Celebrity Interview

এখানে তিনটে গাড়ি, অথচ ওখানে অটো করে ঘুরেছি! আজ তেলুগু সিনেমা আমায় সম্মানটা ফিরিয়ে দিয়েছে

যিশু সেনগুপ্তের এ বারের পুজো জমজমাট। একই দিনে মুক্তি পাবে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘দশম অবতার’ আর রবি তেজার সঙ্গে তেলুগু ছবি ‘টাইগার নাগেশ্বর রাও’।

Advertisement
পৃথা বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৫১
Jisshu Sengupta talks about his upcoming pujo releases Dawshom Awbotaar and Tiger Nageshwara Rao

‘দশম অবতার’-এ যিশু সেনগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।

টলিউডের ব্যস্ততম অভিনেতাদের তালিকা বানালে তাঁর নাম একদম উপরের দিকে থাকবে। কারণ, শুধু টলিউডই নয়, তিনি বলিউড, তেলুগু সিনেমা, ওটিটি— সব মিলিয়ে সারা ক্ষণ কাজ করছেন। কখনও কাজল, কখনও সামান্থা রুথ প্রভু— তাঁর সহ-অভিনেতাদের নামগুলিও যে কোনও নায়কের কাছে ঈর্ষণীয়। ২০১৮ সালে ‘এক যে ছিল রাজা’র পর তিনি ফের সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে। তা-ও আবার পুজোর থ্রিলারে। এ বারে তিনি সিরিয়াল কিলারের ভূমিকায়। পরিচালকের সঙ্গে মান-অভিমানের পালা মিটল কী করে? প্রশ্ন করল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

প্রশ্ন: বাংলা ছবির জন্য যিশু সেনগুপ্তর ডেট নাকি পাওয়াই যায় না। শেষমেশ ছবিতে পাওয়া গেলেও মুক্তির আগে সাক্ষাৎকারের জন্য কিছুতেই পাওয়া যায় না। এই পরিস্থিতি কেন বলুন তো?

যিশু: এই তো আপনাকে দিব্যি সাক্ষাৎকার দিচ্ছি। আমি যে একদম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছি, এমনটা কিন্তু নয়। ‘পালান’ ছবিটা মে মাসে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। সে সময় আমি ছিলাম। কিন্তু হঠাৎই মুক্তি পিছিয়ে সেপ্টেম্বর হয়ে যায়। মুক্তির আগে আমি গোটা সময়টাই শ্রীলঙ্কায় ছিলাম। এখন হঠাৎই শুট বাতিল হওয়ায় দু’-তিন দিনের জন্য বাড়ি এসেছি। কিন্তু ফোনে আমায় সব সময় পাওয়া যায়।

প্রশ্ন: পুজোয় আবার সৃজিতের ছবিতে। নস্ট্যালজিক লাগছে?

যিশু: সৃজিতের থ্রিলারের একটা আলাদা আবেদন অবশ্যই আছে। ওর পুজোর ছবি আমি আগেও করেছি। তবে সৃজিতের সঙ্গে পুজোর ছবিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য এবং আমি। আবার ছবিটা থ্রিলার। এই চারটে দিক একসঙ্গে পুজোয় আসায় অবশ্যই একটা বিরাট ব্যাপার হয়েছে।

প্রশ্ন: সৃজিতের সঙ্গে আপনার মান-অভিমান চলতেই থাকে। এই ছবির জন্য কী করে রাজি হলেন শেষমেশ?

যিশু: আমি সব সময়ই বলেছি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মান-অভিমান চলবেই। কে স্বামী, কে স্ত্রী বলতে পারব না। তবে এই ঝগড়াটা আটকানো সম্ভব নয়। কিন্তু সৃজিতের সঙ্গে কাজ করার প্রধান কারণ ওর ছবির চিত্রনাট্য। এ নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। কিছু ক্ষেত্রে আমার ডেটের সমস্যা হয়েছে আগে। কখনও কখনও মন কষাকষিও হয়েছে। এক ছাদের তলায় থাকলে সংসারে তো ঝগড়া হবেই। তবে ‘দশম অবতার’ করছি শুধু গল্পের জন্যই।

image of tollywood actor Jisshu Sengupta

যিশু সেনগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: শুধুই গল্প, না কি ‘২২শে শ্রাবণ’ এবং ‘ভিঞ্চি দা’-র মতো সফল ছবির ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির অংশ হওয়াটাও আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল?

