সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
পুজোয় বাংলা সিনেমার লড়াই এ বার জমজমাট। একগুচ্ছ ছবির মাঝে সৃজিত মুখোপাধ্যায় ময়দানে নামছেন বাংলার প্রথম কপ ইউনিভার্স নিয়ে। তাই রীতিমতো প্রস্ততি নিয়েই তিনি এগিয়েছেন। ‘২২শে শ্রাবণ’ এবং ‘ভিঞ্চি দা’র জোড়া প্রিক্যুয়েলও বলা যেতে পারে এ ছবিকে। কারণ, ফিরছে প্রবীর চৌধুরী-বিজয় পোদ্দাররা। মানে পুজোর প্যাকেজে এ বার সৃজিত-প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়-অনির্বাণ ভট্টাচার্য— সকলেই একসঙ্গে নামছেন। ছবিতে রয়েছে আরও চমক। যিশু সেনগুপ্ত, জয়া আহসানও থাকছেন এই কপ ইউনিভার্সে। ব্লকবাস্টার ছবি করার কোনও রকম ফাঁকই যে পরিচালক রাখতে চাননি, তা স্পষ্ট। ছবির ট্রেলার এখনও মুক্তি পায়নি। শুধু চরিত্রদের প্রথম ঝলক খানিকটা প্রকাশ্যে এসেছে। ২৩ সেপ্টেম্বর, শনিবার সৃজিতের জন্মদিন। ছবির ট্রেলারের আনুষ্ঠানিক মুক্তির আগেই জন্মদিনের পার্টিতে ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে তিনি ভাগ করে নিলেন ছবির ট্রেলার। হাজির ছিল আনন্দবাজার অনলাইনও।
কপ ইউনিভার্সের ভাবনা সৃজিতের অনেক বছর আগে থেকেই ছিল। তিনি বলেছিলেন অতিমারির সময় তাঁর ভাবনাটা আরও স্পষ্ট ভাবে গড়ে ওঠে। এবং যেমনই ভাবনা, তেমনই কাজ। তিনি যে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন, তা টের পাওয়া গিয়েছিল ছবির সেটেও। ছবির শুটিং শেষ হওয়ার এক দিন আগে ‘দশম অবতার’-এর সেটে পৌঁছে গিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন। ঢুকেই পরিচালকের ন’টি অবতারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল। কখনও তিনি শান্ত, ঠান্ডা মাথায় ‘প্রবীর রায়চৌধুরী’র মেকআপ ভ্যানে ঢুকে প্রসেনজিতের সঙ্গে খোশমেজাজে গল্প করছেন। কখনও তিনি উত্তেজিত, ইউনিটের সকলকে শটের আগের খুঁটিয়ে নির্দেশ দিচ্ছেন। কখনও তিনি শিক্ষক। রাজেশ শর্মা এবং প্রসেনজিতের দৃশ্যের মহড়া সামলাচ্ছেন। কখনও তিনি অধৈর্য অভিভাবকের মতো নিজের টিমের এডি-দের বকাঝকা করছেন। এই চার অবতার সারা ক্ষণই ঘোরাফেরা করে ফ্লোরে।
পরিচালক কতটা ‘পারফেকশনিস্ট’ তা তাঁর সেটে গেলেই স্পষ্ট হয়। কারণ সৃজিতের পঞ্চম অবতার বসেন মনিটরের সামনে। যত ক্ষণ না অভিনেতাদের কাছে থেকে তিনি ঠিক যেটা চাইছেন, সেটা পাচ্ছেন, তিনি ছাড়েন না। ক্যামেরার সামনে স্বয়ং ‘বুম্বাদা’ থাকলেও তিনি বার বার টেক নিতে দ্বিধা করেন না। অবশ্য সেই কৃতিত্ব অনেকটাই প্রসেনজিতেরও। শটের আগে একাধিক বার রিহার্সাল দেওয়া তো বটেই। শটের সময়ও সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে সমানে টেক দিয়ে যান তিনি।
শট নিচ্ছেন বলে যে পরিচালকের অন্য কোনও দিকে মন নেই, এমন কিন্তু নয়। তিনি প্রোডাকশনের লোক থেকে আর্ট ডিপার্টমেন্ট— সব দিকেই সমান নজর দেন। এমনকি, জুনিয়র আর্টিস্টরা কোন দৃশ্যে কে কী করবেন, সে দিকেও থাকে তাঁর সমান নজর। এবং এই সব দিক একসঙ্গে সামলানোর ক্ষমতাই রয়েছে তাঁর ষষ্ঠ অবতারে।
সৃজিতের সপ্তম অবতার যেন জাদু জানে। যে জাদুতে এক ছবিতে হাজির হয় ইন্ডাস্ট্রির তাবড় অভিনেতা এবং কলাকুশলীরা। ফ্লোরে ‘২২শে শ্রাবণ’-এর পুরনো নস্ট্যালজিয়া আনাচকানাচে। পরিচালকের কথায়, ‘‘এটা সত্যিই রিইউনিয়নের মতোই। সব চরিত্রের লুকের কন্টিনিউয়িটি রয়েছে এ ছবিতেও।’’ প্রসেনজিৎ এবং রাজেশ শটের মাঝে ফাঁক পেলেই স্মৃতি ঝালিয়ে নিচ্ছেন তাঁদের পুরনো বাণিজ্যিক ছবিগুলি শুট করার অভিজ্ঞতা। অনির্বাণ ভট্টাচার্য অবশ্য টানা রাত জেগে কাজ করে ক্লান্ত। একটু বিরতি পেয়েই তিনি ঘুমিয়ে নিচ্ছেন মেকআপ ভ্যানে।
ছবির সেটে সৃজিতে অষ্টম অবতার আসলে একজন সম্পাদক। তিনি বললেন, ‘‘পুরো ছবিটাই তো আমার মাথায় আছে। মনিটরে বসলেই আমি বুঝতে পারি কী চাই, কী চাই না। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি, ছবিটা জমে গিয়েছে।’’
শেষে দেখা মিলল সৃজিতের নবম অবতারেরও— চিরন্তন প্রেমিক। এই ছবিতেও তো তাঁর সব ‘প্রেম’ একত্র হয়েছেন। যিশু সেনগুপ্ত, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, জয়া আহসান। কথাটা মনে করিয়ে দিতে পরিচালক সজোরে হেসে উত্তর দিলেন, ‘‘আরও একটা প্রেমের কথা ভুল যাবেন না। সেটাই আমার আসল প্রেম— সিনেমা।’’
সৃজিতের নয় অবতারের দেখা মিলেছিল সে দিন সেটেই। দশম অবতারের সাক্ষাৎ পাওয়া গেল তাঁর জন্মদিনের পার্টিতে। সেই অবতার আত্মবিশ্বাসী পরিচালকের। যিনি জানেন কেমন ছবি তাঁর ঝুলিতে রয়েছে। পুজোয় বাকি ছবিগুলিকে টক্কর দেওয়ার জন্য যিনি প্রস্তুত। আসন্ন ছবির প্রতি মমত্ব তাঁর চোখেমুখে। তাই যখন পর্দায় ছবির ট্রেলার দেখানো হচ্ছে, তখন তাঁর চোখ চিকচিক করে উঠল আনন্দে।