প্রতীকী চিত্র।
শহর এবং শহরতলির নামী কলেজগুলিতে পছন্দের বিষয়ে আবেদন ঘিরে পড়ুয়াদের উৎসাহ তুঙ্গে। যার জেরে প্রথম রাউন্ডের মেধাতালিকায় নাম নথিভুক্ত করেও আসন বরাদ্দ হল না ১ লক্ষের বেশি শিক্ষার্থীর। আবেদন করেও নাম রয়ে গিয়েছে ওয়েটিং লিস্টে।
৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত আবেদনকারীর মোট সংখ্যা ছিল ৫ লক্ষ ২৭ হাজার ৭৮১ জন। ১২ জুলাই কেন্দ্রীয় অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে প্রথম দফায় যে আসন তালিকা প্রকাশ করা হয়, তাতে ৪ লক্ষ ২২ হাজার ২৪৫ জন পড়ুয়ার নাম রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন, বাদ বাকি পড়ুয়ার নাম তালিকায় থাকলেও তাদের নাম কেন ওয়েটিং লিস্টে রাখা হল?
আবেদনের সংখ্যার ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে শহর এবং শহরতলির ৫০টি বড় কলেজ ঘিরে ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। কলেজের সুবিধাজনক অবস্থান এবং পড়াশোনার মান, এই দুইয়ের নিরিখে আবেদন জমা পড়েছে। শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ কলকাতার আশুতোষ কলেজ। মোট আবেদন জমা পড়েছে ৫৪ হাজার ৬১৪ জনের। আসন ৩ হাজার ৩৮০। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মালদহ কলেজ। মোট আবেদন জমা পড়েছে ৪৮ হাজার ৬৬৪ জনের। আসন সংখ্যা ২ হাজার ৯৮০। তৃতীয় স্থানে রয়েছে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ। সেখানে মোট আবেদন জমা পড়েছে ৪৭ হাজার ৩৭১ জন। আসন সংখ্যা ৩ হাজার ৫২।
এই তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে সিটি কলেজ। এই কলেজে মোট আবেদন জমা পড়েছে ৩৫ হাজার ৩৪১। আসন সংখ্যা ২ হাজার ২৮। তালিকায় দশম স্থানে রয়েছে আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস কলেজ। মোট আবেদন জমা পড়েছে ২৯ হাজার ১৯০ জনের। আসন রয়েছে ৩ হাজার ১৪৬। এ ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে মৌলানা আজাদ কলেজ এবং বিদ্যাসাগর কলেজ- যেগুলি কলকাতার অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।
উচ্চশিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানান, ১ লক্ষের বেশি পড়ুয়ার নাম ওয়েটিং লিস্টে যাওয়ার কারণ জেলাভিত্তিক ভাল কলেজগুলিতে পড়ুয়ারা নাম নথিভুক্ত করেছে। ক্রমানুসারে, প্রথম দিকে যারা নাম নথিভুক্ত করেছিল, তারাই প্রথম দফার মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় অনুযায়ী দেখলে, প্রথম তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আবেদনের নিরিখে শীর্ষে রয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। মোট আবেদন জমা পড়েছে ৯ লক্ষ ৫২ হাজার ৭৮২। অধীনস্থ কলেজগুলিতে আসন রয়েছে মোট ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৭৫। পাঠ্যক্রম পড়ানো হয় ১ হাজার ৬১৬টি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়। মোট আবেদন জমা পড়েছে ৪ লক্ষ ৮২ হাজার ২০৩। অধীনস্থ কলেজে আসন সংখ্যা রয়েছে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৪৮। পাঠ্যক্রম পড়ানো হয় ৬০৩টি। তৃতীয় স্থানে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। মোট আবেদন জমা পড়েছে ৪ লক্ষ ৭২ হাজার ৬৫৩। আসন রয়েছে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৬৫৯। পাঠ্যক্রম পড়ানো হয় ১ হাজার ৫৯৩টি।
শুক্রবার প্রথম দফার ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে অনলাইনে। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, প্রথম দফায় ভর্তির সুযোগ না পেলেও ওয়েটিং লিস্টে থাকা পড়ুয়ারা আরও তিন বার সুযোগ পাবে। প্রথম দফার আসন ‘আপগ্রেড’ হবে ২৩ জুলাই এবং ভর্তি চলবে ২২ জুলাই পর্যন্ত। ‘মপআপ রাউন্ড’-এর মাধ্যমে ৮ থেকে ১৭ অগস্ট নতুন করে আবেদন করা যাবে। ২৭ থেকে ৩০ অগস্ট ‘মপআপ রাউন্ড’-এ আবার ‘সিট আপগ্রেড’ হবে, তখন ওয়েটিং লিস্টে থাকা পড়ুয়াদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
উচ্চশিক্ষা দফতরের খবর অনুযায়ী, প্রতিটি পড়ুয়ার সর্বোচ্চ ২৫টি আবেদনের সুযোগ ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, নির্দিষ্ট কলেজ ভিত্তিক বেশ কিছু বিষয়ে বহু পড়ুয়া আবেদন করেছে। তার মধ্যে রয়েছে ইংরেজি, বাণিজ্য, প্রাণীবিদ্যা, মাইক্রোবায়োলজি। তাই এই সমস্ত বিষয়ে আবেদনকারীরা নাম নথিভুক্ত করার পরেও আসন পায়নি। প্রসঙ্গত, ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৬১টি কলেজে স্নাতক স্তরে ৭ হাজার ২১৭ কোর্সে ৯ লক্ষ ৪৬ হাজার ৯২১ আসন রয়েছে।
আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস কলেজের অধ্যক্ষ পূর্ণচন্দ্র মাইতির কথায়, “এ বছর নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় দু’মাস পর ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফলে কমপক্ষে ৪৫ শতাংশ আসন ফাঁকা থাকবে এবং বহু পড়ুয়া প্রাইভেট কলেজ বা অন্যান্য পেশাদারী কোর্সে ইতিমধ্যেই ভর্তি হয়ে গিয়েছে।”
বহু কলেজের অধ্যক্ষদের বক্তব্য, এ বছর কলেজগুলির সুনাম অনুযায়ী পড়ুয়ারা বিষয় ভিত্তিক নাম নথিভুক্ত করেছে। সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল কর বলেন, “পড়ুয়াদের আবেদন নির্ভর করে কত পুরনো কলেজ এবং তার সুনামের উপরে। সর্বোপরি কোন জায়গায় কলেজটি অবস্থিত, তার উপরে। বিষয় এবং শিক্ষকের ভূমিকাও পড়ুয়াদের কলেজ নির্বাচনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।”