যিশু: না, না, শুধুই গল্প। সফল ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি একটা উপরি পাওনা বলতে পারেন। তবে আমি এমন অনেক ছবিতে অভিনয় করেছি যেখানে আমার চরিত্রটা খুবই ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা, হিন্দি, তেলুগু— সবেতেই এমন বহু ছবি করেছি। আমি শুধু দেখি আমার চরিত্রটা গল্প থেকে বাদ দিয়ে দিলে গল্পটা এগোবে কী না। এমন অনেক বলিউড বা ওটিটি সিরিজ় আমি ছেড়ে দিয়েছি যেখানে চরিত্রের গুরুত্ব ছিল না। এমনকি, তেলুগুতেও এমন দুটো ছবি ছেড়েছি, যেখানে খুব বড় বড় অভিনেতা ছিলেন। কিন্তু করিনি। কারণ, আমার কিছু দেওয়ার ছিল না চরিত্রটায়। আবার এমন ছবিও করেছি, যেখানে আমার হয়তো শুধু দু’টো দৃশ্য। কিন্তু সেই দুটো দৃশ্য বাদ দিলে ছবির গল্প দাঁড়াবে না। ‘দশম অবতার’-এ যেমন নায়ক-নায়িকা কিন্তু বুম্বাদা আর অনির্বাণ। আমার চরিত্রটা সেই তুলনায় ছোট। কিন্তু সেটা বাদ দিয়ে দিলে ছবিটাই হবে না।

প্রশ্ন: ‘সীতা রামণ’ বাছার সময়ও কি এমন ভাবনা ছিল?

যিশু: ওই ছবিটা করেছিলাম অনুরোধে। তেলুগু সিনেমায় আমার প্রথম পরিচালক কৃষ। আমার খুবই কাছের বন্ধু এখন। ‘সীতা রামণ’-এর প্রযোজক ওর বন্ধু ছিল। আর জানি না কেন, এই চরিত্রের জন্য ওঁরা আমাকেই চেয়েছিলেন। আমার ডেটের জন্য তিন মাস অপেক্ষা করেছিলেন ওঁরা! অতিথি শিল্পী হিসাবে অভিনয় করি। পাঁচ দিনের মতো কাজ ছিল। আমার অংশটা সহজেই হায়দরাবাদে শুট করতে পারতেন ওঁরা। কিন্তু জানি না কেন, পুরোটাই রাশিয়াতে করলেন! দু’দিন আমার প্যাচ শুট ছিল। সেটা হায়দরাবাদেই করেছি। কিন্তু চার দিনের সব ইনডোর শট রাশিয়ায় করলাম! তেলুগু ইন্ডাস্ট্রি আমায় ভাল অভিনেতা হিসাবে সেই সম্মানটা দেয়। আমি যে প্রযোজকের সঙ্গে এখন তিন নম্বর ছবি করছি, তাঁরও একটা ছবিতে আমি অতিথি শিল্পী হিসাবে কাজ করেছি। কারণ, তিনি নাছোড়বান্দা ছিলেন। বলেছিলেন, আমি নাকি ওঁদের ‘লাকি চার্ম’! এই ভালবাসাটা পাই বলেই অনেক ছবি করি।

প্রশ্ন: বাংলা ছবির ক্ষেত্রেও কি অনুরোধে কাজ করেন?

যিশু: এখানে তো আমায় সে ভাবে কেউ অনুরোধ করেন না! (একটু ভেবে) তবে আমি এখানেও কিছু কিছু করেছি। ‘কিশমিশ’ করেছিলাম। আরও এক জনের নায়কের ছবিতে সামনের বছর করব। কথা হয়ে গিয়েছে।

প্রশ্ন: নিজেকে সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে দেখবেন, কোনও দিন ভেবেছিলেন?

