গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
তাঁরই সরকারের সংস্থা ভারতীয় জীবনবিমা নিগম (এলআইসি)-র বিজ্ঞাপনী বার্তা হাতিয়ার করে এ বার কংগ্রেসকে খোঁচা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লোকসভা ভোটে দ্বিতীয় দফার প্রচারের শেষ দিনে ছত্তীসগঢ়ের সরগুজায় বুধবার বিজেপির সভায় তাঁর মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেসের লুটের মন্ত্র হল ‘জিন্দেগি কে সাথ ভি, জিন্দেগি কে বাদ ভি’ (জীবনের সঙ্গে, জীবনের পরেও)।’’
সম্প্রতি কংগ্রেস নেতা শ্যাম পিত্রোদা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বড় অঙ্কের সম্পত্তির উপর কর বসানোর সওয়াল করেছিলেন। তাঁর সেই মন্তব্যকে হাতিয়ার করেই প্রধানমন্ত্রীর ওই খোঁচা। সরগুজার সভায় এ প্রসঙ্গে মোদীর ব্যাখ্যা, ‘‘কংগ্রেসের লক্ষ্য হল, আপনি যত দিন বেঁচে থাকবেন, আপনার থেকে কর আদায় করবে। আপনার মৃত্যুর পর আপনার পুত্র-কন্যাদের থেকে আপনারই রেখে যাওয়া সম্পত্তির উপর উত্তরাধিকার করের বোঝা চাপিয়ে দেবে।’’
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, পিত্রোদার মন্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি। এর সঙ্গে দলগত ভাবে কংগ্রেসের কোনও যোগ নেই। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে বিষয়টিকে হাতিয়ার করে প্রচারে নেমে পড়েছে বিজেপি শিবির। সেই সঙ্গে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহারের প্রসঙ্গ তুলে কৌশলে প্রচারে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণও উস্কে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। ঘটনাচক্রে, ‘মোদী-ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থায় সরকারি বিধি এড়িয়ে বিপুল অঙ্কের লগ্নি করার অভিযোগ উঠেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এলআইসির বিরুদ্ধে।
মোদী গত সপ্তাহে রাজস্থানের বাঁশওয়াড়ায় অভিযোগ তুলেছিলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দেশের সম্পদ, হিন্দু মহিলাদের গয়নাগাটি মুসলিমদের মধ্যে বিলি করে দিতে চায়। সম্প্রতি হায়দরাবাদে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে কোন শ্রেণির হাতে কত সম্পদ আছে তা আর্থ-সামাজিক সমীক্ষা করে দেখবে। সেই বক্তব্যকে টেনে এনে বাঁশওয়াড়ায় মোদী বলেছিলেন, ‘‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ অতীতে বলেছিলেন, দেশের সম্পদে সর্বাগ্রে অধিকার মুসলিমদের। সেই কারণেই সমীক্ষা করার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস। যাতে দেশবাসীর কষ্টার্জিত অর্থ মুসলিম ও অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া যায়।’’
এর পরে সোমবার উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের নজর আপনার সম্পত্তির উপরে রয়েছে। ক্ষমতায় এলে এরা মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে।’’ সম্প্রতি বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সমীক্ষায় জানানো হয়েছে, মোদীর জমানায় দেশে ধনী-গরিবের অসাম্য বেড়েছে। দেশের সম্পদ মুষ্টিমেয় কয়েক জনের হাতে কুক্ষিগত হয়েছে। কংগ্রেসের দাবি, আমজনতার মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বুঝতে পেরেই মোদী এবং তাঁর দলের নেতারা মেরুকরণের পথ নিয়েছেন।
কংগ্রেসের দাবি, এই অসাম্যের সমাধান খুঁজতেই কংগ্রেস তার ইস্তাহারে আর্থ-সামাজিক জাতিগণনার কথা বলেছে। তাতে বোঝা যাবে, দেশের দলিত, আদিবাসী, অনগ্রসরেরা আয়ের দিক থেকে কতখানি পিছিয়ে রয়েছে। জনসংখ্যার ভাগ অনুযায়ী চাকরি, শিক্ষায় তাদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে কি না, তা বোঝা যাবে। সেই অনুযায়ী তাদের অধিকার পাইয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ করা হবে। মোদীর বক্তৃতার জবাবে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বলেন, ‘‘কংগ্রেস কখনও মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্রে নজর দেয়নি। ইন্দিরা গান্ধী দেশের স্বার্থে নিজের সঞ্চিত সোনা দান করেছিলেন। আমার মা দেশের জন্য নিজের মঙ্গলসূত্র আহুতি দিয়েছিলেন।’’ কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ, মোদীর জমানাতেই কোভিড পর্বে মা-বোনেরা তাঁদের মঙ্গলসূত্র বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের বাঁচাতে কালোবাজারে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে বাধ্য হয়েছেন।