Koneenica Interview

এখন যদি আমায় এমন বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হত, তা হলে আমি এই বিয়েটা করতাম না: কণীনিকা

২৩ বছর এই ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি কাটিয়ে ফেলেছেন। ব্যক্তিগত জীবন থেকে পেশাদার জীবন— এসেছে বহু চড়াই-উতরাই। ‘ভবানীপুর হাউস’-এ সেই যাত্রাই আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন কণীনিকা।

Advertisement
উৎসা হাজরা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:১৮
photo of Tollywood Actor Koneenica Banerjee

ফিরে দেখা টলিউডে কণীনিকার ২৩ বছরের যাত্রা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

প্রশ্ন: আপনাকে দেখেই অসুস্থ লাগছে, কেমন আছেন?

কণীনিকা: ভাল নেই। আমি সত্যিই জানি না। সঠিক ভাবে বলতে পারব না। তবে এই সার্জারি যখন হল, তখন আমি অনুভব করেছি, আমাদের শরীর হল মনের প্রতিচ্ছবি। মনখারাপ থাকলে, শরীর খারাপ হবে। হয়তো আমার মনখারাপ। ছোট থেকেই আমি মাঝেমাঝে এমন একটা সময় আসে যখন কারও সঙ্গে দেখা করতে ভাল লাগে না, কথা বলতে ইচ্ছা করে না। এই মুহূর্তেও আমি তেমনই একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। যাকে এখনকার ভাষায় ‘ডিপ্রেশন’ বলে। আমার ভাষায় এটাকে মনখারাপই বলে। মন ভাল নেই, তাই শরীর সঙ্গ দিচ্ছে না।

Advertisement

প্রশ্ন: মন কেন ভাল নেই?

কণীনিকা: সেটা তো বলা যাবে না। মনের কথা মনে রাখাই ভাল। মেয়েকেও আমি বলি না। মন এমন একটা নরম জিনিস, কোথায় আছি তা খুঁজে পাওয়া যায় না। মন যে কেন ভাল নেই এই প্রশ্ন আমি নিজেকেও করি, উত্তর পাই না। খুব ইন্টারেস্টিং, অনেকটা ফ্রেঞ্চ সিনেমার মতো।

প্রশ্ন: অবসাদ কাটানোর ওষুধ কী?

কণীনিকা: ডিপ্রেশন কাটানোর ভাল ওষুধ হল ভাল পরিবার। ভাল বন্ধুও হতে পারে। আমার প্রচুর বন্ধু আছে। কিন্তু আমায় যদি জিজ্ঞেস করা হয় আমার ভাল বন্ধু কে আছে? তা হলে বলব তৈরি হচ্ছে। আশা করব মেয়েই আমার প্রিয় বন্ধু হবে। আর কয়েকটা বছর বাদে। আর ভালমন্দ খাবার পেলেও কিন্তু মন ভাল লাগে। একটু আগে আপনার সামনে এই জন্যই আইরিশ কফিটা অর্ডার করলাম। জীবনটা তো তেতো, তার মধ্যে থেকেই মিষ্টিটা খুঁজে বার করে নিতে হবে।

photo of Tollywood Actor Koneenica Banerjee with her family

কণীনিকার অবসাদ কাটানোর ওষুধ কী? ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

প্রশ্ন: এতগুলো বছরের টলিউডের কেরিয়ারে নিজেকে তাড়াতাড়ি গুটিয়ে নিচ্ছেন কি?

কণীনিকা: গুটিয়ে নিইনি তো। আমায় নিয়ে নির্দেশকরা ভাবলেই কাজ করব। আমি আমার বলিরেখা নিয়ে খুশি। আমি চাই নির্দেশকরা আমার বলিরেখাকে ভালবাসুক। ক্লিনিকে গিয়ে বোটক্স কিংবা মোটা ঠোঁট করিয়ে আসতে পারব না। আমার যা আছে তাতেই খুশি। আমি ভাল অভিনেতা হতে এসেছিলাম। নায়িকা হওয়ার লোভ কখনও আমার ছিল না।

প্রশ্ন: কিন্তু কোনও দিন কি আপনার নায়িকা হওয়ার শখ হয়নি?

কণীনিকা: হ্যাঁ, ছিল তো। কিন্তু চার-পাঁচটা ভাল ভাল কাজ পাওয়ার পর আর পেলাম না। তখন নিজেকে প্রশ্ন করলাম, কেন পেলাম না?

প্রশ্ন: উত্তর পেয়েছিলেন?

