WBBSE math books

ত্রিভুজের ‘দু’টি কোণ’! মধ্যশিক্ষা পর্ষদ স্বীকৃত বইয়ে দেওয়া তথ্যে চক্ষু চড়কগাছ শিক্ষকদের

ত্রিভুজের কয়টি কোণ? মধ্যশিক্ষা পর্ষদ স্বীকৃত একটি বই খুললে মিলছে নতুন তথ্য। অথচ এই সম্পর্কে শিক্ষক থেকে শুরু করে পর্ষদ সকলে অন্ধকারে। ছাত্র-ছাত্রীরা কী শিখবে? প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষকমহলের একাংশ।

Advertisement
অরুণাভ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৪ ১৭:২১

প্রতীকী চিত্র।

মধ্যশিক্ষা পর্ষদ স্বীকৃত বইতে ভুল তথ্য। এমনই অভিযোগ শিক্ষক মহলের একাংশের। ছাত্র-ছাত্রীরা কী শিখবে, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। প্রতি বছরই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অনুমোদিত বিষয় ভিত্তিক সমস্ত বই বেশ কিছু ভাষায় ছাপানো হয়। চলতি বছরেও তার অন্যথা হয়নি। তবে, সেখানেই তথ্যগত ভুল নজরে আসে পড়ুয়া-সহ অভিভাবকদের।

Advertisement

অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি ভাষায় অনুমোদিত গণিত বইতেই দেখা গিয়েছে তথ্যগত ভুল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অষ্টম শ্রেণির এক পড়ুয়া জানায়, গণিত বইয়ের ত্রিভুজ এবং পঞ্চভুজ উভয় ক্ষেত্রেই ভুল তথ্য দেওয়া রয়েছে। সাধারণত ত্রিভুজের তিনটি কোণ থাকে, কিন্তু বইতে দু’টি কোণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও, পঞ্চভুজ যাকে ইংরেজি শব্দে ‘পেন্টাগন’ বলা হয়, সেটি লেখা রয়েছে ‘পেটাগন’। পাশাপাশি, গণিত ছাড়াও অন্যান্য বেশ কিছু বইতেও ভুল তথ্য দেওয়া রয়েছে বলে অভিযোগ পড়ুয়া থেকে শিক্ষক মহলের একাংশের।

গণিতপ্রভার যে অধ্যায় নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

গণিতপ্রভার যে অধ্যায় নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। নিজস্ব চিত্র।

এই প্রসঙ্গে পার্ক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, ‘‘এই ধরনের ভুল সাধারণত শিক্ষকরাই ক্লাসে ঠিক করে দিয়ে থাকেন। তবে, পর্ষদের যে সিলেবাস কমিটি রয়েছে তাঁদের এই বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।’’

২০১২-১৩ সালে শেষ বারের মতো মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্যক্রম পরিবর্তন হয়েছিল। তার পর প্রায় আর‌ও এক দশক অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বইয়ের মলাট ও পরিবেশনায় আধুনিকতার ছোঁয়া এসেছে, কিন্তু কমেনি ভুলভ্রান্তি। তার অন্যতম উদাহরণ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের স্বীকৃত অষ্টম শ্রেণির ‘গণিতপ্রবাহ’ বইটি।

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ডেপুটি সেক্রেটারি ঋতব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমারা এখনও এই বিষয়ে কিছু জানি না। এই বিষয়গুলি সিলেবাস কমিটি পর্যালোচনা করে। তবে, ভুল থাকলে তা দ্রুত সংশোধন করা হবে।’’

সাধারণত প্রতিটি বোর্ডেরই নিজস্ব এক্সপার্ট কমিটি বা সিলেবাস কমিটি থাকে। যাদের তত্ত্বাবধানেই বই ছাপানো হয়। তা হলে কী ভাবে এই ভুল ত্রুটি থেকে যায়? এই প্রসঙ্গে নারকেলডাঙা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘শুধু অষ্টম শ্রেণির গণিত বই নয়, এই সরকারের আমলে যত পাঠ্যপুস্তক তৈরি হয়েছে প্রায় সব বইয়ে কিছু না কিছু ভুল রয়েছে। কিছু বইয়ে আবার অত্যন্ত বিতর্কিত বিষয়ও রয়েছে। অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস বইয়ে বহু দুর্নীতিগ্রস্ত জেল খাটা আসামীদের নাম রয়েছে। এগুলো সবই সংশোধন করা উচিত বলে আমরা মনে করি।’’

অষ্টম শ্রেণি মাধ্যমিক পর্যায়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। পড়ুয়াদের ভিত তৈরি হয় ছোট শ্রেণি থেকেই। সেখানে কেউ যদি এই ভুলকেই ঠিক মনে করে পড়ে তা হলে পরবর্তীকালে পড়ুয়ারাই সমস্যায় পড়বে। যদিও ভিন্ন মত রয়েছে শিক্ষকদের মধ্যে। নদিয়ার জেলার ভীমপুর স্বামীজি বিদ্যাপীঠের সহকারী প্রধান শিক্ষক নির্মল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করা বইয়ে এই ভুল থাকলেও বাংলা ভাষায় লেখা বইগুলিতে ভুল নেই। যদিও এটা মুদ্রণজনিত ভুল। তবে, এ রকম ভুল না থাকাটাই বাঞ্ছনীয়’’।

বেশ কিছু শিক্ষক এই ভুলভ্রান্তি বিষয়ে ওয়াকিবহল নন। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের গণিত বিষয়ের শিক্ষক সমরকুমার পাইক বলেন, ‘‘আমার বিষয়টি এখনও গোচরে আসেনি। তবে, এই ধরনের ভুলভ্রান্তি থাকে। যেগুলি আমরাই ঠিক করে দিই। পর্ষদের উচিত এই বিষয়গুলি খুঁটিয়ে দেখা, যাতে পরবর্তী সময়ে এমন ভুল না হয়।’’

আরও পড়ুন
Advertisement