RG Kar Case Verdict

‘সঞ্জয়ই একমাত্র দোষী, মেনে নিতে পারছি না!’ রায় ঘোষণায় হতাশ টলিপাড়ার আন্দোলনকারীরা

“সঞ্জয়ই একমাত্র দোষী। মেনে নিতে পারছি না। একা কেউ এত নৃশংস ভাবে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুন করেছেন, বিশ্বাস করতে পারছি না”, আরজি কর-কাণ্ডের রায় ঘোষণা হতেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া টলিপাড়ায়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৩০
আরজি কর-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়।

আরজি কর-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

তারিখের পর তারিখ, তবু বিচার মিলছিল না। আন্দোলনের পর আন্দোলনে উত্তাল গোটা দেশ। আরজি কর-কাণ্ডে নির্যাতিতা-মৃতা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের বিচারের দাবিতে। শনিবার শিয়ালদহ আদালতের রায়, তরুণীকে ধর্ষণ করে খুন করেছেন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। সংবাদমাধ্যমে সেই খবর শুনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া টলিউডে। তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্য সরকার দোষী সাব্যস্ত করেছিল সঞ্জয়কে। পাঁচ মাস পরে একই রায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থারও। তা হলে আলাদা কী হল? প্রশ্ন উঠেছে বাংলা বিনোদন দুনিয়ার অন্দরে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করতেই ক্ষোভ উগরে দিলেন পরিচালক-অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল। তিনি আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত। তাঁর কথায়, “আর কেউ দোষী নয়! সঞ্জয়ই একমাত্র দোষী। মেনে নিতে পারছি না। একা কেউ এত নৃশংস ভাবে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুন করেছেন, বিশ্বাস করতে পারছি না।” অভিনেত্রীরও একই প্রশ্ন, রাজ্য সরকার আর কেন্দ্রের বিচারের মধ্যে তা হলে পার্থক্য কী রইল? প্রথম পক্ষ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যাকে দোষী ঠাউরেছিল তাকেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কাঠগড়ায় তুলল। এতে অনেক প্রশ্নের সদুত্তর মিলল না! চৈতির আরও বক্তব্য, “সঞ্জয়ের চেহারা ততটাও বলশালী নয়। তাঁকে নাকি বাধা দিতে পারলেন না মৃতা চিকিৎসক! এত অত্যাচারের কোনও আভাস পর্যন্ত পেল না অত বড় হাসপাতাল চত্বরের কেউ। এটা বিশ্বাসযোগ্য?” রায় ঘোষণা প্রসঙ্গে রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তবে কোনও সাড়া মেলেনি পরিচালকের তরফে।

মৃতার বিচার চেয়ে আন্দোলনের সঙ্গে প্রথম দিন থেকে প্রত্যক্ষ ভাবে জুড়ে রয়েছেন অভিনেতা-চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ। তাঁর সাফ কথা, “যাঁর গেল, তাঁর গেল। তার মা-বাবার অভাব আমরা কোনও দিন পূরণ করতে পারব না। ওঁরা যত দিন বাঁচবেন, তত দিন ওঁদের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করব। ‘পাশে’ শব্দটি ইচ্ছে করেই বললাম না। পাশে সকলেই থাকতে পারেন। সঙ্গে থাকাই আসল।”

রাতের পর রাত জেগেছে শহর। পথে নেমেছে মানুষের ঢল। দিনের পর দিন দোষীদের শাস্তি চেয়ে গলা ফাটানো। পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত আন্দোলনের সঙ্গে শুরু থেকে যুক্ত। রায় নিয়ে খুব বেশি কথা বলেননি পরিচালক। শনিবার তিনি মাসিকে হারিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বললেন, “আন্দোলন একদিনে হয় না। অনেক দিন সময় লাগে।” তিনি মনে করছেন, এটাই লড়াইয়ের শুরু। তাই এখনই আশাহত হতে রাজি নন তিনি।

বিরসা আশাহত না হলেও আশার আলো নিবেছে ঊষসী চক্রবর্তী, দেবলীনা দত্ত, তনিকা বসু, মোক্ষর। প্রত্যেকে ক্ষুব্ধ। সেই ক্ষোভ, সেই হতাশা লুকোনোর চেষ্টাও করেননি কেউ।

উষসীর যেমন দাবি, “এক জন বোড়েকে ব্যবহার করে রাঘব-বোয়ালেরা অধরাই থেকে গেল!” তাঁর মতে, পুরোটাই জলের মতো পরিষ্কার। অবশ্যই সঞ্জয় নির্দোষ নন। কিন্তু অপরাধের আগে-পিছে আরও যাঁরা ছিলেন, তাঁদের গায়ে বিন্দুমাত্র আঁচড় লাগল না? রায় জেনে বিস্মিত তিনি। হতাশ অভিনেত্রীর আরও বক্তব্য, “মনে হচ্ছে, দু’দিন পরে বাকিরা খোলা হাওয়ায় ঘুরতে থাকবেন।”

প্রতিম ডি গুপ্তর ‘চালচিত্র’ ছবিতে ‘পুতুল’ চরিত্রে অভিনয়ের দৌলতে তনিকা এখন আরও পরিচিত। তার আগে থেকেই অবশ্য তিনি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। অনেক সময়েই কাজ ছেড়ে রাত জেগেছেন, পথে নেমেছেন। রায় শুনে তাঁর বক্তব্য, “আদালতের রায় শুনে বিরক্তি বাড়ল। জানতাম, এ রকমই রায় বেরোবে।” এ-ও যোগ করেছেন, এখন কোনও বিষয়ে স্বাধীন মতপ্রকাশের উপায় নেই। সঙ্গে সঙ্গে কটাক্ষের বান, পাল্টা আক্রমণ। সে সব উপেক্ষা করেই তাঁর দাবি, “সঞ্জয়ের শাস্তি পেয়েই বা কী লাভ? যাঁদের জামিনে মুক্তি পাওয়ার কথা তাঁরা পেয়ে গেলেন। প্রথম থেকেই সঞ্জয়ের কাঁধে বন্দুক রাখা ছিল। কেন যে মাঝে এত নাটক হল— সেটাই বুঝলাম না।”

আরজি কর-কাণ্ডের রায় জেনে ফের রাজ্য এবং দেশের বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা হারিয়েছেন এঁরা। সে কথা জানাতেও দ্বিধা করেননি। চৈতি থেকে মোক্ষ— প্রত্যেকের মতে, “আরও এক বার বিচারের বাণী নীরবে, নিভৃতে কাঁদল। আরও এক বার প্রমাণিত, দেশ থেকে সর্বোচ্চ আদালত— দুর্নীতির অর্থে সব কিছুই বিক্রি হয়ে গিয়েছে।”

(ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনায় যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম, পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। আনন্দবাজার অনলাইন সেই নিয়ম মেনেই আরজি কর পর্বের প্রথম দিন থেকে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের নাম বা ছবি প্রকাশ করেনি। শনিবার আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করায় আমরা তাঁর নাম এবং ছবি প্রকাশ করা শুরু করছি।)

Advertisement
আরও পড়ুন