সংগৃহীত চিত্র।
পরীক্ষার খাতা দেখার নাম করে ‘অন ডিউটি’ উল্লেখ করে বহু শিক্ষকদের এক সঙ্গে অনুপস্থিত। স্কুল পরিচালনায় বিপাকে প্রধান শিক্ষকরা। এর জন্য প্রধান পরীক্ষকদেরই দায়ী করছে শিক্ষক মহল।
সম্প্রতি, সমস্ত স্কুলের প্রধানশিক্ষক ও টিচার ইনচার্জদের কলকাতা জেলা ডিআই-এর তরফ থেকে জানানো হয়েছে ‘অন ডিউটি’-র নামে অনুপস্থিতি নিয়ে যেন সতর্ক থাকেন। স্কুল পরিচালনা ও পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে যেন এই ‘অন ডিউটি’ কোন ভাবে ব্যাঘাত না ঘটায়।
কলকাতা জেলা অধিকারিক জানান, পরীক্ষার খাতা দেখার নামে ‘অন ডিউটি’তে একসঙ্গে বহু স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা অনুপস্থিত থাকছেন, যার ফলে স্কুলের পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। প্রধানশিক্ষকরা যাতে এই বিষয়ে সতর্ক থাকেন তাই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
‘অন ডিউটি’-র নামে অনুপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশি সমস্যা দেখা যাচ্ছে মাধ্যমিক নয়, উচ্চমাধ্যমিকের ক্ষেত্রে। পর্ষদ হোক বা শিক্ষা সংসদ, প্রত্যেক পরীক্ষকের জন্য ‘অন ডিউটি’ ধার্য করা হয়েছে তিনটি করে। আর স্ক্রুটিনির জন্য আরও দু’দিন ‘অন ডিউটি’ ধার্য করা হয়েছে। আর এখানেই দেখা যাচ্ছে শিক্ষা সংসদ ও পর্ষদের নির্দেশের অপব্যবহার করছেন পরীক্ষকদের এক অংশ। আর অনেক ক্ষেত্রেই প্রধান পরীক্ষকদের ভূমিকাও প্রশ্ন চিহ্নের মুখে।
কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যাণ্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “আমরা ছাত্রস্বার্থে ও পঠনপাঠনের গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে উচ্চমাধ্যমিক সংসদকে অনুরোধ করব, যাতে নূন্যতম ৭৫টি খাতা প্রধান পরীক্ষকের বাড়িতে বসে স্ক্রুটিনি না করলে এই ‘অন ডিউটি স্লিপ’ না দেওয়া হয়। প্রধান পরীক্ষকরা যেন তাঁর বাড়িতেই পরীক্ষককে এই কাজের জন্য আসতে বলে নিজের হাতে ‘অন ডিউটি ডেট’ লিখে ‘অন ডিউটি স্লিপ’ দেন। না হলে বিনা কারণে শিক্ষক অনুপস্থিতির জন্য পঠনপাঠন মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হয়।”
প্রসঙ্গত, মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ স্ক্রুটিনিয়ারদের জন্য ২৫০টি খাতা স্ক্রুটিনি করার পর তাকে ‘অন ডিউটি’ বলে ধার্য করেন। তার ফলে সমস্যা হয় না। উচ্চমাধ্যমিকে বিভিন্ন বিভাগে প্রচুর বিষয়ে পড়ানো হয় এবং পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। যার মধ্যে বেশ কিছু বিভাগে খাতা অনেক বেশি হয় এবং স্ক্রুটিনির সংখ্যাও অনেক হয়। আবার বেশ কিছু বিষয় স্ক্রুটিনি করার জন্য নির্ধারিত খাতার সংখ্যা যথেষ্ট কম থাকে। আর এখানেই একাংশ পরীক্ষক কম খাতা দেখে অতিরিক্ত ‘অন ডিউটি’-র সুবিধা পাচ্ছেন। ‘অন ডিউটি স্লিপ’-এ প্রধান পরীক্ষকদের কেবল সই করা থাকে। অভিযোগ, এই ধরনের ‘অন ডিউটি’ স্লিপের অপব্যবহার হচ্ছে। অনেক সময় একই দিনে বহু শিক্ষক শিক্ষিকা অনুপস্থিতি থাকায় স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
একাধিক স্কুলে একই দিনে ১০ এরও বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকা অনুপস্থিত থাকার তথ্য স্কুলগুলির তরফ থেকে সামনে এসেছে।
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, “আমাদের ক্ষেত্রেই একদিনে প্রায় ১৯ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ‘অন ডিউটি’ নিয়েছিল। যার ফলে পঠন-পাঠনের যথেষ্ট পরিমাণে বিঘ্ন ঘটেছিল।”
সূত্রের খবর, বেশ কিছু বিষয় রয়েছে যেখানে ৩০টিরও কম খাতা দেখতে হয় স্ক্রুটিনির জন্য। প্রধান পরীক্ষকের সন্মতিক্রমে একই বিষয়ে পরীক্ষকরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে পারস্পরিক স্ক্রুটিনি করে খাতা জমা থাকেন, তার ফলে ‘অন ডিউটি’-র সংখ্যা অনেক সময় বেড়ে যায়। আবার ছুটির দিনগুলি ‘অন ডিউটি’ করলে পর্ষদ ও শিক্ষা সংসদের নির্দেশ অনুযায়ী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তা অন ডিউটি হিসেবে দেখাতে পারবেন একজন পরীক্ষক। আর এখানেই অন ডিউটির অপব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষক মহলের একংশ।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “কলকাতা জেলা ডিআই যে নির্দেশ দিয়েছে তা সরকারি নির্দেশের পরিপন্থী। এই নির্দেশকে মান্যতা দিতে গেলে পরীক্ষা ব্যবস্থার মূল্যায়নে সমস্যা তৈরি হতে পারে। সংসদ ও পর্ষদকে এই ধরনের জটিলতা আটকাতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ করতে হবে।”
পরীক্ষকরা ‘অন ডিউটি’র ব্যবহার যে ভাবে করছেন, এ বিষয়ে পর্ষদ ও শিক্ষা সংসদকে নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। যদি কোথাও ভুল ত্রুটি ধরা পড়ে, তা হলে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। নির্দিষ্ট ‘অন ডিউটি’-র বাইরে নির্দেশের অপব্যবহার করে ‘অন ডিউটি’ নিলে সরকার পদক্ষেপ না করলে, সমস্যার সমাধান হবে না বলে মনে করছে শিক্ষক সংগঠনগুলি একটি বড় অংশ। সর্বোপরি প্রধান পরীক্ষকদের এই বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হয়ে ও নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে বলে জানাচ্ছে শিক্ষক মহল।