কণীনিকা: অনেক কারণে পাইনি। আমার ‘পিআর’ করার প্রতিভা নেই। আমি কখনও কারও সঙ্গে মেলামেশা করে, তার সঙ্গে বেডরুমে গিয়ে কাজ পাওয়ার চেষ্টা করিনি। অনেকেই করেছে, কিন্তু আমি তাঁদের জাজ্‌ করি না। আজ আমার পড়াশোনা নিয়ে বড় হয়েছি। তার থেকেও বড় কথা ‘ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই’-এর ব্যাপার। তাঁদের হয়তো চাহিদা ছিল। তাই বিষয়গুলো উপভোগ করেছে। কিন্তু আমি আমার যাত্রায় খুশি।

photo of Tollywood Actor Koneenica Banerjee

এখন কি নায়ক-নায়িকাদের মধ্যে পারিশ্রমিকের বৈষম্য ঘুচেছে, কী মনে করেন কণীনিকা? ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

প্রশ্ন: কিন্তু পোস্টারে নিজের মুখ না দেখতে পেলে কি একটুও খারাপ লাগে না?

কণীনিকা: এখনও খুঁজি আমি। ‘প্রজাপতি’র সাফল্য নিয়ে আমি খুশি। কিন্তু সেখানে যখন পোস্টারে আমার ছবি নেই মনখারাপ তো হবেই। যে কোনও অভিনেতার এমন অনুভূতি হওয়া স্বাভাবিক। তাই আমি নন্দিতাদি (নন্দিতা রায়) এবং শিবুদার (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) কাছে কৃতজ্ঞ যে, দুটো ছবিতে আমার মুখ দেখা গিয়েছে।

প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে ২৩ বছরের যাত্রায় আপনার কি মনে হয় পোস্টারে মুখ কিংবা মুখ্য চরিত্রে কাজ পাওয়ার জন্য প্রযোজকের কাছের মানুষ হওয়া জরুরি?

কণীনিকা: চরিত্রের গভীরতা থাকলে কাছের মানুষ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এগুলো নিয়ে আগে ভাবতাম। এখন আর ভাবি না।

প্রশ্ন: আপনার সমসাময়িক অনেকে বেশি সফল, ঈর্ষা হয় না?

কণীনিকা: না। আমি আধ্যাত্মিক জীবনযাপন করে এসেছি বরাবর। আমায় কোনও কিছুই প্রভাবিত করে না। অনেকে তো মাচা শো করেও রোজগার করেছে। কিন্তু আমি করিনি।

প্রশ্ন: কেন, মাচা শোয়ে আপনার ডিম্যান্ড কম ছিল?

কণীনিকা: না, করেছি যেটুকু করার। তার পর এক বার গেলাম গ্রামে, তখন আমার বুকের উপর লেজ়ার আলো ফেলল। তা দেখেই আমার রাগ হল। তার পর সেই যে ছাড়লাম, আর যাত্রা, মাচা শো— কিছু করিনি। আমরা তো পণ্য। তাই তো আমাদের কোনও সম্মান নেই। এখন যদিও আমার রোজগার কম, কাজ নেই। কিন্তু তার পরেও মাচা বা যাত্রা করার কথা ভাবতে পারি না ওই ঘটনার পরে।

প্রশ্ন: এখন কি নায়ক-নায়িকাদের মধ্যে পারিশ্রমিকের বৈষম্য ঘুচেছে?

কণীনিকা: প্রযোজক, ম্যানেজাররা যখনই আসে বলে বাজেট নেই। এখন আমি ভাল টাকা না দিলে কাজ করি না। সারা জীবন অনেক কম টাকায় কাজ করে এসেছি। এখন আমায় ১০ ঘণ্টার জন্য কাজে নিতে গেলে আমার সঠিক পারিশ্রমিক দিতে হবে। আমায় তো চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে আমি। সব সময় মা-বাবা বলেছেন, সঠিক পথে চলতে।

প্রশ্ন: আপনার বিয়ের সিদ্ধান্তটাও তো মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে আপত্তিকর হতে পারত, স্বামীর এক জন বড় ছেলে আছে। সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কী ভাবে?

কণীনিকা: বিয়ের ছ’বছর পর আজ যদি এখনকার কণীকে এই প্রশ্নটা করা হত, আজ যদি এমন বিয়ের প্রস্তাবটা দেওয়া হত, তা হলে এই বিয়েটা আমি করতাম না। এই ছ’বছরে যাত্রায় আমি দেখেছি খারাপ আর ভালটা। কিন্তু সেই সময় দাঁড়িয়ে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। আমি মা হতে চেয়েছিলাম। বিয়ে করতে চাইনি কিন্তু। আমি প্রথমে ওকে ‘না’ বলেছিলাম। আমার মা বলেছিলেন, তুমি ওকে কৃষ্ণরূপে সেবা কোরো। এই ছ’বছরে অনেক কিছু বদলে দিয়েছে। সেই সময় আমি সংসারের স্বপ্ন দেখেছিলাম। সেই স্বপ্নটা আজ আর নেই।

আরও পড়ুন
Advertisement