মালা রায়। ছবি: পিটিআই।
দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা বহু দিন ধরে তৃণমূলের ‘গড়’। সেখানে বিদায়ী সাংসদ তথা এ বারের প্রার্থী মালা রায়কে রেকর্ড ভোটে জয়ী করাতে চায় তাঁর দল। কলকাতা পুরসভার ৫৯টি ওয়ার্ড আছে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে। সেই ৫৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ড থেকে বড়সড় ব্যবধান পাওয়ার পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। গত লোকসভা ভোটে ৫৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৩টিতে এগিয়েছিল তৃণমূল, ২৬টি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল বিজেপি।
ওই ২৬টি ওয়ার্ড ‘পুনরুদ্ধার’ করার পাশাপাশি নিজেদের দখলে-থাকা ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ডকে ‘ব্যবধান’ বাড়ানোর জায়গা হিসাবে বেছে নিয়েছেন তৃণমূলের দক্ষিণ কলকাতা নেতৃত্ব। তার মধ্যে রয়েছে কসবা বিধানসভার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড, বালিগঞ্জ বিধানসভার ৬০, ৬১, ৬৪ এবং ৬৫ নম্বর ওয়ার্ড, ভবানীপুর বিধানসভার ৭৭ নম্বর ওয়ার্ড, রাসবিহারী বিধানসভার ৮৮ নম্বর ওয়ার্ড, কলকাতা বন্দর কেন্দ্রের ৭৮, ১৩৪ এবং ১৩৫ নম্বর ওয়ার্ড, বেহালা পূর্বের ১২২, ১৪২ এবং ১৪৩ নম্বর ওয়ার্ড, বেহালা পশ্চিমের ১২৫, ১২৬, ১২৯, ১৩০ এবং ১৩১ নম্বর ওয়ার্ড।
পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী মালা দেড় লক্ষেরও বেশি ভোটে বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র বসুকে হারিয়েছিলেন। এ বার সেই ব্যবধান ছাপিয়ে ২ লক্ষেরও বেশি ভোটে দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূল প্রার্থীর জয় চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই লক্ষ্যেই ওই ১৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং ব্লক সভাপতিদের ভাল ভোটে মালাকে জয়ী করানোর নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। ওই ওয়ার্ডগুলির মধ্যে এমন অনেক ওয়ার্ড রয়েছে, যেগুলিতে সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা বেশি। যেমন রাজ্যের মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খানের বিধানসভা কেন্দ্র কসবার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটারদের আধিক্য। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাভেদের পুত্র ফৈয়াজ আহমেদ খান। গত বার ওই বিধানসভা কেন্দ্রে ৬৭,১০৭ এবং ১০৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এগিয়ে গিয়েছিল বিজেপি। তাই এ বারের ভোটে তৃণমূলকে এগিয়ে দিতে ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাদের বাড়তি দায়িত্ব দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। গত লোকসভা ভোটে প্রায় সাড়ে চার হাজার ভোটে রাসবিহারী বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে গিয়েছিল বিজেপি। সেই বিধানসভার অংশ মালার নিজস্ব ওয়ার্ড ৮৮ থেকে বড় ব্যবধান পাওয়ার জন্য ঘুঁটি সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে। কারণ, তৎকালীন বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কেন্দ্র রাসবিহারীতে ৮১, ৮৪, ৮৬, ৮৭ এবং ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডে পিছিয়ে পড়েছিল শাসকদল। এ বার অবশ্য এই বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক জেলা সভাপতি দেবাশিস কুমার নিজেই দায়িত্ব নিয়ে ভোট পরিচালনা করছেন। তাঁদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে বলেই মনে করছেন রাসবিহারীর তৃণমূল নেতৃত্ব।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র ভবানীপুরে ৬৩, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩ এবং ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। ওই কেন্দ্রের অংশ খিদিরপুরের ৭৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে অতিরিক্ত ব্যবধান পাওয়ার চেষ্টা করছে তৃণমূল। আবার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা বন্দরের ৭৬, ৭৯ এবং ৮০ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়েছিল বিজেপি। ওই বিধানসভার ৭৮, ১৩৪ এবং ১৩৫ নম্বর ওয়ার্ডকে নিজেদের ভোটবৃদ্ধির এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করেছে তৃণমূল। প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কেন্দ্র বালিগঞ্জে ৬৮, ৬৯ এবং ৮৫ ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। এখন ওই কেন্দ্রের বিধায়ক রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। এ বার ওই কেন্দ্রে ভোটের ব্যবধান বাড়াতে ৬০, ৬১, ৬৪ এবং ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডকে ‘পাখির চোখ’ করেছে তৃণমূল। প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কেন্দ্র বেহালা পূর্বের বর্তমান বিধায়ক তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়। গত বার ১১৬, ১১৭ এবং ১২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বেশি ভোট পেয়ে এগিয়ে গিয়েছিল পদ্মশিবির। ওই কেন্দ্রে ভোট বাড়াতে ১২২, ১৪২ এবং ১৪৩ নম্বর ওয়ার্ডকে বেছে নিয়েছে শাসকদল। জেলবন্দি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বেহালা পশ্চিম বিধানসভার ১১৮, ১১৯ এবং ১৩২ নম্বর ওয়ার্ডে জিতেছিল বিজেপি। তাঁর অনুপস্থিতিতে ওই বিধানসভা কেন্দ্রের ১২৫, ১২৬, ১২৯, ১৩০ এবং ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে বড় ব্যবধানে এগোনোর বিষয়ে স্থানীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দেবাশিস।
দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতা বলেন, ‘‘গত বার লোকসভা নির্বাচনে পুলওয়ামা হামলার পর ভারতীয় বায়ুসেনা যে ভাবে বালাকোটে পাল্টা হামলা চালিয়েছিল, তাতে দেশের ভোটার উপর প্রভাব পড়েছিল। সেই হাওয়ায় বিজেপি দক্ষিণ কলকাতার ২৬টি ওয়ার্ডে এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ বার আর তেমন পরিস্থিতি নেই। সাংগঠনিক ভাবেও এই লোকসভায় বিজেপি আমাদের ধারেকাছে নেই। বেশি ভোটে জিততে আমরা নতুন কৌশল নিচ্ছি। তবে তা জনসমক্ষে জাহির করার মতো বিষয় নয়।’’