প্রেম এসেছিল নিঃশব্দ চরণে। তেমনই সম্পর্কে ভাঙন ধরতেও শুরু করে নীরবে। বহু দিন ধরে মান-অভিমান জমতে জমতে তা পাহাড়ে পরিণত হয়। আবার কখনও তৃতীয় ব্যক্তি এসে দু’টি মানুষের মধ্যে দূরত্ব মুহূর্তে বাড়িয়ে দেয়। বিনোদন জগতেও ঠিক এমনই সম্পর্ক ভাঙনের সুর। বলিউড থেকে টলিপাড়া, একের পরে এক সম্পর্কে চিড়। দেখে নেওয়া যাক, এই বিচ্ছেদের মরসুমে মন ভাঙল কাদের।
প্রথমেই বলতে হয় ক্রিকেট তারকা হার্দিক পাণ্ড্য ও তাঁর স্ত্রী নাতাশা স্ট্যানকোভিচের কথা। বহু দিনের জল্পনার পর নিজেরাই সমাজমাধ্যমে বিচ্ছেদের ঘোষণা করেছেন তাঁরা। বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্তের পর সার্বিয়ায় পাড়ি দিয়েছেন নাতাশা। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন তাঁদের ছেলে অগস্ত্যকে। বিচ্ছেদের মধ্যেই হার্দিককে দেখা গিয়েছে অম্বানীদের বিয়েতে মন খুলে নাচতে। তাঁর নাচের সঙ্গী ছিলেন অনন্যা পাণ্ডে। অন্য দিকে ছেলেকে নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন নাতাশা। অগস্ত্যের জন্মদিনে তিনি কথা দিয়েছেন, মা হিসেবে সব সময় তিনি ছেলের পাশে থাকবেন।
টলিপাড়ায় যিশু সেনগুপ্ত ও নীলাঞ্জনা সেনগুপ্তের বিচ্ছেদের খবরে মন ভেঙেছে অনুরাগীদেরও। যিশু-নীলাঞ্জনার সম্পর্ক তাঁদের অনুরাগীদের বরাবরই অনুপ্রেরণা জুগিয়ে এসেছে। এমন ‘পাওয়ার কাপল’-এর সংসারে ভাঙনের খবর অনুরাগীদের কাছে বড় ধাক্কা। শোনা যাচ্ছে, দম্পতির মধ্যে প্রবেশ করেছেন তৃতীয় ব্যক্তি। আপ্তসহায়কের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন যিশু। অশান্তির জেরে নাকি আত্মঘাতীও হতে গিয়েছিলেন নীলাঞ্জনা।
সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে লিখেছিলেন, তাঁর শক্তির উৎস হল দুই মেয়ে সারা ও জ়ারা এবং বোন চন্দনা। কোথাও ছিল না যিশুর উল্লেখ। এতেই জল্পনা ঘনীভূত হয়। দুই মেয়ে সারা ও জ়ারা এই লড়াইয়ে নীলাঞ্জনার পাশে থেকেছেন। এমনকি বাবাকে ইনস্টাগ্রামে আর অনুসরণ করছেন না সারা। মায়ের সঙ্গে অর্থপূর্ণ পোস্ট করে সারা লিখেছেন, “এই খেলায় তুমি সবচেয়ে শক্তিশালী।”
যিশু-নীলাঞ্জনার বিচ্ছেদের খবর প্রকাশ্যে আসতেই টলিপাড়ার আরও এক অভিনেতার নাম প্রকাশ্যে আসে। গুঞ্জন ছড়ায়, অভিনেতা অর্জুন চক্রবর্তীর দাম্পত্যেও নাকি দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাঁদের মধ্যেও নাকি তৃতীয় নারীর আনাগোনা। যদিও সেই জল্পনায় জল ঢেলেছিলেন অর্জুন ও তাঁর স্ত্রী সৃজা চক্রবর্তীও। একসঙ্গে নিজস্বী পোস্ট করে স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন, তাঁরা একসঙ্গেই রয়েছেন। যদিও সৃজার সাম্প্রতিকতম একটি পোস্ট জল্পনা উস্কে দিয়েছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, একমাত্র মেয়ের জন্যই জীবনে তিনি এগিয়ে চলেছেন।
এই একই পরিস্থিতি বলিউডের ‘পাওয়ার কাপল’ অভিষেক বচ্চন ও ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের মধ্যে। বহু দিন ধরে জল্পনা চলছে, ভাঙন ধরেছে বচ্চন দম্পতির মধ্যেও। বিশেষ করে অম্বানীদের বিয়ের আসরে অভিষেক ও ঐশ্বর্যা আলাদা প্রবেশ করায় এই জল্পনা ঘনীভূত হয়। গোটা পরিবার নিয়ে হাজির হন অভিষেক। একসঙ্গে পারিবারিক ছবি তোলেন। কিন্তু সেই ফ্রেমে ছিলেন না ঐশ্বর্যা ও আরাধ্যা। কিছু ক্ষণ পর আলাদা ভাবে বিয়ের আসরে প্রবেশ করেন অভিনেত্রী। যদিও বিয়ের অন্দরমহলে একসঙ্গে বসে থাকতে দেখা যায় তাঁদের।
