বলেছিলেন। কিন্তু একই সঙ্গে বলেছিলেন, “তুই আমার গান শোনা বন্ধ করে দে।” আমি সে কথা মেনেছি। আমার সঙ্গীতজীবনের শুরুর দিকে শ্রেয়াদির গান শোনা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। অনেক বছর শুনিনি। অনবরত একজনের গান শুনলে তার একটা প্রভাব পড়বেই।

প্রশ্ন: তাতে কি কিছু পরিবর্তন এল গায়কিতে?

অন্বেষা: তার পরে নিজের গান গাওয়া শুরু হল। নিজেকে আবিষ্কার করাও শুরু হল। বুঝতে শুরু করলাম, আমি কী ভাবে একটা শব্দ উচ্চারণ করি, কী ভাবে প্রেমের গানের অনুভূতি প্রকাশ করি। এ ভাবেই তো স্বতন্ত্রতা তৈরি হয়। শুরুর দিকে কারও না কারও প্রভাব থাকেই। আমি যেমন খুব ছোট থেকে গীতা দত্তের গান শুনতাম। লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে তো রয়েছেনই। সোনু নিগমের গানও শুনতাম। শ্রেয়াদির সঙ্গে মিল রয়েছে শুনলে প্রথম দিকে বিশেষ ভাল লাগত। তার পর সেই মিল থেকে বেরিয়ে আসার সফর শুরু হল। অনেকেই বলতেন, এই মিলটা কিন্তু এক ধরনের প্রতিকূলতা। এখন তো সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে কাজ করেছি। নিজের স্বতন্ত্রতাও তৈরি হয়েছে।

প্রশ্ন: অরিজিৎ সিংহের সঙ্গে অনেক কাজ করেছেন। সকলেই বলেন, তিনি মাটির মানুষ। আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

অন্বেষা: অরিজিৎদার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা সত্যিই দারুণ। সত্যিই সম্পূর্ণ আলাদা। খ্যাতির বোঝা নিয়ে চলেন না। আমাদের তো বহু দিনের আলাপ। ওঁর উত্থান আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। ওঁকে দেখলে খুব গর্ব হয়। একটা ব্যক্তিগত বোঝাপড়াও রয়েছে। একসঙ্গে বহু কাজ করেছি। শঙ্কর মহাদেবনের পরিচালনায় একটা দারুণ গান গেয়েছিলাম আমরা। ছবিটা যদিও আর মুক্তি পায়নি। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের পরিচালনায় ‘বোঝে না সে বোঝে না’ ছবিতে আমরা একসঙ্গে গান গেয়েছিলাম। সাধারণত এখন আর এক দিনে সবার গান রেকর্ড হয় না। কিন্তু সেই দিন শঙ্করজি চেয়েছিলেন, আমরা দু’জনই যেন স্টুডিয়োতে যাই। খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। অরিজিৎদা সত্যিই আন্তরিক। আমাকে ছোট বোনের মতো দেখেন। এত খ্যাতির পরও সেই একই আন্তরিকতা দেখতে পাই, আমার বড্ড ভাল লাগে।

প্রশ্ন: মিতভাষী অন্বেষা আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন। ঘটনা যে ভাবে এগোল, কী মনে হয় এখন?

