Review of Niharika

একাকিত্ব এবং আত্মবীক্ষণের মায়াজাল, কেমন হল ‘নীহারিকা’? জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন

শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে ইন্দ্রাশিস আচার্য পরিচালিত ‘নীহারিকা’। অভিনয়ে অনুরাধা মুখোপাধ্যায়, শিলাজিৎ মজুমদার, মল্লিকা মজুমদার প্রমুখ।

Advertisement
অভিনন্দন দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৩ ১৩:২৬
Anuradha Mukherjee

‘নীহারিকা’ ছবির একটি দৃশ্যে অনুরাধা মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

বৃষ্টির জল এসে ধুয়ে দিচ্ছে জানলা। পিছনে এক জোড়া চোখ কারও অপেক্ষায়। সেই অপেক্ষা অন্তহীন। অপেক্ষা কোথাও যেন নিজেকে চিনে নেওয়ার, আবার তা হতে পারে অতীত জীবনের কঠিন সময়ের স্মৃতি মুছে যাওয়ার প্রতীক্ষা। পরিচালক ইন্দ্রাশিস আচার্যের সাম্প্রতিক ছবি ‘নীহারিকা’ দর্শককে এ রকমই একাধিক প্রশ্নের সামনে দাঁড় করায়।

এক নারীর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের গল্প বলে এই ছবি। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ‘ভয়’ উপন্যাসটি থেকে রসদ সংগ্রহ করেছেন পরিচালক। শৈশবেই কঠিন বাস্তব আঘাত হানে দীপার (অনুরাধা মুখোপাধ্যায়) জীবনে। মদ্যপ বাবা মায়ের গায়ে হাত তোলে। ছোটকাকার স্পর্শ যে যথাযথ নয়, বুঝতে পারে দীপা। কিছুটা আপন খেয়ালেই যৌনতার সঙ্গে পরিচয় ঘটে তার। এ দিকে মায়ের মৃত্যুর পর বাবাও মেয়ের হাত ছেড়ে দেয়। ফলে কলকাতা থেকে সুদূর শিমূলতলায় ছোটমামার (শিলাজিৎ মজুমদার) পরিবারই হয়ে ওঠে দীপার নতুন ঠিকানা। মায়ের পর মামির (মল্লিকা মজুমদার) মধ্যেই দীপা খুঁজে পেয়েছিল বন্ধুত্বের স্বাদ। মামার প্রতিও দীপার অদ্ভুত ভাল লাগা। এক সময় দীপার জীবনেও আসে ভালবাসার মানুষ (অনিন্দ্য সেনগুপ্ত)। কিন্তু তার পরেও কি শান্তির সন্ধান পেল দীপা?

Advertisement
Silajit Majumder

‘নীহারিকা’ ছবির একটি দৃশ্যে শিলাজিৎ মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত।

ছবিতে না বলা কথা, শূন্যতা এবং ব্যক্তিজীবনের বিবিধ আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ে সম্পর্কের এক জটিল সমীকরণ নির্মাণ করেছেন পরিচালক, যার সমাধানে দর্শককেও সেই স্রোতে শামিল হতে হয়। পরিচালকের ছবির সঙ্গে যাঁরা পরিচিত, তাঁদের কাছে এই ছবির চলন আকর্ষণীয়। কখনও তা পাহাড়ি নদীর মতো খরস্রোতা, আবার কখনও তা ধীর গতিতে টিলার আড়ালে হারিয়ে যাওয়া গাড়িটির মতো। শিমূলতলার প্রকৃতিও যেন এক চরিত্র। প্রকৃতির রুক্ষতা আর শূন্যতার প্রেক্ষাপটে চরিত্রগুলিতে বিভিন্ন বর্ণালি খেলে যায়। কখনও মনে পড়তে পারে অরুন্ধতী দেবীর ‘ছুটি’ বা তরুণ মজুমদারের ‘নিমন্ত্রণ’ ছবির কিছু দৃশ্যকে। তবে সে সব ছবির থেকে সত্তাগত ভাবে ‘নীহারিকা’ আলাদা। কিন্তু কোথাও যেন হারিয়ে যাওয়া দিনের বাংলা ছবির এক চিলতে মায়া এ ছবিতে লেগে থাকে। সেটা বোধ হয় দর্শকের উপরি পাওনা।

Mallika Majumder

‘নীহারিকা’ ছবির একটি দৃশ্যে মল্লিকা মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত।

দীপার চরিত্রে অনুরাধার প্রয়াস নজর কাড়ে। কারণ এই রকম একটি চরিত্রে অভিনয় সহজ নয়। কিছু কিছু দৃশ্যে তাঁর অভিব্যক্তি আরও ধারালো হতে পারত। শিলাজিৎও পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন। অল্প সংলাপেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন মল্লিকা। অনিন্দ্য যথাযথ। তবে এই ছবির সম্পদ জয় সরকারের আবহসঙ্গীত। ছবি জুড়ে ছড়িয়ে থাকা শূন্যতাকে তা যেন সম্পৃক্ত করেছে। এই ধরনের ছবির চলন ধীর হওয়াটাই হয়তো স্বাভাবিক। কিন্তু তা সত্ত্বেও ছবির দৈর্ঘ্য খানিক কমানো যেত। দীর্ঘ সময় নিয়ে নিবিড় যত্নে এই ছবি তৈরি করেছেন পরিচালক। ইন্দ্রাশিসের আগামী ছবির জন্য দর্শকের প্রত্যাশা যে অনেকটাই বেড়ে গেল, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।

Advertisement
আরও পড়ুন