শটের আগে কোরক সামন্ত আর সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
তিনি মৃণাল সেনকে দেখেননি। ছোটবেলায় মৃণাল সেনের ছবিও যে খুব দেখেছেন, এমন নয়। সে সব পেরিয়েই মঞ্চাভিনেতা কোরক সামন্ত সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘পদাতিক’ ছবিতে ‘তরুণ’ মৃণাল। যিনি ছবিতে নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করেছেন। এই দৃশ্য ‘পদাতিক’ ছবির ঝলকে আসতেই চর্চায়। প্রযোজক ফিরদৌসল হাসানের প্রযোজনায় মৃণাল সেনের জীবনীছবিতে কোরক সর্বকনিষ্ঠ অভিনেতা। তাঁর ঘাড়ে অদেখা মৃণাল সেনকে ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব। এবং বিতর্কিত দৃশ্যের অভিনয়। অভিনেতার কাছে কতটা কঠিন ছিল?
প্রশ্ন নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল কোরকের সঙ্গে। অভিনেতার জবাব বুঝিয়ে দিয়েছে, তিনি ছোট হলেও যথেষ্ট পরিণত। তাঁর কথায়, “সৃজিতদা যখন আমায় ডেকে বললেন, উনি মৃণাল সেনের তরুণ বয়সের জন্য আমায় ভেবেছেন, অবাক হয়েছিলাম। কারণ, ওই সময়ের মৃণাল সেনকে তেমন ভাবে জানা যায় না। কিন্তু ‘ক্যাপ্টেন অফ দ্য শিপ’ নাবিককে ভরসা করলে নাবিকেরও নিজের প্রতি ভরসা বোধহয় বেড়ে যায়। আমারও সম্ভবত সেটাই হয়েছিল।” যার জেরে পড়াশোনা করে, কিছু ছবি আর তথ্যচিত্র দেখে, পরিচালকের থেকে মন দিয়ে চরিত্র বুঝে আর খুঁটিয়ে চিত্রনাট্য পড়ে নিজেকে তৈরি করেছেন তিনি। বাকিটা ছেড়ে দিয়েছিলেন রূপটানশিল্পী সোমনাথ কুন্ডুর উপরে। অভিনেতার আরও দাবি, “সকলের থেকে বয়সে ছোট তো! আদর করে, বুঝিয়ে কাজ করিয়ে নিয়েছেন সৃজিতদা। ফলে, খুব অসুবিধে হয়নি।”
মঞ্চ থেকে সিরিজ় ‘মন্দার’, ‘শিকারপুর’। পর্দায় কোরককে প্রথম সুযোগ দেন পরিচালক-অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তিনিই পরে সৃজিতের কাছে ‘পদাতিক’-এর জন্য তাঁর নাম বলেন। পরিচালক তখন ‘তরুণ’ মৃণালকে খুঁজছেন। এই উত্তরণে মঞ্চের বন্ধুরা খুশি, পর্দার অন্ অভিনেতাদের ইর্ষা?
প্রশ্ন করতেই সহজে উত্তর দিয়েছেন, “বন্ধুরা কিন্তু খুশি। ওরা মজা করে ‘মৃণাল সেন’ বলে ডাকছে। প্রথম ঝলকে যে অংশ দেখেছে প্রশংসা করেছে। ছবি দেখবে বলে ১৫ অগস্টের জন্য অপেক্ষা করে আছে।” কোরক জানিয়েছেন, কেউ ইর্ষা করছেন না। কারণ, প্রত্যেক অভিনেতার কাছে অভিনয়টাই আসল, মাধ্যম নয়। তাঁর মতে, মঞ্চাভিনেতা যেমন পর্দায় কাজ করছেন একই ভাবে পর্দার অভিনেতারা মঞ্চে অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন। এই অনায়াস আদানপ্রদানটাই কাম্য। ঝলকমুক্তির দিন কালজয়ী পরিচালকের মতোই কোরক সাদা চোস্ত-পাঞ্জাবি পরেছিলেন।মৃণাল সেনকে ছাড়তে চাইছেন না? জবাব দেওয়ার আগে হেসে ফেলেছেন। অভিনেতার যুক্তি, “অভিনয়সূত্রে গভীর ভাবে জানার পর অবশ্যই অন্তরে মৃণাল সেন। অযথা বাহ্যিক ভাবে বয়ে বেড়াচ্ছি না।”
আর নগ্ন দৃশ্যে অভিনয়? বাড়ির লোকেদের সঙ্গে বসে ঝলক দেখা গেল? দর্শকদের কটাক্ষ নিয়ে ভয় নেই? কোরকের জবাব এ বারেও ঝকঝকে, “দেখুন, আমি অভিনেতা। চরিত্রের খাতিরে, চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে যা করতে হবে, করব। এই নিয়ে আমার কোনও দ্বিধা নেই।” এ-ও জানিয়েছেন, বাড়ির লোকেরাও তাঁর পেশার কথা জানেন। তাই তিনি যা করছেন তা নিয়ে অযথা মাথা ঘামান না। সৃজিতের ‘পদাতিক’ নিয়ে তো নয়ই। বরং ছবিতে ছেলে আর কী কী করেছে, সেটাই দেখার জন্য কৌতূহলী তাঁরা।