যিশু: আমি কোনও কিছু নিয়েই খুব একটা প্রত্যাশা রাখি না। আমি কোনও ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করব সেটাও ভাবিনি। সেটা প্রথম ‘রাজকাহিনী’তে আমায় সৃজিতই করায়। এই মুহূর্তে আমি যে তিনটে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি, বিশেষ করে তেলুগু সিনেমায় আমি যতগুলো চরিত্র করেছি, তার বেশির ভাগই খলচরিত্র। এখন অবশ্য একটা ছবির শুটিং চলছে, সেখানে আমার চরিত্রটা প্যারালাল হিরোর বলতে পারেন। তবে যেটা পুজোয় ‘দশম অবতার’-এর সঙ্গেই মুক্তি পাচ্ছে, মানে ‘টাইগার নাগেশ্বর রাও’, সেটায় তো আমিই মুখ্য খলচরিত্র। আমি কিন্তু কোনও দিন ভাবিনি যে আমায় নায়ক হতে হবে বা ভিলেন হতে হবে। এ সব নিয়ে চিন্তাভাবনাই করিনি। আমি একটা করে চিত্রনাট্য পড়ি আর সে অনুযায়ী কাজ করি।

প্রশ্ন: অনেক দিন পর্যন্ত একটা ধারণা ছিল, ‘যিশুকে বড্ড ভাল দেখতে। শয়তানের রোলে মানাবে না’। কিন্তু এ বছর ‘দ্য ট্রায়াল’, ‘টাইগার নাগেশ্বর রাও’, ‘দশম অবতার’— সবেই আপনার ধূসর চরিত্র। সচেতন ভাবেই কি নিজেকে অভিনেতা হিসাবে অন্য ভাবে গড়ছেন?

যিশু: পর পর ছবিগুলো এ ভাবে মুক্তি পাচ্ছে বলে এ কথা মনে হতে পারে। আমি কিন্তু আগেও একটা সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে অভিনয় করেছি। ছবিটা এখনও মুক্তি পায়নি। তবে সচেতন ভাবে শুধুই ভিলেনের চরিত্র করব বলে কখনও ছবি বাছাই করি না। চিত্রনাট্য পড়ে যদি মনে হয়, আমার কিছু দেওয়ার আছে, তা হলে করি। যেমন ‘পালান’ খুব মিষ্টি একটা ছবি। সেখানে আমার চরিত্রটা নেহাতই ভালমানুষ। অবশ্যই ছবিটা মৃণাল সেনকে উৎসর্গ করা বলে আরও করতে চেয়েছিলাম। যেমন গত বছর সৌমিত্রজেঠুর (চট্টোপাধ্যায়) জন্য ‘অভিযান’ করেছিলাম। তবে কোনও দিনও কিন্তু ভাবিনি যে, এই ধরনের চরিত্রগুলো আমায় করে যেতে হবে।

প্রশ্ন: কী কী ছবি করছেন, তা নিয়ে আগে না হয় ভাবতেন না। এখন তো তিন-তিনটে ইন্ডাস্ট্রিতে চুটিয়ে কাজ করছেন। এখনও পরিকল্পনা ছাড়াই এগোন?

যিশু: অ্যাবসোলিউটলি। আমি কখনও নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করি না। আসলে অভিনেতারা শুধু শুধু পরিকল্পনা করে কী করবে? সে রকম স্ক্রিপ্টও তো আসতে হবে। না হলে আবার প্রযোজক হয়ে যেতে হয়! আর আমার অত পয়সা নেই যে নিজে প্রযোজনা করে নিজের মতো ছবি করব। আর করলেই যে সে ছবিগুলো চলবে, তা-ই বা কে বলতে পারে! তাই এ সব নিয়ে কোনও রকম পরিকল্পনা করি না। আমি দিনের শেষে অভিনেতা হতে চাই। সেই অভিনেতা নায়কও হতে পারে, তারকাও হতে পারে। কিন্তু অভিনেতা হওয়াটাই সবচেয়ে জরুরি। আর অভিনেতা হিসাবে আমার এখনও অনেক কিছু শেখা বাকি।

প্রশ্ন: বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বলিউডে পাড়ি দিয়েছেন। বলিউডে ‘মণিকর্ণিকা’-র মতো বড় ছবি করার পর তেলুগু সিনেমায় চেষ্টা করেছেন। বার বার নিজের ‘কমফর্ট জ়োন’ ছাড়তে ভয় লাগে না?

