দর্শনা, বিবৃতি, বিশ্বাবসু, সোমরূপ এবং অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় (বাঁ থেকে ডান)
চলছিল ‘দিন বদলের গান’। ‘উন্নয়নের কাণ্ডারি হব, মন ভরা বিশ্বাস, কান্না ভুলে দু’হাত তুলে ধরব আজকে আকাশ’। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিভিন্ন ঝলক দেখা যাচ্ছিল। এরই মধ্যে আচমকা চোখ পড়ল টলি-পাড়ার ৪ পরিচিত মুখের দিকে! বিজেপি-র প্রচারমূলক গানে দর্শনা, বিবৃতি, বিশ্বাবসু ও সোমরূপ। তবে কি এ বার ২ টলি নায়িকা সহ রাসমণির ‘ভূপাল’-ও বিজেপি-তে যোগ দিতে চলেছেন?
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সে ভিডিয়োটি শেয়ার করতেই জল্পনার সূচনা। আনন্দবাজার ডিজিটাল থেকে যোগাযোগ করা হল ৪ শিল্পীর সঙ্গেই।
তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেল, এ ভিডিয়োটির সম্পর্কে আদৌ অবগত নন কেউই। আনন্দবাজার ডিজিটালের সূত্রেই তাঁরা জানতে পারেন যে, বিজেপি-র প্রচারমূলক ভিডিয়োতে তাঁদের দেখা গিয়েছে। তবে? তাঁদের ৪ জনের এই ভিডিয়ো এল কোথা থেকে? দেখা যাচ্ছে, মনের আনন্দে সেই ৪ জন ছুটে আসছেন ক্যামেরার দিকে। যেন কোনও শ্যুটের ক্লিপিং।
৪ অভিনেতা-অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই ক্লিপিংটি আসলে একটি বিজ্ঞাপনী ভিডিয়োর ছোট্ট একটি অংশ। বিজ্ঞাপনের সেই ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন ‘চন্দ্রবিন্দু’ খ্যাত পরিচালক, গীতিকার ও সুরকার অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়।
সে তথ্যের সূত্র ধরে যোগাযোগ করা হল অনিন্দ্যর সঙ্গে। তিনি জানালেন, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে একটি রঙের সংস্থার জন্য ওই দু’টি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি বানিয়েছিলেন তিনি। ‘পুজো এল ফিরে’। যেখানে অভিনয় করেছিলেন দর্শনা বণিক, বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বাবসু বিশ্বাস ও সোমরূপ দাস।
অনিন্দ্য জানালেন, ‘‘ভিডিয়োটির ব্যাপারে জানা ছিল না। এখন দেখছি, বিজেপি-র প্রচারে ওই বিজ্ঞাপনের অংশ ব্যবহৃত হয়েছে। এটা অনভিপ্রেত। যে সম্পাদক এই কাজটি করেছেন, হয়তো না বুঝেই এটা করে ফেলেছেন। কিন্তু তাও বিজ্ঞাপনী ছবির অংশ তুলে দেওয়াটা ঠিক নয়। তবে হ্যাঁ, একই সঙ্গে এটাও বলব যে, কাজটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয় বলেই মনে হচ্ছে আমার।’’ পরিচালককে স্বত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানালেন, আপাতত এ বিষয়ে তাঁর কোনও ধারণা নেই। যে সংস্থার জন্য ভিডিয়োটি বানানো, সেটা সম্পূর্ণ তাদের উপর নির্ভর করছে।
দক্ষিণ থেকে বাংলা, ছবির জগতে পরিচিত মুখ দর্শনা বণিক। নতুন ছবি ‘মৃগয়া’-য় অভিনেতা অঙ্কুশ হাজরার সঙ্গে জুটি বাঁধতে দেখা যাবে দর্শনাকে। অভিনেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও একই কথা বললেন যে, তাঁর কাছে এটার কোনও খবর ছিল না। আর এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার কোনও ইচ্ছে তাঁর নেই। নিজের কাজের মধ্যেই ডুবে রয়েছেন তিনি। তবে হ্যাঁ, একটি নির্দিষ্ট দলকে তিনি সমর্থন করেন। আজ থেকে ১০ বছর পরেও যদি তারা ভাল কাজ করে, তবে তখন ভেবে দেখবেন।
বাবুল সুপ্রিয়র ‘বহু যুগের ওপার হতে’, হরিহরণের ‘ইশক’, বিভিন্ন গানের ভিডিয়োয় সম্প্রতি কাজ করেছেন বিবৃতি। এ ছাড়াও অনীক চৌধুরীর ‘মিস খান অব তো হস দো’ ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। বিবৃতি জানালেন, ‘‘ভিডিয়োটি দেখে নেতিবাচক ভাবনা আসছে না মনে। ছবিটি তৈরি হয়েছিল জনগণের জন্য। রাজনৈতিক কর্মীরাও তো তাঁদেরই মধ্যে পড়েন। এ বার তাঁরা কী ভাবে তাকে ব্যবহার করবেন, সেটার দায় নেই আমার। আর যদি রাজনীতির কথা বলা হয়, আমি কোনও দিন কোনও দলে যোগ দেব না। একেবারেই অরাজনৈতিক একটি মানুষ আমি।’’
বিশ্বাবসু আপাতত ‘জি বাংলা’-র দু’টি ধারাবাহিকে একসঙ্গে অভিনয় করছেন। ‘রাণী রাসমণি’-র ভূপাল থেকে ‘মিঠাই’-এর সন্দীপ— ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন বিশ্বাবসু বিশ্বাস। তাঁর মতে, ‘‘আমি এক জন সম্পাদক হয়ে বলতে পারি, এই কাজটি নান্দনিক ভাবে বিরক্তিকর। সম্পূর্ণ অন্য উদ্দেশ্যে বানানো একটি ছবির থেকে একটা অংশ তুলে নিয়ে অন্য কাজে লাগানোটা ঠিক নয়। এ ছাড়া এই ভিডিয়োটি নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই।’’ রাজনীতির প্রসঙ্গে তাঁরও একই মতামত। বিজেপি তো দূর অস্ত, কোনও রাজনৈতিক দলেই যোগ জেওয়ার পরিকল্পনা নেই। অদূর বা সুদূর কোনও ভবিষ্যতেই দলীয় রাজনীতিতে পা রাখার ইচ্ছে তাঁর নেই।
সোমরূপের নতুন ছবির শ্যুটিং চলছে। ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, ইশা সাহা ও বাসবদত্তা চক্রবর্তীর সঙ্গে ‘তরুলতার ভূত’ ছবিতে অভিনয় করছেন তিনি। সোমরূপের কথায়, ‘‘মূল স্রোতের রাজনীতির সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। কোনও দিন সেই সম্পর্কটি গড়ে তুলতেও চাই না। তবে ব্যক্তিগত ভাবে এই ভিডিয়োটি নিয়ে বললে, কোনও রাজনৈতিক দলের প্রচারমূলক ভিডিয়োতে থাকতে চাই না। তাই এই ঘটনাটি জানার পর মোটেও ভাল লাগেনি আমার।’’
রাজনীতিতে যোগদান নিয়ে স্পষ্ট জবাব দিলেন ভিডিয়ো ক্লিপিংয়ের চরিত্ররা। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেল, বিজেপি-র প্রচারের জন্য বানানো ভিডিয়োতে অন্য একটি বিজ্ঞাপনী ছবির ক্লিপ ব্যবহার করা নিয়ে কি তবে স্বত্ব সংক্রান্ত লড়াই শুরু হবে?