মনামী ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।
অভিনয়ের পাশাপাশি ইদানীং অভিনেতারা মন দিয়েছেন ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগে। প্রত্যেকেই কোনও না কোনও ব্যবসা শুরু করছেন। কেউ খুলছেন রেস্তরাঁ, কেউ আবার করছেন শাড়ির ব্যবসা। তবে এখন ইউটিউব চ্যানেলের রমরমা। প্রত্যেকেই প্রায় ইউটিউব চ্যানেল খুলছেন। অভিনেত্রী মনামী ঘোষও এই কাজটি করছেন বেশ মন দিয়েই। আগের বছর তৈরি করেছিলেন একটি মিউজ়িক ভিডিয়ো। এ বছরও পুজোর আগে তৈরি করেছেন নতুন ভিডিয়ো। নাম ‘আইলো উমা বাড়িতে’। আগের ভিডিয়ো ভাল ব্যবসা করেছিল বলেই কি এই কাজটাতে বেশি মন দিয়েছেন অভিনেত্রী? আনন্দবাজার অনলাইনের সব প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব নায়িকার।
প্রশ্ন: গত বছর ‘ভিটামিন এম’ দর্শকের ভাল লেগেছিল। সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই কি নতুন ভিডিয়ো তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন? না কি আগেই থেকেই এটা পরিকল্পনায় ছিল?
মনামী: অবশ্যই একটা আত্মবিশ্বাস তো তৈরি হয়েছেই। মানুষ এত ভালবাসা দিয়েছেন। সেটা সাহস দিয়েছিল। তবে এই ভিডিয়োটা তৈরি করার ইচ্ছা ছিল না। পরিকল্পনা ছিল ‘ভিটামিন এম’-এর মতোই একটু পাশ্চাত্য ঘরানার গান তৈরির করি। বাংলা লোকসঙ্গীতের একটি গানের ভিডিয়ো করার ভাবনা ছিল। তেমনই একটি গান লিখে ২০ দিন আগে আমাদের সঙ্গীতশিল্পী আমায় শোনায়। তখন লাইনগুলো শুনেই আমার মনে হল, এটা তো পুজোর গান। এখনই করতে হবে।
প্রশ্ন: এখন অনেক অভিনেতাই এমন কনটেন্ট তৈরির দিকে বেশি মন দিয়েছেন। অভিনয় থেকে কি লক্ষ্য সরে যাচ্ছে বলে মন হয় আপনার?
মনামী: না, লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছে না। তবে দুই দিকে সমতা বজায় রেখে চলতে হচ্ছে। অভিনেতাদের কথা যদি বলি, সমাজমাধ্যমের পাতায় তাঁরা যদি সক্রিয় না থাকেন, তা হলে সেটা কিন্তু তাঁদের জন্য মাইনাস পয়েন্ট এখন। কারণ এখন সব কিছুই তো লঞ্চ হয় ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামে। তাই দুটো দিকেই নজর দেওয়া প্রয়োজন।
প্রশ্ন: আপনি যে ভাল নৃত্যশিল্পী তা সকলেরই জানা। গান নিয়েও কি চর্চা আছে আপনার?
মনামী: না একদমই না। গান গাইতে ভালবাসি। এখন যেখানে ঘুরতে যাই, সেখানেই সঙ্গে করে একটা মাইক নিয়ে যাই। লাদাখে ঘুরতে গিয়ে তো ওখানে প্যাংগঙ লেকে একা একাই গান গেয়েছি। বিদেশে দেখবেন, সঙ্গীতশিল্পীদের গানের পাশাপাশি দুর্দান্ত নাচের প্রতিভা। যত নামী তারকা, তাঁরা সবাই পুরো প্যাকেজ। সেটা আমায় অনুপ্রেরণা জোগায়। এখানেও আমার গান গাওয়া উদ্দেশ্য ছিল না। প্যাকেজ তৈরি করাটাই উদ্দেশ্য ছিল।
প্রশ্ন: আপনার ইনস্টাগ্রাম ঘাঁটলেই দেখা যায় নানা রকম জায়গার ছবি। তার সঙ্গে বাহারি পোশাকের ছবি। আপনার আলমারিতে এত ধরনের পোশাক সত্যিই রয়েছে?