যিশু: সেই ২০০১-২০০২ সালে শ্যাম বেনেগালের ‘নেতাজি দ্য ফরগটেন হিরো’ দিয়ে বলিউডে যাওয়া। ওখানে বাঙালি পরিচালকরা সকলেই আমায় চিনতেন বলে পর পর ‘বরফি’, ‘মর্দানি’, ‘পিকু’র মতো ছবি করেছি। ‘মণিকর্ণিকা’ করার পর মনে হল অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে চেষ্টা করে দেখি। সত্যি বলছি, এমন কিছু ভেবে করিনি। ভাষা নিয়ে একটু ভয়ে ছিলাম। কিন্তু কৃষ আমায় অনেকটা গাইড করেছিল। পরে চিরঞ্জীবী স্যার আমায় শেখান, কী করে করে ভাষা না জানলেও সংলাপ বলতে হয়। সিনেমার কোনও ভাষা হয় না, আরও এক বার মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তবে ওখানে গিয়েও কিন্তু আমায় যথেষ্ট স্ট্রাগল করতে হয়েছে।

প্রশ্ন: অসুবিধা হয়নি?

যিশু: একদমই না। ওখানে থাকার জায়গা ছিল। কারণ নীলাঞ্জনার একটা ফ্ল্যাট ছিল ওখানে। এখন অবশ্য আমি পাশের ফ্ল্যাটটা কিনে নিয়েছি। তাই বড় ফ্ল্যাট হয়েছে আমাদের। গাড়ি হয়েছে এখন। কিন্তু প্রথম প্রথম আমি কিন্তু উবার করেই মিটিং করতে যেতাম। এমনকি, অটো করেও গিয়েছি। কলকাতায় তখন আমার বাড়িতে তিনটে গাড়ি। এ দিকে ওখানে আমি অটো করে ঘুরছি! আমার কখনও মনে হয়নি, একটা গাড়ি ভাড়া করে নিই। ধীরে ধীরে ওখানেও আমি একটা সেটআপ তৈরি করেছি।

প্রশ্ন: অভিনেতা হিসাবে এখন তা হলে আপনি তৃপ্ত?

যিশু: না বাবা, যে দিন সেটা বলতে পারব, সে দিনই আমার কেরিয়ার শেষ।

প্রশ্ন: পুজোর কী পরিকল্পনা?

যিশু: পুজোয় একসঙ্গে আমার দুটো ছবি। ‘টাইগার নাগেশ্বর রাও’ও একই দিনে মুক্তি পাচ্ছে। রবি তেজা সাধারণত একটু বড় মাপের ছবিই করেন। কিন্তু এই ছবিটা যেন আগেরগুলোও ছাপিয়ে গিয়েছে। আমার আরও একটা হিন্দি ছবিও মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওটা একটু পিছিয়েছে। না হলে আরও ব্যস্ততা থাকত। এমনিতে কলকাতাতেই থাকব। পুরনো পাড়ায় পুজো হয়। ইচ্ছা আছে দু’দিন থেকে কয়েক দিনের জন্য গোটা পরিবার মিলে বেড়াতে যাওয়ার।

প্রশ্ন: মেয়ে সারা তো মডেলিংয়ে মন দিয়েছে এবং নিজেই সবটা করছে। বাবা হিসাবে আপনি কি উপদেশ দেন?

যিশু: নভেম্বরে ১৮-এ পা দেবে। তাই নারীই বলব। আমরা দুই মেয়েকেই খুব স্বাধীন ভাবে মানুষ করেছি। স্বনির্ভর হতে শিখিয়েছি। এই দুনিয়ায় কী করে টিকে থাকবে হবে, সেটা ওরা জানে। আমি দিশা দেখাতে পারি, কিন্তু সিদ্ধান্ত ওরই। কিছু জিজ্ঞেস করলে নিশ্চয়ই বলব। তবে এখনও পর্যন্ত মডেলিংয়েই মন দিয়েছে। ‘উমা’ করার পর বলত অভিনয় করবে না। কিন্তু এখন কিছু পরিচালক ওর কাছে কিছু গল্প নিয়ে আসছে। সেগুলো শুনছে।

প্রশ্ন: মেয়ে অভিনেত্রী হলে খুশি হবেন?

যিশু: ভাল মানুষ হলে খুশি হব। আর সেটা ও ইতিমধ্যেই হয়ে উঠেছে। তাই আমি খুশি। এ বার ও মডেল হোক, অভিনেত্রী হোক, চাকরি করুক বা বিয়ে করে সংসার করুক— আমি সবেতেই খুশি।

আরও পড়ুন
Advertisement