অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
লোকসভা ভোটের প্রথম দিনের প্রচারে বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভা থেকে সরকারি পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন তৃণমূল সেনাপতি। যা তৃণমূলের ভবিষ্যতের জন্য ‘অর্থবহ’ বলেই মনে করছেন অনেকে।
ময়নাগুড়ির সভা থেকে অভিষেক বলেন, ‘‘রাস্তা, পানীয় জল, ঘর— সমস্ত সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দেব। আমার ঘাড়ে দায়িত্ব নিচ্ছি।’’ পাশাপাশিই, ময়নাগুড়ির গ্রামীণ হাসপাতালকে ১০০ দিনের মধ্যে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মহকুমা হাসপাতালে রূপান্তরিত করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অভিষেক। পাশাপাশিই তিনি জানিয়েছেন, আগামী দু’মাসে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে তিনি অন্তত ২০ বার যাবেন। এই প্রসঙ্গেই অভিষেক বলেছেন, ‘‘আমি এক কথার ছেলে। কথা দিলে কথা রাখি। সকাল-বিকেল কথা পাল্টাই না।’’ উদাহরণ দিতে গিয়ে ধূপগুড়িকে পৃথক মহকুমা করার প্রতিশ্রুতি এবং তা পালন করার কথাও বলেন তৃণমূলের সেনাপতি।
সরকারি পরিষেবার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেওয়ার পর অভিষেকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু তৈরি হয়েছে। যদিও অভিষেক অতীতে একাধিক বার বলেছেন, তিনি সংগঠনেই থাকতে চান। প্রশাসনে যাওয়ার তাঁর কোনও ইচ্ছা নেই। অনেকের ব্যাখ্যা, অভিষেক চান, সংগঠন এবং প্রশাসন যাতে সমান্তরাল ভাবে সমন্বয় রেখে চলে। যেমন কেন্দ্রের কাছে বকেয়া ১০০ দিনের কাজের মজুরির টাকা রাজ্য সরকার মেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সংগঠনের সেনাপতি হিসাবে অভিষেক ব্লকে ব্লকে ক্যাম্প করে ‘বঞ্চিত’দের ফর্ম পূরণ করাতে দলকে নামিয়ে দিয়েছিলেন।
ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচনের শেষলগ্নে অভিষেকই ধূপগুড়িকে মহকুমা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেটাও ছিল এক প্রকার প্রশাসনিক প্রতিশ্রুতিই। বিজেপির দখলে-থাকা আসন উপনির্বাচনে ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। সেই সময়ে বিজেপি নেতারাও ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিয়েছিলেন, শেষ মুহূর্তে ধূপগুড়িকে মহকুমা করার প্রতিশ্রুতি ভোটের হাওয়া ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ঘটনাচক্রে, সেই উপনির্বাচনে জেতা নির্মলচন্দ্র রায়কেই এ বার জলপাইগুড়ি লোকসভায় প্রার্থী করেছে তৃণমূল।
বক্তৃতার মাঝেই মঞ্চে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিয়ো চালান অভিষেক। ব্রিগেডের মতো ময়নাগুড়ির সভাতেও মঞ্চের পটভূমিতে ছিল বিশাল এলইডি স্ক্রিন। সেখানেই নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি শুনিয়ে তৃণমূল দেখাতে চেয়েছে পদ্মশিবিরের সবটাই ‘অসত্য’। তারা যা বলে তা করে না। আর তৃণমূল যা বলে তা করে দেখায়। কথা রাখার প্রসঙ্গে অভিষেক চা বলয়ে গিয়ে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির প্রসঙ্গও তোলেন। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেন, ‘‘২০২২ সালে মালবাজারে এসেছিলাম। একটি সম্মেলনে বলেছিলাম, দৈনিক মজুরি যাতে বৃদ্ধি পায়, আন্দোলন করব। বৃদ্ধি পেয়েছে চা শ্রমিকদের মজুরি। দৈনিক মজুরি ২০১১ সালে ছিল ৬৭ টাকা। তা থেকে বেড়ে ২৫০ টাকা হয়েছে।’’
ময়নাগুড়ির সভা থেকে অভিষেক বলেছেন, ‘‘ধর্ম দেখে নয়, কর্ম দেখে ভোট দিন। কী দেখে ভোট দেবেন? রামমন্দির? আমরাও তো জল্পেশ মন্দির এবং তার আশপাশের এলাকার উন্নয়নে সব মিলিয়ে ১০ কোটি টাকা দিয়েছি। কই তা দেখিয়ে তো ভোট চাইছি না? ধর্ম বাড়িতে করুন। ভোট হোক অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের দাবি নিয়ে।’’
প্রথম প্রচারসভা থেকে অভিষেক বুঝিয়ে দিয়েছেন, লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রচারে মূল বিষয় হবে ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’। সমান্তরাল ভাবে থাকবে বাংলা ও বাঙালির ‘জাত্যাভিমান’ও। ব্রিগেড থেকে তৃণমূল স্লোগান দিয়েছিল, ‘জনগণের গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন’। ময়নাগুড়ির সভায় সেই স্লোগান দিয়েই অভিষেক বলেছেন, ‘‘আজ খুঁটিপুজো করলাম। মে মাসের শেষে বিসর্জন দেব।’’