অন্বেষা: গোটা বিষয়টা আমাকে মানসিক ভাবে খুব বিধ্বস্ত করেছে। নির্যাতিতার জায়গায় নিজেকে রেখে দেখেছি। তিনি শুধুই একজন মহিলা ছিলেন না। ওঁর কত স্বপ্ন ছিল, কত আকাঙ্ক্ষা ছিল। কত উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হতে পারত ওঁর। সমাজের জন্যও তিনি কত কিছু করতে পারতেন। এমন সাংঘাতিক ঘটনা কোনও মানুষের সঙ্গেই ঘটা উচিত না। আমার দেশ যাঁরা চালাচ্ছেন, তাঁরা আসলে ভিতর থেকে কেমন সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। অনেক আশা ছিল, কিন্তু ক্রমশ বুঝলাম, আসলে এমনটা নয়। আমি নিজে রাজনীতিতে যেতে পারব না। ইচ্ছেও নেই। সম্পূর্ণ আমার চরিত্র-বিরোধী। রাস্তায় বেরিয়ে সরব হয়েছি ঠিকই। কিন্তু তার বেশি ক্ষমতা তো আমার কাছে নেই। হতাশা থাকে। কিন্তু নতুন প্রজন্মের জন্য কিছু পরিবর্তন দরকার। ভিতর থেকে সমাজটা যাতে শিক্ষিত হয়, সেটা দেখা দরকার। আর যেন এমন কিছু না ঘটে, যার জন্য আমাদের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে হয়।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

প্রশ্ন: প্রতিবাদে নেমেছিলেন বলে অনেক শিল্পী কাজ হারাচ্ছেন। সঙ্গীতশিল্পী লগ্নজিতাও রয়েছেন তাঁদের মধ্যে...

অন্বেষা: গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করার অধিকার কিন্তু কারও নেই। প্রত্যেকের স্বাধীনতা রয়েছে কথা বলার। কথা বললেই তার প্রভাব কাজের ক্ষেত্রে পড়বে, এই ভয় নিয়েই যদি সাধারণ মানুষকে বাঁচতে হয়, তা হলে অবশেষে কারও ভালই হবে না। আবার স্বাধীনতা মানেই স্বেচ্ছাচারিতা নয়। দায়িত্বশীল নাগরিকের মতো স্বাধীনতাকে দেখতে হবে।

প্রশ্ন: চন্দ্রমৌলি বিশ্বাস বেছে নিলেন আত্মহত্যার পথ, হয়তো অবসাদে ভুগছিলেন। সঙ্গীতজগৎ কি হতাশায় ডুবে যাচ্ছে?

অন্বেষা: আমার মনে হয়, সব পেশারই এমন একটা অন্ধকার দিক রয়েছে। সমাজ এখন খুব অস্থির। আগে মানুষের ভাবনাচিন্তা হালকা ছিল। এখন মানুষের মনে অনেক কিছু ঢুকে পড়েছে। এতে সমাজমাধ্যমের একটা বড় দায় রয়েছে। হয়তো খুব মনখারাপ। সমাজমাধ্যমে গিয়ে দেখলেন, তাঁর বন্ধু বেড়াচ্ছেন বা সুসময় কাটাচ্ছেন। হয়তো আরও মনখারাপ হয়ে গেল। এ সব চাপ মানুষ নিজেই ডেকে আনছে। চন্দ্রদা খুবই প্রতিভাবান শিল্পী ছিলেন। আমি খুবই শোকাহত। কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন, কেউ জানি না। সমাজকে একটু শান্ত হতে হবে। সবাই খুব দৌড়চ্ছে।

প্রশ্ন: এই দৌড়ের জীবনে এখনও কি নিয়ম মেনে রেওয়াজ করতে পারেন?

অন্বেষা: রেওয়াজ করতেই হয়। কিন্তু সময়টা একটু এ দিক-ও দিক করতে হয়েছে। ছোটবেলায় ভোর ৪টেয় উঠিয়ে দিতেন মা। রেওয়াজ করতাম। এখন যেমন গান তৈরি করার জন্য অনেকটা সময় চলে যায়। তাই গলা সাধার সময় ভাগ করে নিয়েছি ভোরবেলা এবং গভীর রাতের মধ্যে। সেই সময় চারপাশটা খুব শান্ত থাকে। তা ছাড়া, দিনের অনেকটা সময় নানা ধরনের গান শুনি।

প্রশ্ন: শুধুই কি প্রেমের গান? অন্বেষার জীবনেও প্রেমের উপস্থিতি রয়েছে নিশ্চয়ই?