এই বিচ্ছেদের আবহের মধ্যেই আরও এক টলি অভিনেতা দাম্পত্য নিয়ে মুখ খুলেছেন। ঋষি কৌশিক সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে দাম্পত্যে ভাঙনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। স্ত্রী দেবযানী চক্রবর্তীর নাম না করে ঋষি জানান, গত ১২ বছর ধরে তিনি সম্পর্কে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁর কথায়, “১২ বছর আগে একটি ছেলে ও মেয়ের বিয়ে হয়। যদিও মেয়েটি ও ছেলেটির জীবনযাত্রা একেবারেই আলাদা। তা বুঝতে পেরেই নাকি মেয়েটিকে বিয়ে করতে চাননি সেই ছেলে। কিন্তু নিজেকে বদলে ফেলার আশ্বাস দেন মেয়েটি। এই মর্মেই মেয়েটিকে বিয়ে করতে রাজি হন সেই ছেলে। তবে বিয়ের পর থেকে নিজেকে বিন্দুমাত্র বদলাননি তিনি, বরং মেয়েটির উন্নাসিকতা আরও বেড়েছে।”
এ ছাড়াও দু’টি ছবি পোস্ট করেন ঋষি। একটি স্ত্রী দেবযানীর সঙ্গে, অন্যটি তাঁর একার। ক্যাপশনে অভিনেতা লিখেছিলেন, “বিষাক্ত মানুষদের বাদে পৃথিবী খুব সুন্দর।” ঋষি আরও বললেন, “ধূমপান, মদ্যপান, রাত্রে পুরুষ বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি, একেই কি বলে আধুনিকা নারী!” ঋষির এই পোস্টের পাল্টা দিয়েছেন স্ত্রী দেবযানী। তিনি বলেছেন, “সমাজমাধ্যমে আমার স্বামীর করা কিছু পোস্ট নিয়ে আমাকে বার বার অবাঞ্ছিত প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পুরো বিষয়টি আমার কাছে অত্যন্ত কুরুচিকর, সম্মানহানিকর, আমি খুবই বিব্রত। এগুলি করার একমাত্র কারণ আমার সামাজিক সম্মানহানি করা, আমার ক্ষতি করা এবং পোস্টদাতার নিজের হীন উদ্দেশ্যসাধন।”
ছোট পর্দার অতি পরিচিত মুখ ইপ্সিতা মুখোপাধ্যায়ের বিবাহবিচ্ছেদেও অবাক তাঁর অনুরাগীরা। অভিনেতা অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পথে হেঁটেছেন টেলি অভিনেত্রী। অভিনেত্রীর কথায়, “বিয়ের ছ’মাসের মাথায় বুঝতে পেরেছিলাম, অনেক কিছু ঠিক নেই। সমস্যা হচ্ছিল। তখনই সিদ্ধান্ত নিই আমরা, আইনি বিয়ে ভেঙে বেরিয়ে আসব।”
বয়সের ব্যবধান থাকার জন্য ট্রোলড হয়েছেন। কিন্তু বলিউডে মালাইকা অরোরা ও অর্জুন কপূর একাধিক বার ‘কাপল গোল’ তৈরি করেছেন সমাজমাধ্যমে। কিন্তু পাঁচ বছর একসঙ্গে থাকার পরে বিচ্ছেদের রাস্তা বেছে নিয়েছেন তাঁরা। বিচ্ছেদ নিয়ে অবশ্য মুখ খোলেননি কেউই। মালাইকা ও অর্জুনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাঁদের বিচ্ছেদের খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বিচ্ছেদ হলেও নিজের মধ্যে সৌজন্য বজায় রাখবেন তাঁরা। যদিও অর্জুনের জন্মদিনে দেখা যায়নি মালাইকাকে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দু’জনই উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এক ফ্রেমে তাঁদের ধরতে পারেননি ছবিশিকারিরা।
প্রেম ভেঙেছে অভিনেত্রী অনন্যা পাণ্ডেরও। দু’বছর একসঙ্গে ছিলেন অনন্যা ও আদিত্য রায় কপূর। একসঙ্গে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গিয়েছিল তাঁদের। কিন্তু সেই প্রেমও স্থায়িত্ব পায়নি। সম্পর্ক ভাঙার পরে নাকি মন ভেঙেছিল অনন্যার। পোষ্যের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলেন। সম্প্রতি অম্বানীদের বিয়েতে মন খুলে নাচতে দেখা গিয়েছিল অনন্যাকে। নেটাগরিকের দাবি, মন থেকে সমস্ত দুঃখ ঝেড়ে ফেলতেই এমন উদ্দাম নৃত্য করছিলেন অভিনেত্রী।