প্রতীকী চিত্র।
উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষকের ঘাটতি কমাতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি সংযুক্তকরণের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রক্রিয়া শুরু করল স্কুল শিক্ষা দফতর। গোটা দেশেই প্রাথমিকের সঙ্গে পঞ্চম শ্রেণিকে সংযুক্ত করা হয়। বাদ ছিল পশ্চিমবঙ্গ। জাতীয় শিক্ষা নীতিতেও পঞ্চম শ্রেণি প্রাথমিকে যুক্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। শুধু পঞ্চম শ্রেণির সংযুক্তিকরণই নয়, জেলাভিত্তিক প্রাইমারি স্কুলগুলির বেহাল দশা ফেরাতে পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিতে চলেছে শিক্ষা দফতর।
কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “অত্যন্ত জরুরি পদক্ষেপ। অনেক প্রাথমিক স্কুল আছে, যেখানে অনেক শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও পঞ্চম শ্রেণির সংযুক্তি হয়নি। যে সব প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি হাইস্কুলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, তাদের আলাদা করার পর পৃথক ভবন তৈরি করা উচিত।”
২০১৮ সালে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আমলে প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণি যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১৭ হাজার প্রাথমিকের সঙ্গে পঞ্চম শ্রেণি যুক্ত করা হয়েছে। রাজ্যে মোট প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা প্রায় ৪৯ হাজার।
এ প্রসঙ্গে যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতীম বৈদ্য বলেন, “প্রাথমিকের সঙ্গে পঞ্চম শ্রেণি যুক্ত হলে উচ্চ প্রাথমিক স্তরে বেশ কিছুটা চাপ কমবে। তবে প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণি যুক্ত করার আগে পরিকাঠামোর সার্বিক উন্নয়নে নজর দিতে হবে সরকারকে।”
২০১২ সালে শেষ বার উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল। ২০১৪ সালে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হলেও দুর্নীতির কারণে সেই মামলা বিচারাধীন। দীর্ঘ নয় বছর হয়ে গেল উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ নেই। এই অবস্থায় প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণি যুক্ত হলে হাইস্কুলে শিক্ষক ঘাটতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে মনে করছে স্কুল শিক্ষা দফতর।
এ প্রসঙ্গে, বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “পঞ্চম শ্রেণি প্রাথমিকে স্থানান্তরিত করার কাজ বেশ কয়েক বছর আগে শুরু হলেও তা ঢিমে তালে চলছে। এতদিন সময় লাগার কথা নয়। এটা সরকারের পরিকল্পনার ভুলে হচ্ছে। যাই হোক, প্রাথমিক স্কুলগুলিকে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য টাকা দেওয়ার উদ্যোগ ভাল কিন্তু মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলি কী অপরাধ করল?”
স্কুল শিক্ষা দফতরের কমিশনারের তরফ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে যে, প্রাথমিক স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে শিক্ষা দফতর। এই পর্যায়ে প্রত্যেকটি ব্লক এবং মিউনিসিপ্যালিটিতে কমপক্ষে দশটি প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি যুক্ত করা হবে। পাশাপাশি যে সমস্ত স্কুলে পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজন, সে খাতেও আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে। তার জন্য নির্দিষ্ট সরকারি গাইডলাইন মেনে স্কুলগুলিকে দ্রুত তথ্য জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্কুলের প্রধানশিক্ষকরা। পার্ক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, “বেশ কিছু স্কুলে ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণির সংযুক্তিকরণের কাজ। অবশিষ্ট স্কুলগুলিতে একসঙ্গে সংযুক্তির কাজ হলে অনেকটাই সুবিধা হবে। সরকার যাতে এই কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে, আমরা তাই চাই।”