(বাঁ দিক থেকে) অমিত শাহ, চন্দ্রবাবু নায়ডু এবং পবন কল্যাণ। —ফাইল চিত্র।
অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নায়ডুর দল তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং তেলুগু অভিনেতা-রাজনীতিক পবন কল্যাণের জনসেনা পার্টির সঙ্গে জোট চূড়ান্ত হল বিজেপির। দিল্লিতে তিন দলের বৈঠক শেষে শনিবার চন্দ্রবাবু জানান, আসন্ন লোকসভা এবং অন্ধ্র বিধানসভা নির্বাচনে তিন দল আসন সমঝোতা করে লড়বে। তিনি বলেন, ‘‘লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে আমাদের বিপুল জয় হবে।’’
টিডিপির তরফে জানানো হয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশের ২৫টি লোকসভা আসনের মধ্যে টিডিপি ১৭টিতে লড়বে। বিজেপি লড়বে ছ’টিতে। পবনের দলের ভাগে পড়েছে দু’টি। বিজেপিকে বিশাখাপত্তনম (ভাইজ্যাক), বিজয়ওয়াড়া, আরাকু, রাজামুন্দ্রি, তিরুপতি এবং অন্য একটি লোকসভা আসন ছাড়া হবে বলে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে। লোকসভা ভোটের সঙ্গেই অন্ধ্রে হবে বিধানসভা ভোট। ১৭৫ আসনের মধ্যে টিডিপির ভাগে ১৪৫ এবং জনসেনার ৩০। সূত্রের খবর, জনসেনা তার ভাগের আসনগুলি থেকে ছ’টি বিজেপিকে ছাড়বে বলে আলোচনায় স্থির হয়েছে।
প্রসঙ্গত, অন্ধ্রের ১১৮টি বিধানসভা আসনে ইতিমধ্যেই টিডিপি-জনসেনা রফার কথা ঘোষণা করেছে। চন্দ্রবাবুর দল ৯৪ এবং পবনের দল ২৪টিতে লড়ার কথা জানিয়েছে। কিন্তু ওই আসনগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটিতে লড়তে বদ্ধপরিকর বিজেপি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দু’দলই তাদের ভাগের কয়েকটি বিধানসভা আসন পদ্ম-শিবিরকে ছেড়ে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন চন্দ্রবাবু। এর পরে শুক্রবার সকালে দিল্লি পৌঁছে ত্রিপাক্ষিক আলোচনায় যোগ দেন পবন। সেখানেই সমঝোতাসূত্র তৈরি হয়েছে বলে সূত্রের খবর। শনিবার শাহের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পবন।
২০১৯ সালে একা লড়ে অন্ধ্রে লোকসভার তিনটি আসনে জিতেছিল টিডিপি। বাকি ২২টি পেয়েছিল জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস। বিধানসভায় জগনের দল ১৫১টিতে জয় পায়। চন্দ্রবাবুর ঝুলিতে গিয়েছিল মাত্র ২৩টি। এ বার তিন দলের জোট মুখ্যমন্ত্রী জগনকে বেগ দিতে পারে বলে ভোট পণ্ডিতদের একাংশের ধারণা।
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে জোটে ছিলেন চন্দ্রবাবু। কিন্তু অন্ধ্রের বিশেষ মর্যাদার দাবিতে ২০১৮ সালে এনডিএ ছেড়েছিল টিডিপি। ২০১৯-এর লোকসভা এবং অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভা ভোটে তারা একাই লড়াই করেছিল। সেই ভোটে জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টির কাছে হেরে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি হারিয়েছিলেন চন্দ্রবাবু। ছ’বছর পরে আবার এনডিএ-তে প্রত্যাবর্তন ঘটল তাঁর।
পবন ২০১৯-এ লোকসভা-বিধানসভা ভোটের আগে জনসেনা গড়ে আলাদা ভাবে লড়েছিলেন। কিন্তু দু’টি কেন্দ্রে লড়েও বিধায়ক হতে পারেননি। ১৭৫ আসনের অন্ধ্র বিধানসভায় মাত্র একটিতে জিতেছিল তাঁর দল। পবনের দাদা চিরঞ্জীবীও তেলুগু চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা। ২০০৯-এ ভোটের ঠিক আগে নিজের দল প্রজারাজ্যম পার্টি গড়ে বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি। পরে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন। তবে দাদার সঙ্গে প্রজারাজ্যম পার্টির প্রচার করলেও পবন কখনও কংগ্রেসে যোগ দেননি। এ বার দাক্ষিণাত্যের ওই রাজ্যে তিন দলের জোট ক্ষমতাসীন ওয়াইএসআর কংগ্রেসকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।