নীলবাড়ির লড়াইয়ে টলিউডকে পাশে পেতে তৎপর বিজেপি।
অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ছিলেনই। নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে এ বার টলিউডের কলাকুশলীদেরও পাশে পেতে তৎপর হয়ে উঠছে বিজেপি। সে জন্য মঙ্গলবার শহরে ‘টলিউড বাঁচাও অভিযান’ করছে তারা। তাতে সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়া তারকারা যেমন থাকছেন, তেমনই দেখা যাবে গোড়া থেকে পদ্মশিবিরে শামিল লোকজনকেও। গেরুয়া শিবিরের দাবি, ‘বিশ্বাস ভ্রাতৃদ্বয়’-এর ‘একচেটিয়া দখল’-এর হাত থেকে বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতেই উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। এঁরা হলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং তাঁর ভাই স্বরূপ বিশ্বাস। যাঁদের বিরুদ্ধে এর আগেও ‘ক্ষোভ’ দেখা দিয়েছিল টলিউডে।
চলচ্চিত্রনির্মাতা এবং রাজ্য বিজেপি-র সম্পাদক সঙ্ঘমিত্রা চৌধুরীর নেতৃত্বে মঙ্গলবার দুপুরে প্রতিবাদ নিছিল শুরু হওয়ার কথা। টালিগঞ্জে কিশোরকুমারের মূর্তির পাদদেশ থেকে টেকনিশিয়ান স্টুডিয়ো, এনটি-ওয়ান স্টুডিয়ো হয়ে বিকেলে মিছিল এসে শেষ হওয়ার কথা দাসানি স্টুডিয়োয়। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ছাড়াও সবমিলিয়ে টলিপাড়ার প্রায় তিন হাজার কলাকুশলী মিছিলে অংশ নেবেন বলেই বিজেপি-র দাবি। তাঁদের নেতৃত্ব দিতে হাজির থাকার কথা বিজেপি যুব মোর্চার সম্পাদক তথা অভিনেত্রী রিমঝিম মিত্র, সদ্য বিজেপি-র রাজ্য কর্মসমিতিতে জায়গা পাওয়া সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো পরিচিত মুখদের। এ ছাড়াও, জোড়াফুল ছেড়ে সম্প্রতি পদ্মশিবিরে যোগ দেওয়া অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ এবং হিরণ চট্টোপাধ্যায়েরও মিছিলে থাকার কথা।
বিজেপি-তে নাম লেখানোর পর থেকেই একাধিক বার টলিউডের ‘মাফিয়ারাজ’ নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছে রুদ্রনীলকে। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, শাসকদলের বিশেষ কয়েক জনই টলিউড নিয়ন্ত্রণ করেন। কোন ছবিতে কে নায়ক হবেন, কে নায়িকা হবেন, এমনকি, কত জন কলাকুশলী কাজ করবেন, এ সবই তাঁরা ঠিক করে দেন। যে কারণে বাংলা ছবিতে বিনিয়োগ থেকে বহু প্রযোজকই পিছু হটেন। সেই সময় রুদ্রনীলের দাবি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। টলিউডের বহু শিল্পীই প্রকাশ্যে তাঁর সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু রুদ্রনীলের সেই প্রতিবাদকেই এ বার টলিউডে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের কাজে ব্যবহার করছে বিজেপি। কিন্তু শাসকদলের কোন নেতারা ‘মাফিয়ারাজ’ চালাচ্ছেন? কাদের একচেটিয়া দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল? সঙ্ঘমিত্রা বলেন, ‘‘কাদের বিরুদ্ধে আবার? মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং তাঁর ভাই স্বরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে! স্বরূপ বিশ্বাসের তো একটাই পরিচয়— তিনি মন্ত্রীর ভাই। তা সত্ত্বেও তাঁর অঙ্গুলিহেলনেই চলে গোটা টলিউড। এটা চলতে দেওয়া যায় না। তাই রাস্তায় নেমে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’’
তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর টলিউডের যাবতীয় কাজকর্ম তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন অরূপ এবং স্বরূপ। কিন্তু টলিপাড়ায় স্বরূপের ‘দাদাগিরি’ নিয়ে আড়ালে আবডালে বহু দিন থেকেই মুখ খুলছেন অনেকে। গতবছর আর্টিস্ট ফোরাম এবং প্রযোজক সংগঠনের মধ্যে বিরোধে স্বরূপের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। নবান্নে আর্টিস্ট ফোরাম এবং টেকনিশিয়ানদের বৈঠক চলাকালীন তাঁর আচরণে ক্ষুব্ধ হন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তার পরেই দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূল যুব সংগঠনের সভাপতির পদ থেকে স্বরূপকে সরিয়ে দেন তিনি। কিন্তু টলিউডে আগের মতোই স্বরূপ ‘ছড়ি ঘুরিয়ে যাচ্ছেন’ বলে অভিযোগ জমা হচ্ছে। এর আগেও সঙ্ঘমিত্রার নেতৃত্বে টলিউডে নিজেদের আলাদা সংগঠন করার চেষ্টা করেছিল বিজেপি। সেই সময় তাতে তেমন সাড়া মেলেনি। কিন্তু ভোটের কয়েক মাস আগে গেরুয়া হাওয়ার দাপট ভালই অনুভূত হচ্ছে রাজ্যে। সেই সুযোগকেই কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। প্রসঙ্গত, এর আগে সোমবার রাতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন টলিউডের তাবড় তারকারা। বিজেপি-র তরফে তাকে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলে দাবি করা হলেও অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। তার পরদিনই এই মিছিলের প্রস্তুতি।