অন্বেষা: (হাসি) এই বিষয়গুলিতে আমি খুব প্রাচীনপন্থী। বাইরে থেকে হয়তো মানুষ সামাজিক ভাবেন। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে আমি একদমই বহির্মুখী নই। তাই কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে দেখাসাক্ষাৎ হয় না আমার। ভবিষ্যতে আমার জীবনে কেউ এসে যদি ভাল বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন, তেমন হলে মন্দ হয় না!

প্রশ্ন: রিয়্যালিটি শো থেকে সফর শুরু হয়েছিল। সেখানে এখন বহু বদল এসেছে। সবই কি ইতিবাচক পরিবর্তন?

অন্বেষা: আমি একদমই ইতিবাচক ভাবে নিই না এই বদল। এখন প্রযুক্তির অপব্যবহার করা হচ্ছে। প্রযুক্তিই সব গান ঘষামাজা করে দিচ্ছে। রিয়্যালিটি শো কিন্তু কোনও ইভেন্ট নয়, প্রতিযোগিতা। সবটাই স্বচ্ছ হওয়া উচিত। না হলে কিসের ভিত্তিতে নম্বর দেওয়া হবে? আমাদের সময়ে ভুল করলে ‘অটোটিউন’ করে ঠিক করা হত না। বিচারকদের বকুনি শুনতে হত। শুরুতেই ভুলটা চোখে আঙুল দিয়ে না দেখালে তো ছেলেমেয়েরা এগোবে না। শুধুই জাঁকজমক এখন, স্বচ্ছতা নেই।

প্রশ্ন: বহু সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। কোন তিন জনের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা মনে থাকবে সারা জীবন?

অন্বেষা: বহু নাম রয়েছে। কয়েক জনের নাম বলতে হলে আসবে এআর রহমান, ইসমাইল দরবার, শঙ্কর মহাদেবনের নাম। এ ছাড়া হিমেশ রেশমিয়ার সঙ্গেও প্রচুর কাজ করেছি। বাংলাতেও দেবজ্যোতি মিশ্র, জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সঙ্গে কাজ করে খুব ভাল লেগেছে।

প্রশ্ন: আচ্ছা, অভিনয় করছেন। কোনও প্রশিক্ষণ নেননি?

অন্বেষা: কোনও অভিনয় প্রশিক্ষণের স্কুলে যাইনি। কাজটা এসেছে হঠাৎ করে। আসলে ছবির সঙ্গীতের কাজ দিয়েই শুরু করেছিলাম। আগে গান তৈরি হয়েছে। পরে অভিনয়ের বিষয়টা এসেছে। শুটিং-এর আগে ঘষামাজা হয়েছে। যারা অভিনয় করেছি, নিজেদের মধ্যে মহড়া দিয়েছি। প্রযোজনা সংস্থা থেকে সাহায্য করা হয়েছে। প্রযোজক-পরিচালক দেখতেন এসেছেন। প্রেমের গানের দৃশ্যে অভিনয় করতে আমাকে বেগ পেতে হয়েছে। পরিচালক বলতেন, “নায়ক কাছে এলেই আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছ। এমন করলে কী ভাবে হবে?” যদিও এখন গানগুলির ভিডিয়ো দেখে মানুষ তেমন প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে না। আমার ছবির নায়ক ইকবালও খুব সহযোগিতা করেছেন।

প্রশ্ন: তা হলে এ বার অভিনয়জগতে পাকাপাকি ভাবে আপনাকে পাবে দর্শক?

অন্বেষা: সেটা এখনই বলা মুশকিল। বেশ কিছু ছবির কথাবার্তা হয়ে রয়েছে। বাংলা ছবিও রয়েছে। নানা ধরনের গল্প রয়েছে। বাস্তবায়িত হলে দর্শক নিশ্চয়ই দেখতে পাবে।

Advertisement
আরও পড়ুন