কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট হলে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীরা। নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে অনুবাদ নিয়ে পাঁচ দিনের একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক ভারতীয় ভাষা এবং সাহিত্য বিভাগ (কম্পারেটিভ ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড লিটারেচার ডিপার্টমেন্ট)-এর তরফে ১৯ ডিসেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর, মোট পাঁচ দিনের জন্য এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের রুশা ২.০ (রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান)-র উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্নাতক, গবেষক, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অন্যান্য পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। প্রশিক্ষণের পঞ্চম দিন, অর্থাৎ ২৩ ডিসেম্বর গণমাধ্যম, প্রকাশনা সংস্থায় অনুবাদের কৌশল, নিয়মাবলি সম্পর্কে বিশেষ পাঠদান করা হয়।
এই বিশেষ কর্মসূচিতে দেশের ১৩ টি রাজ্য থেকে ১৫০ জনের বেশি অংশগ্রহণকারী যোগদান করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসাবে অংশগ্রহণকারীদের ক্লাস করান উর্বশী বুটালিয়া, চিন্ময় গুহ, মায়া পন্ডিত, সংযুক্তা দাশগুপ্ত, নির্মলকান্তি ভট্টাচার্য, নবীন কিশোর, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, অভিজিৎ গুপ্ত-র মতো অনুবাদক ও প্রকাশকরা। অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে তাঁরা সাহিত্যিক অনুবাদ, অনুবাদ সম্পাদনা, চলচ্চিত্র এবং অনুবাদ-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে নেন।
তুলনামূলক ভারতীয় ভাষা এবং সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও এই বিশেষ কর্মসূচির আহ্বায়ক মৃন্ময় প্রামাণিক জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের ভাষার অস্তিত্বের কারণে অনুবাদের চাহিদা থাকলেও সেই তুলনায় অনুবাদকের সংখ্যা কম। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুবাদ চর্চাকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে সেই সমস্যা দূর হতে পারে। পাশাপাশি, এতে বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতিচর্চার পথও সুগম হবে। তিনি আরও বলেন, “কেন্দ্রের তরফে স্থানীয় ভাষাগুলিকেও চর্চার আওতায় নিয়ে আসার বিষয়টি জাতীয় শিক্ষানীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর জন্য যৌথ উদ্যোগে অনুবাদ প্রকল্পের প্রসার ঘটানো প্রয়োজন।”
এই পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা অনুবাদ সংক্রান্ত বিবিধ বিষয় নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পাশাপাশি, কর্মশালার মাধ্যমে হাতেকলমে বিষয়টিকে শেখানো হয়। প্রশিক্ষণ চলাকালীন ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সংবাদমাধ্যমের মতো ক্ষেত্রে ভুল অনুবাদ (মিসট্রান্সলেশন) করার ক্ষেত্রে কী কী বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন, তা নিয়েও আলোচনা করা হয়।
একই সঙ্গে বর্তমানে গণমাধ্যম এবং প্রকাশনায় ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদের ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তা নিয়ে পঞ্চম দিনের অনুষ্ঠানে আলোচনা করা হয়। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বে দৈনন্দিন জীবনে ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভুল অনুবাদের বিষয়টি কী ভাবে সমস্যা সৃষ্টি করছে, সেই সম্পর্কেও অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ পান। পঞ্চম দিনের কর্মসূচির শেষে অংশগ্রহণকারীদের হাতে শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়।