মনামী: বেড়াতে যাওয়ার জন্য যে আমি খুব বেশি কেনাকাটা করি, তেমনটা নয়। তবে যেখানে যাব প্রতি দিন কী কী পোশাক পরব, তা তো ভেবে নিই। সেখানকার সংস্কৃতি অনুযায়ী জামাকাপড় পরার চেষ্টা করি। যেমন কাশ্মীরে গেলে আমি সাদা সালোয়ার পরব। আর আজকাল আমি সব জায়গায় একটা করে শাড়ি নিয়ে যাই। দক্ষিণ কোরিয়াতেও একটা শাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: সিরিয়াল তো আর করছেন না। অন্য কাজও কি অনেকটা কমিয়ে দিয়েছেন?
মনামী: হ্যাঁ, ইদানীং মনে হয় আমি একটু বেশিই বেছে বেছে কাজ করছি। ছোট পর্দার কাজ তো করছিই না।
প্রশ্ন: বিকল্প কিছু ভেবেছেন নাকি?
মনামী: পছন্দমতো কিছু পেলেও হয়তো এখন কিছু করব না। কারণ, ছোট পর্দার কাজ মানেই মাসের ২৬ দিন ব্লক। বাকি থাকল চার দিন। টাকাপয়সার দিক থেকে খুব ভাল। কিন্তু অন্য কিছু করতে চাইলে করতে পারা যায় না। প্রচুর কাজ এই করে হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। তাই অন্য ধরনের কাজগুলো করার চেষ্টা করছি। টেলিভিশনে কাজ করলে টাকাপয়সার দিক থেকে সুরক্ষিত থাকি ঠিকই, কিন্তু ভাল ভাল কাজগুলো করতে পারব না।
প্রশ্ন: মনামী কি ভাল ব্যবসায়ী?
মনামী: আমার ব্যবসায়িক বুদ্ধি একদমই নেই। আমার মন যেমন বলে, তেমনটা করি। তবে এটা বুঝতে পারি কী কী ধরনের কনটেন্ট তৈরি করলে দর্শকের পছন্দ হবে। ক্রিয়েটিভ বিষয়ের দায়িত্ব আমি নিতে পারব। তবে টাকাপয়সা সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারব না।
প্রশ্ন: অনেক অভিনেতাই এখন প্রযোজনা সংস্থা খুলছেন। আপনার কি তেমন কোনও পরিকল্পনা রয়েছে?
মনামী: এটা তো একটা প্রোডাকশনই বলা যায়। দু’দিনের শুটিংয়ে প্রচুর ব্যবস্থা করতে হয়। আগামী দিনে যদি কোনও সিনেমা তৈরি করার কথা ভাবি, তা হলে টাকাপয়সার দিকটা আমি সামলাতে পারব না মোটেই।
প্রশ্ন: সিনেমা, সিরিজ়, সিরিয়াল— সব মাধ্যমেই কাজ করেছেন। কেরিয়ার এ বার কী ভাবে গোছাতে চান?
মনামী: আমি এখন সেই সব কাজই বেছে করি, যেটা করলে মনে হবে না ভস্মে ঘি ঢালছি। এমন জায়গায় নিজের শ্রম দেব, যেখানে নিজের উন্নতি হবে। এখন আর শুধু টাকা রোজগারের উদ্দেশ্যে কাজ করতে চাই না।
প্রশ্ন: কলকাতার কোন কোন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে চান ভবিষ্যতে?
মনামী: অভিজিৎ সেনের সঙ্গে ইচ্ছা আছে। রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা আছে। আমি রাজকে আগে বলেছি যে, কাজ করতে চাই।
প্রশ্ন: পরিচালকদের থেকে কাজ চাইতে আপনি স্বচ্ছন্দ?
মনামী: আমি খুব একটা বলি না। রাজকে বলেছি। যেমন সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করলাম ‘পদাতিক’ ছবিতে, কিন্তু কখনও কাজ চাইনি। সে ভাবে আমিও বলি না। তবে জাতীয় স্তরের পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করতে চাই।
প্রশ্ন: পুজোয় তো চারটে সিনেমা মুক্তি পাবে, কোন ছবিটা দেখতে যাবেন?
মনামী: আশা করছি, সবাই আমায় প্রিমিয়ারে ডাকবেন। যে প্রিমিয়ারে যেতে পারব, সেই সিনেমাটাই দেখব।
প্রশ্ন: আপনি বিয়ে করছেন কবে?
মনামী: আমি এখনও তো কিছু পরিকল্পনা করিনি। দেখি, যে দিন ইচ্ছা হবে বিয়ে করে ফেলব। সবাই চমকে যাবে।