নির্বাচনী প্রচারে দেব। ছবি: সংগৃহীত।
লোকসভা নির্বাচন সমাপ্ত। ধীরে ধীরে চেনা ছন্দে ফিরছেন দেব। আগামী দিনগুলো কী ভাবে কাটবে অভিনেতার? পাশাপাশি, তিন মাস দীর্ঘ ভোটপর্বের দিকে ফিরে তাকালেই বা কী মনে হচ্ছে? ঘাটাল কেন্দ্রের জয়ী সাংসদ মনের ঝাঁপি উজাড় করলেন আনন্দবাজার অনলাইনের সামনে।
নির্বাচনের সময় প্রতিদিন প্রায় ১৮-১৯ ঘণ্টা কাজ করেছেন দেব। ওজনও অনেকটাই কমেছে। এখন কি একটু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে? অভিনেতা বললেন, ‘‘এ বারের নির্বাচনটা একটু অন্য রকম ছিল। ক্রমাগত ব্যক্তিগত আক্রমণ। বড় বড় নেতারা যে ধরনের শব্দ ব্যবহার করছিলেন, আমি তার বিরুদ্ধে।’’ নির্বাচনের সময়ে দেবের উপরে ক্রমাগত ব্যক্তিগত আক্রমণ এসেছিল। দেবের কথায়, ‘‘যত দিন রাজনীতি করব, জানি, আমাকে নিয়ে আলোচনা হবেই। কিন্তু জেতা-হারা নিয়ে আমার কোনও ভয় ছিল না। কিন্তু আমি জানতাম, আমি যা করছি, সেটা ঠিক।’’ একই সঙ্গে তিনি যোগ করলেন, ‘‘জেতা-হারাই যদি বিচার্য হয়, তা হলে আমি তো এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছি যে, ভালবাসা দিয়েও জেতা সম্ভব।’’
সদ্যসমাপ্ত নির্বাচন থেকে দেব কী শিখলেন? বললেন, ‘‘আমি খুশি। চাইলে আমিও অনেক কিছু বলতে পারতাম। হিরণের (লোকসভা নির্বাচনে ঘাটাল কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী) ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমারও অনেক কিছু জানা ছিল! কিন্তু আমি এটা দেখে খুশি যে, এত কিছুর মধ্যেও দেব নিজের অবস্থান থেকে নড়েনি।’’ নির্বাচনে ইডি বা সিবিআই-এর মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার মাধ্যমে যে বার বার তাঁর দলের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, সে কথা উল্লেখ করলেন দেব। তাঁর কথায়, ‘‘আমি জানতাম, যাঁরা আমার ভোটার এবং দর্শক, তাঁরা জানেন, দেব কেমন ছেলে। আমার এমন কারও থেকে সার্টিফিকেট লাগবে না, যাঁদের নিজেদের গায়ে কলঙ্ক আছে।’’
নির্বাচনের সময়, লাগাতার ব্যক্তিগত আক্রমণে নিজেকে কী ভাবে ঠিক রাখতেন দেব? অভিনেতার সহজ উত্তর, ‘‘আমি হাসতাম। আমার জন্য খেলাটা আরও সহজ হয়ে গিয়েছিল। কারণ, কর্মা রয়েছে।’’ এই প্রসঙ্গে তিনি ব্যখ্যাও করলেন। বললেন, ‘‘কারণ যে তথ্যগুলো প্রকাশ করা হয়েছিল, তার মধ্যে তো কিছুই ছিল না। মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, আমাকে জোর করে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
আগামী সপ্তাহে দেব অভিনীত ছবি ‘বাঘা যতীন’-এর টিভি প্রিমিয়ার। সমানতালে সব দিক সামলানোর রহস্য কী? দেবের উত্তর, ‘‘আমি প্রিটেনশাস নই! যতটুকু পারি, ততটাই করি। রাজনীতি বা অভিনয়, যতটা পারব, ঠিক ততটাই করি। বাড়তি কথা দিই না।’’ ভোটে জেতার পর সম্প্রতি ঘাটালে বৃক্ষরোপণ উদ্যোগের সূচনা করেছেন দেব। এই উদ্যোগে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও রুক্মিণী মৈত্র শামিল হয়েছেন। দেবের কথায়, ‘‘দল আমার এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। আগামী ২১ জুনের মধ্যে আমরা ঘাটালে প্রায় ২ লক্ষ গাছ লাগাতে পারব।’’ দেব জানালেন, ইন্ডাস্ট্রির আরও অনেকেই এই উদ্যোগে অংশ নিতে তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে মেসেজ করেছেন। সাংসদের কথায়, ‘‘আগামী পাঁচ বছরে আমাদের ১৫ লক্ষ গাছ লাগানোর ইচ্ছা রয়েছে।’’ এরই সঙ্গে দেব যোগ করলেন, ‘‘জেলাশাসকের থেকে জমি চেয়েছি। সেটাকে অরণ্যে পরিবর্তন করার ইচ্ছে রয়েছে।’’
‘বাঘা যতীন’ ছবিতে দেবের অভিনয় নানা মহলে প্রশংসিত হয়েছে। তবে ছবিমুক্তির আট মাস পরে এমন কোনও মন্তব্য কি তাঁর এখনও মনে রয়েছে? দেব হেসে বললেন, ‘‘সমাজমাধ্যমে একটি মন্তব্য মনে পড়ছে। বলা হয়েছিল, ছবিটা নাকি এতটাই তথ্যনিষ্ঠ হয়েছে যে, বিপ্লবীদের ইতিহাসের দলিল হয়ে রয়ে যাবে।’’
‘বাঘা যতীন’ মুক্তির আগেই পরিচালক অরুণ রায় ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এই মুহূর্তে তিনি ক্যানসারমুক্ত। দেব কি অরুণ রায়ের সঙ্গে আবার ছবির পরিকল্পনা করছেন? অভিনেতা হেসে জানালেন, ‘‘অরুণদা খুবই কঠিন একটা লড়াই জিতেছেন। আমি খুবই খুশি। দু-একটা প্রজেক্ট আলোচনার স্তরে রয়েছে।’’
পুজোয় মুক্তি পাবে দেব অভিনীত ছবি ‘টেক্কা’। এই ছবির শুটিং শেষ করেছেন তিনি। খুব দ্রুত শুরু করবেন ‘খাদান’-এর দ্বিতীয় ভাগের শুটিং। আর নতুন ছবির ঘোষণা? দেব বললেন, ‘‘আমি তো একবারে একটা ছবিই করি। ‘খাদান’-এর পর একটু বিরতি নেব। তার পর নতুন কাজ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’’