PM Narendra Modi

প্রধানমন্ত্রীর গলায় ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’

সম্প্রতি রাজস্থানের চুরুর একটি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছিলেন। তাঁর দাবি, অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহারের পরে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে কাশ্মীর।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৪৫
PM Narendra Modi.

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

গত কাল কংগ্রেসকে মুসলিম লিগের সঙ্গে একাসনে বসানোর পরে আজ কংগ্রেস নেতৃত্বকে টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং-এর সঙ্গে তুলনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজনীতির অনেকের মতে, প্রথম পর্বের নির্বাচনের আগে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের হাওয়া তোলার লক্ষ্যে কংগ্রসকে এ ভাবে দেশবিরোধী শক্তির সঙ্গে তুলনা করে আক্রমণ শানানোর কৌশল নিলেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে উস্কে দিতে চেয়েছেন জাতীয়তাবাদের হাওয়া।

Advertisement

আজ পশ্চিমবঙ্গে জনসভার আগে বিহারের নওয়াদার একটি জনসভা থেকে কংগ্রেস নেতৃত্ব ও বিরোধী জোটকে হিন্দুত্ব ও জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে আক্রমণ করেন মোদী। গত কাল কংগ্রেসের ইস্তাহারকে অতীতের মুসলিম লিগের মনোভাবের বলে তুলনা করেছিলেন তিনি। লক্ষ্য ছিল হিন্দু ভোটারদের বার্তা দেওয়া। আর আজ কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের জম্মু-কাশ্মীর সংক্রান্ত মন্তব্যের সমালোচনায় মোদী বলেন, খড়্গের মন্তব্যে তিনি লজ্জিত। মোদীর প্রশ্ন, ‘‘তিনি কি জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতের অঙ্গ হিসাবে মনে করেন না? আসলে কংগ্রেস সভাপতির বক্তব্যে টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং-র সুর শোনা যাচ্ছে।’’

সম্প্রতি রাজস্থানের চুরুর একটি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছিলেন। তাঁর দাবি, অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহারের পরে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে কাশ্মীর। যার জবাবে গত কাল জয়পুরে এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘রাজস্থানের মানুষের এ সবের (৩৭০ প্রত্যাহার) সঙ্গে কী সম্পর্ক রয়েছে।’’ আজ বিহারের নওয়াদা থেকে খড়্গের সেই মন্তব্যকে নিশানা করে মোদীর প্রশ্ন, খড়্গে কি জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করেন না? কংগ্রেস সভাপতির পদ কোনও ছোট পদ নয়। অথচ তিনি প্রশ্ন তুলছেন, কেন রাজস্থানে এসে কাশ্মীরের কথা তুললাম! কংগ্রেস সভাপতি কি মনে করেন, কাশ্মীর ভারতের অংশ নয়? কংগ্রেস নেতারা ভাল করে শুনে নিন, বিহারের বহু তরুণ ও সাহসী যুবক জম্মু-কাশ্মীরকে বাঁচাতে তিরঙ্গা পতাকায় মুড়ে ঘরে ফিরেছেন।’’ অনেকের মতে, খড়্গের মন্তব্যকে সামনে রেখে আজ বিহারের মাটিতে দাঁড়িয়ে জাতীয়তাবাদের হাওয়া উস্কে দেওয়ার কৌশল নেন প্রধানমন্ত্রী।

খড়্গের ওই বক্তব্যের সূত্র ধরেই টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং-এর প্রসঙ্গেও আজ সরব হয়েছেন মোদী। মূলত বামমনোভাবাপন্ন গোষ্ঠীকে বোঝাতে ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করে গেরুয়া শিবির। দিল্লির জেএনইউ-এ ভারত-বিরোধী স্লোগান উঠেছে বলে অভিযোগ করে প্রথম ওই শব্দবন্ধটি ব্যবহার করে গেরুয়া শিবির। যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্ত্রকই এক লিখিত জবাবে জানিয়েছিল, টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং সম্পর্কে তাঁদের কাছে কোনও তথ্য নেই। তার পরেও আজ সেই প্রসঙ্গ টেনে মেরুকরণের বার্তা দিতে বিহারের সঙ্গেই রাজস্থানের মানুষকে জুড়তে চেয়েছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরকে রক্ষায় বিহারের মতোই রাজস্থানের বহু যুবক চূড়ান্ত আত্মত্যাগ করেছেন। কিন্তু এখন কংগ্রেস বলছে, দেশের এক প্রান্তের কথা কেন অন্য প্রান্তে বলা হবে।’’ মোদীর কথায়, এ সবই হল টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং-এর বক্তব্য। ইন্ডিয়া জোট হল ঘৃণা ও দেশবিরোধী শক্তির জোট। যাদের কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। এ ধরনের মানুষদের ক্ষমা করা যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মোদী।

কংগ্রেসের পাল্টা বক্তব্য, শাসক দলের পায়ের তলা থেকে যে মাটি সরে গিয়েছে, তা বুঝতে পারছেন বিজেপি নেতারা। তাই ক্ষমতা ধরে রাখতে ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছে বিজেপি। পাশাপাশি বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, দুর্নীতির মতো বিষয় থেকে মানুষের নজর ঘোরাতেই মোদী নিজে ভিত্তিহীন কথা বলছেন। এমনকি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে উপেক্ষা করে ধর্মকে প্রচারের অস্ত্র করছেন মোদী ও তাঁর দলের নেতারা। কংগ্রেসের ইস্তাহারকে মুসলিম লিগের ভাবনার সঙ্গে তুলনা করা নিয়ে মোদীকে কটাক্ষ করে এ দিন জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ঘাবড়ে গিয়ে উল্টোপাল্টা বলছেন। ৪ জুনের পরে প্রধানমন্ত্রীর লম্বা ছুটিতে যাওয়া নিশ্চিত। এটাই ভারতবাসীর গ্যারান্টি।’’

আরও পড়ুন
Advertisement