CPM-Congress

গোলপার্ক থেকে হাজরা জোটে প্রচার, যাদবপুরে ঢুকতেই সরে গেল হাত! বৃন্দার রোড-শো রহস্য

দক্ষিণ কলকাতার রোড-শোয়ে সিপিএম প্রার্থী সায়রা হালিমের পাশে তাঁর দলের বৃন্দা কারাট, ঐশী ঘোষের সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেস নেত্রী কৃষ্ণা দেবনাথ। তবে যাদবপুরের প্রচারে কংগ্রেসের কাউকে দেখা গেল না।

Advertisement
শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৫৯
Controversy started after CPM Leader Brinda Karat’s road show in Kolkata

(বাঁ দিকে) শনিবার দক্ষিণ কলকাতার প্রচারে বৃন্দা কারাট এবং যাদবপুরের রোড-শোয়ে সিপিএম নেত্রী। —নিজস্ব ছবি।

শনিবার সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য বৃন্দা কারাট কলকাতায় জোড়া রোড-শো করলেন। প্রথমে দক্ষিণ কলকাতার সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিমের সমর্থনে প্রচার। তার পরই যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্যের সমর্থনে রোড-শো। সেই রোড-শোতে বৃন্দার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এর প্রাক্তন এসএফআই নেত্রী ঐশী ঘোষ। দক্ষিণ কলকাতা আসনে সিপিএম প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে কংগ্রেসের প্রতিনিধি থাকলেও, যাদবপুরের প্রচারে কংগ্রেসের কাউকেই দেখা গেল না।

Advertisement

দক্ষিণ কলকাতার রোড-শো শনিবার শুরু হয়েছিল গোলপার্ক থেকে। গেল হাজরা মোড় পর্যন্ত। সেই রোড-শোয়ের জিপে প্রার্থী সায়রা ছাড়াও ছিলেন বৃন্দা, ঐশী এবং কংগ্রেস নেত্রী কৃষ্ণা দেবনাথ। পরে এই কর্মসূচিতে যোগ দেন বামফ্রন্ট চেয়াম্যান বিমান বসুও। তবে যাদবপুরের প্রচারে কোনও কংগ্রেস নেতা-নেত্রীকে কেন দেখা গেল না, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে জোটের দুই তরফের সমর্থকদের মনে। যাদবপুরের রোড-শো শুরু হয়েছিল ৮বি বাসস্ট্যান্ড থেকে। শেষ হয় নেতাজি নগর বাসস্ট্যান্ডে। সেই মিছিলের জিপে বৃন্দা, ঐশী ছাড়াও ছিলেন যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য এবং সিপিএমের কলকাতা জেলার সম্পাদক কল্লোল মজুমদার।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী দু’জনেই। কিন্তু দক্ষিণ কলকাতার প্রচারে কংগ্রেস থাকলেও যাদবপুরে কেউ রইলেন না কেন? এ ব্যাপারে সিপিএম জেলা সম্পাদক কল্লোল আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘যাদবপুর এলাকায় কংগ্রেসের যে সব নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, তা এখনও করে ওঠা সম্ভব হয়নি। যোগাযোগ করা হলেই কংগ্রেস আমাদের কর্মসূচিতে থাকবে।’’

কিন্তু সিপিএমেরই অন্দরের খবর, যাদবপুর-টালিগঞ্জ এলাকার সিপিএমের নেতারাই চাননি বৃন্দা কারাটের রোড-শোয়ে কংগ্রেস উপস্থিত থাকুক। কিন্তু কেন তাঁরা কংগ্রেসকে নিয়ে আপত্তি তুললেন? একটি কারণ, বৃন্দা সদ্যই কেরলে ভোটপ্রচার শেষ করে এসেছেন। শুক্রবার কেরলের ২০টি আসনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যে সিপিএমের প্রধান বিরোধী শক্তি কংগ্রেস। বৃন্দা কেরলে প্রচারে গিয়ে শশী তারুর থেকে রাহুল গান্ধী— কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন। আর আজ যদি এখানে বৃন্দার পাশে কংগ্রেস থাকে, তবে সমালোচনা তৈরি হতে পারে।

কিন্তু একই প্রশ্ন তো দক্ষিণ কলকাতা আসনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য! সারা রাজ্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য? দক্ষিণ কলকাতায় কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে সভা করায় তো কোনও আপত্তি উঠল না? যাদবপুরের এক স্থানীয় সিপিএম নেতার কাছে আরও ‘গূঢ় কারণ’ শোনা গেল। তাঁর কথায়, ‘‘যাদবপুরে কলোনি এলাকা অনেক। শুধু ভোটাররাই নন, আমাদের পার্টি কমরেডদের একটা বড় অংশ ও পার বাংলা থেকে আসা পরিবারের। বিশেষত প্রবীণদের একটা বড় অংশের কংগ্রেস সম্পর্কে অ্যালার্জি তীব্র।’’ টালিগঞ্জের একেবারে নিচু তলায় সংগঠন করা সুব্রত দত্তের অনুগামী এক যুবনেত্রীর ভাষা আর একটু তীব্র, ‘‘টালিগঞ্জ, নেতাজি নগর এ সব এলাকায় বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কংগ্রেস সম্পর্কে ঘৃণা রয়েছে।পার্টি চাপিয়ে দিলেই তো হবে না। আমাদের এলাকার বাস্তবতা বুঝতে হবে। আমরা সে কারণে কংগ্রেসকে ডাকিনি। আমাদের কংগ্রেসকে প্রয়োজন নেই।’’

উল্লেখযোগ্য বিষয় হয়, শনিবার বাংলায় বৃন্দার প্রচার কর্মসূচির যে খবর রাজ্য সিপিএমের দৈনিক প্রভাতী মুখপত্রে রবিবার প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দক্ষিণ কলকাতার রোড-শোয়ের কথা সবিস্তারে থাকলেও, যাদবপুরের রোড-শোয়ের কোনও উল্লেখই নেই। রাজ্য সিপিএম সূত্রের খবর, আলিমুদ্দিনের গাইডলাইন অনুযায়ী টালিগঞ্জ এবং যাদবপুরের নেতারাও কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করছেন। কারণ, এমন ঘটনা বার বার ঘটলে তা জোট সম্পর্কে ভুল বার্তা দিতে পারে অন্যত্রও। সে ক্ষেত্রেও অবশ্য যাদবপুরের কিছু ‘বিশেষ’ এলাকায় কংগ্রেসকে পাশে নিয়ে হাঁটার ব্যাপারে আপত্তি তুলে রেখেছেন সিপিএমের একাংশ। দলের কলকাতা জেলা কমিটির এক নেতা বললেন, ‘‘যেখানে আমরা শক্তিশালী, এবং কংগ্রেসের কোনও অস্তিত্ব নেই, সেই সব জায়গায় জোর করে লোক দেখাতে কংগ্রেসকে খোঁজাখুঁজি করতে যাওয়ার পক্ষপাতী আমরা নই।’’ বোঝাই যাচ্ছে, জোটস্বার্থ এবং পার্টিস্বার্থের এই ভারসাম্য কী ভাবে হবে, তা নিয়ে সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বকে ‘বিশেষ’ নজরই দিতে হচ্ছে যাদবপুরে, হয়তো আরও কোথাও কোথাও।

আরও পড়ুন
Advertisement