সবংয়ে নির্বাচনী প্রচারে দেব। —নিজস্ব চিত্র।
২০১৪ সালে প্রথম বার সংসদে ভাষণে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কথা বলেছিলেন তৃণমূলের তারকা সাংসদ দেব। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রার্থিতালিকা ঘোষণার আগে দেবকে পাশে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আর কেন্দ্রের ভরসায় না-থেকে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কাজ করে দেবে রাজ্যই। এ বার নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে দেব জানালেন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত করার জন্য আরও এক বার তাঁকে জন্ম নিতে হলেও নেবেন। কিন্তু ওই কাজ শেষ করবেনই।
মঙ্গলবার সবংয়ে ভোটপ্রচারে যান ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেব। সবং ব্লকের ভেমুয়া অঞ্চলের শ্যামসুন্দরপুর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে একটি সভায় বলেন, ‘‘আমি পার্লামেন্টে বক্তৃতা করতে গিয়ে ভেবেছিলাম এটাই আমার শেষ বক্তৃতা পার্লামেন্টের মধ্যে। টাটা, বাই বাই বলে চলে যাচ্ছিলাম। কিন্তু দিদি এবং অভিষেক ব্যানার্জি দু’জনে যেই প্রস্তাবটা দিলেন, আমি বললাম যদি ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান হয় তা হলে আমি সঙ্গে আছি। তখনই সঙ্গে সঙ্গে দিদি ‘হ্যাঁ’ বললেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এটা কোনও কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম বা বিজেপির সমস্যা নয়। ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে যাঁরা যাঁরা আছেন, বিশেষ করে সবংয়ের যে জায়গাগুলো বন্যা কবলিত হয়, যে জায়গা বন্যার জলে ডুবে থাকে, সেখানকার মানুষ বুঝতে পারবেন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কতটা জরুরি। সেই জন্য আমার মনে হল যে, এর জন্য যদি আর একটা জন্ম নিতে হয় নেব। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত করার জন্য আমি আবার জন্ম নেব।’’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি সমাজমাধ্যমে ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করে দেব লিখেছিলেন, ‘‘সংসদে আজ আমার শেষ দিন। ধন্যবাদ দিদি, ধন্যবাদ ঘাটালবাসী।’’ আসন্ন লোকসভা ভোটে যখন তিনি প্রার্থী হবেন কি না, এ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়, তখনই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক হয় দেবের। তার পর দেব জানিয়েছিলেন, তিনি রাজনীতি ছাড়তে চাইলেও রাজনীতি তাঁকে ছাড়বে না। মঙ্গলবার নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে দেব জানালেন, ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের ‘শর্তেই’ তিনি আবার তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। দু’বারের সাংসদ দেব বলেন, ‘‘আমি হয়ত এতটা রাজনীতি বুঝি না। তবে আমি এইটুকু বুঝি, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান মানুষের জন্য কতটা জরুরি। এটা ১৯৫০ সালের সমস্যা নয়। এটা স্বাধীনতার আগের সমস্যা। এটা আমাদের ১০০ থেকে ১৫০ বছরের সমস্যা। সেই সমস্যার সমাধান হতে চলেছে দিদির হাত ধরে।’’ তৃণমূল প্রার্থী আরও বলেন, ‘‘যাঁরা যাঁরা আলোচনা করছেন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান হবে কি হবে না, এটা জুমলা, এটা ভোটের আগে প্রতিশ্রুতির জন্য বলা, আমি তাঁদের এটুকুই বলব, আমি দিদিকে বিশ্বাস করি। দিদির প্রত্যেকটি কথাকে আমি বিশ্বাস করি। দিদি নিজেই আরামবাগে দাঁড়িয়ে থেকে বলেছিলেন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান হবে। আমি জানি এই প্ল্যান করতে অনেকটা সময় লাগবে। কিন্তু আগে শুরু তো হোক।’’
পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করেছেন দেব। বিজেপি প্রার্থী হিরণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘ও নিজে খড়্গপুরের রাস্তা ঠিক করতে পারছে না। সেটা তো আমার বলে লাভ নেই। আমার মনে হয়, মানুষ তো জানে, কে ভালো কে খারাপ। কে কাজ করে বা কে কাজ করে না। আমার হিরণকে নিয়ে ভাবা কিংবা বলা মানে শুধুই সময় নষ্ট করা। তার চেয়ে ভাল হয় মানুষের কাছে যাই। মানুষের কথা বলি। সেটা আমাদের কাছে বেশি লাভ হবে।’’
অন্য দিকে, ডেবরায় প্রচায় গিয়ে বিজেপি প্রার্থী হিরণ বলেন, ‘‘যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই হাহাকার, বন্যা হলেই মাচায় থাকতে হচ্ছে। তাদের সাংসদ ১০ বছরে কোনও কাজ করেনি। যেখানেই যাচ্ছি মানুষ বেরিয়ে আসছেন ঘর থেকে। পিংলার রাস্তা ঢেউয়ের মতো। গ্রামের মানুষকে আজও কষ্ট করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। দাসপুর তেতুঁলতলা ব্রিজ ১৯৭২ সালে হয়েছে। তার কোনও সংস্কার নেই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। লোকসভা কেন্দ্রে ওঁকে (দেব) দেখা যায় না। ঘাটালের মানুষের কাছে দেখা যায় না। এলাকাবাসীদের বক্তব্য ১০ বছরে এক বারও দেখিনি, আপনি প্রার্থী হয়েছেন, আপনাকে দেখছি বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছেন। মানুষের মধ্যে সাড়া উৎসাহ কারণ, এ বার পরিবর্তন করতে হবে। ১০ বছরে এক জন অভিনেতাকে বিশ্বাস করে যেমন ঠকেছেন, এক জন অভিনেতা যে ভাবে বেইমানি করেছেন, তাতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।’’